মুসলিম উম্মার জন্য ঈদুল আজহা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ঈদে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোরবানির করতে হয়। কোরবানি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। পবিত্র কোরআন-হাদিসে কোরবানির গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়েছে।
এই দিনটিতে সামর্থ্যবান মুসলমানরা আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি লাভের জন্য পশু কোরবানি করেন। রাসুল (সা.) হিজরতের পর প্রতি বছর কোরবানি করেছেন।
আল্লাহতায়ালা সুরা হজের ৩৪ নম্বর আয়াতে বলেছেন, আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য কোরবানি নির্ধারণ করেছি, যাতে তারা আল্লাহর দেওয়া চতুষ্পদ জন্তু জবেহ কারার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে।
অতএব, তোমাদের আল্লাহ তো একমাত্র আল্লাহ সুতরাং তারই আজ্ঞাধীন থাকো এবং বিনয়ীদের সুসংবাদ দাও।
কোরবানি কবুল হওয়ার ক্ষেত্রে নিয়ত বিশুদ্ধ হওয়া জরুরি। সূরা হজের ৩৯ নম্বর আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, কোরবানির গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না বরং কোরবানির মধ্য দিয়ে তোমাদের তাকওয়া-পরহেজগারি বা আল্লাহভীতিই তার কাছে পৌঁছে।
এমনিভাবে তিনি এগুলোকে তোমাদের বশ করে দিয়েছেন- যাতে তোমরা আল্লাহর মহত্ব ঘোষণা করো। এ কারণে, তিনি তোমাদের পথ প্রদর্শন করেছেন। সুতরাং সৎকর্মশীলদের সুসংবাদ শুনিয়ে দাও।
মুসলিম সমাজে কোরবানিতে অন্যকে শরিক করার প্রচলন রয়েছে। এটা ইসলামি শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ। তবে কাউকে শরিক করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিষয় লক্ষণীয়।
এর একটি হলো হলো- উট, গরু, মহিষ সাত ভাগে এবং সাতের কমে যে কোনো সংখ্যা যেমন দুই, তিন, চার, পাঁচ ও ছয় ভাগে কোরবানি করা জায়েজ। এ ক্ষেত্রে উটের বয়স পাঁচ বছর হতে হবে আর গরু ও মহিষের বয়স দুই বছর হতে হবে। (মুসলিম: ১৩১৮)
এ ছাড়াও কোরবানির পশুতে প্রত্যেকের অংশ সমান হতে হবে। কারও অংশ অন্যের অংশ থেকে কম হতে পারবে না। যেমন কারও আধা ভাগ, কারও দেড় ভাগ। এমন হলে কোনো শরিকের কোরবানি শুদ্ধ হবে না।
কোরবানিতে কাউকে শরিক করার ক্ষেত্রে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি বিষয় হলো অংশীদার নির্বাচন করতে প্রত্যেককে ভালোভাবে জেনে-বুঝে নিতে হবে। কারণ শরিকের কারও নিয়ত গলদ হলে কারও কোরবানিই (অন্য শরিকদের কারও কোরবানি) শুদ্ধ হবে না।
এ বিষয়ে ফতোয়ার কিতাবগুলোতে বলা হয়েছে- যদি কেউ আল্লাহতায়ালার হুকুম পালনের উদ্দেশে কোরবানি না করে শুধু গোস্ত খাওয়ার নিয়তে কোরবানি করে তাহলে তার কোরবানি সহিহ হবে না। তাকে অংশীদার বানালে শরিকদের কারো কোরবানি হবে না। তাই অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে শরিক নির্বাচন করতে হবে। (বাদায়েউস সানায়ে: ৪/২০৮, কাজিখান: ৩/৩৪৯)
আরেকটি বিষয় হলো- হারাম টাকা দিয়ে কেউ কোরবানি করলে তার কোরবানি আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। কেন না আল্লাহতায়ালা পবিত্র; শুধু পবিত্রটাই তিনি গ্রহণ করেন...। (তিরমিজি: ২৯৮৯)
পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারার ২৬৭ নম্বর আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَنۡفِقُوۡا مِنۡ طَیِّبٰتِ مَا کَسَبۡتُمۡ وَ مِمَّاۤ اَخۡرَجۡنَا لَکُمۡ مِّنَ الۡاَرۡضِ ۪ وَ لَا تَیَمَّمُوا الۡخَبِیۡثَ مِنۡهُ تُنۡفِقُوۡنَ وَ لَسۡتُمۡ بِاٰخِذِیۡهِ اِلَّاۤ اَنۡ تُغۡمِضُوۡا فِیۡهِ ؕ وَ اعۡلَمُوۡۤا اَنَّ اللّٰهَ غَنِیٌّ حَمِیۡدٌ ﴿۲۶۷
অর্থ- হে মুমিনগণ! তোমাদের উপার্জিত উত্তম সম্পদ থেকে এবং তোমাদের জন্য ভূমি থেকে যা উৎপন্ন করেছি তা থেকে ব্যয় কর এবং নিকৃষ্ট বস্তু ব্যয় করার নিয়ত করো না, বস্তুত- তোমরা তা গ্রহণ করো না, যদি না তোমাদের চক্ষু বন্ধ থাকে। আর জেনে রেখ, আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, প্রশংসিত।
মন্তব্য করুন