বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্লাটফর্ম ফেসবুক থেকে প্রায় ১ কোটি অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলা হয়েছে। ফেসবুকের মালিকানা প্রতিষ্ঠান মেটা জানিয়েছে, স্প্যাম ও ভুয়া অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আগামী দিনে আরও অ্যাকাউন্ট ডিলিট করা হবে বলেও ঘোষণা দিয়েছে তারা।
প্রতিষ্ঠানটি ১৪ জুলাই এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা প্রথম ধাপে প্রায় ৫ লাখ অ্যাকাউন্টকে শনাক্ত করে ব্যবস্থা নিয়েছে, যেগুলো স্প্যাম ছড়ানো, ভুয়া এনগেজমেন্ট বা প্রতারণামূলক আচরণের সঙ্গে যুক্ত ছিল। এসব অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রে ফেসবুক কমেন্ট হ্রাস, কনটেন্টের বিস্তার সীমিত করা এবং মনেটাইজেশন বন্ধ করার মতো কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
এছাড়াও, প্রতিষ্ঠানটি জানায়, প্রায় ১ কোটি প্রোফাইল মুছে ফেলা হয়েছে যারা বিভিন্ন বিখ্যাত কনটেন্ট নির্মাতাদের ছদ্মবেশ ধারণ করেছিল। অর্থাৎ, ভুয়া পরিচয়ে বিভিন্ন জনপ্রিয় নির্মাতার নামে কনটেন্ট শেয়ার করছিল।
ফেসবুক আরও জানায়, তারা এমন অ্যাকাউন্টগুলোর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেবে, যেগুলো একাধিকবার একই ধরনের মিম বা ভিডিও বারবার পোস্ট করে, কিংবা ভুয়া প্রোফাইল তৈরি করে আসল নির্মাতদের ছদ্মবেশে হাজির হয়।
কনটেন্টে মৌলিকতার ওপর জোর
ফেসবুক জানিয়েছে, তারা নতুন করে অ্যালগরিদম আপডেট করছে, যাতে অরিজিনাল কনটেন্ট শেয়ারকারীরা অগ্রাধিকার পায়। তারা বলছে, ‘আপনার নিউজ ফিডকে উন্নত করতে এবং মূল কনটেন্টের মূল্যায়ন বাড়াতে আমরা আরও জোরালো পদক্ষেপ নিচ্ছি।’
ফেসবুক ব্যবহারকারীদের সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়েছে, যারা নিজস্ব তৈরি কনটেন্ট নয়, বরং অন্য সোর্স থেকে নেয়া ভিডিও বা পোস্ট শেয়ার করেন, তাদের অ্যাকাউন্টে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
ফেসবুকের পরামর্শ
কনটেন্ট শেয়ার করার ক্ষেত্রে ফেসবুক তার ব্যবহারকারীদের বেশকিছু পরামর্শ দিচ্ছে। এরমধ্যে রয়েছে- দৃশ্যমান তৃতীয় পক্ষের ওয়াটারমার্ক থাকলে তা ব্যবহার না করা, পুনর্ব্যবহৃত কনটেন্ট এড়িয়ে চলা, উচ্চমানের ক্যাপশন ব্যবহার করা এবং খুবই ছোট ও অপ্রাসঙ্গিক ভিডিও না পোস্ট করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে নজরদারি
ফেসবুক জানিয়েছে, নজরদারির ক্ষেত্রে তারা এখন আরও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করছে, যা ডুপ্লিকেট কনটেন্ট সহজে শনাক্ত করতে পারে এবং সেই অনুযায়ী কনটেন্টের বিস্তার রোধ করে।
ফেসবুক আরও জানিয়েছে, তারা মূল কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের যথাযথ স্বীকৃতি দিতে চায়। এজন্য একটি পরীক্ষামূলক ফিচার চালু হচ্ছে, যেখানে ডুপ্লিকেট ভিডিওর পাশে মূল ভিডিওর লিংক যোগ করা হবে, যাতে দর্শকরা সহজে আসল কনটেন্টে পৌঁছাতে পারেন।
সব মিলিয়ে ফেসবুক এখন বড় ধরনের পরিবর্তনের পথে হাঁটছে—ভুয়া অ্যাকাউন্ট দমন, মৌলিক কনটেন্টের স্বীকৃতি, কনটেন্ট মান বজায় রাখা এবং এআই ভিত্তিক প্রযুক্তিতে বিপুল বিনিয়োগ এসব কিছুই দেখাচ্ছে যে, ভবিষ্যতের ফেসবুক হতে চলেছে আগের চেয়ে অনেক বেশি কাঠামোবদ্ধ ও নীতিনির্ভর।
সূত্র: ফোর্বস
মন্তব্য করুন