হ্যান্ডশেক বিতর্কে এশিয়া কাপ থেকে পাকিস্তানের সরে দাঁড়ানোর হুমকি এখন তাদের ক্রিকেট বোর্ডকেই (পিসিবি) বেকায়দায় ফেলেছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) অ্যান্ডি পাইক্রফটকে ম্যাচ রেফারির দায়িত্ব থেকে সরানোর দাবি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করার পর এখন নতুন প্রশ্ন— আসলেই কি টুর্নামেন্ট থেকে বাদ পড়ার মতো অবস্থায় আছে পাকিস্তান?
কারণ, পিসিবি যদি সত্যিই এশিয়া কাপ থেকে সরে দাঁড়ায়, তবে তাদের গচ্চা যাবে ১২ থেকে ১৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, অর্থাৎ বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৫০ কোটি টাকা। এই অর্থ আসত এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) রাজস্ব ভাগাভাগি থেকে— যেখানে পাঁচ টেস্ট খেলুড়ে দেশ ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান সমান ১৫ শতাংশ করে পায়।
এশিয়া কাপের সম্প্রচার চুক্তি, স্পন্সরশিপ ও টিকিট বিক্রির আয় থেকেই মূল রাজস্ব আসে। তাই ভারতের সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচই টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বড় ‘রাজস্ব জেনারেটর’। পাকিস্তান সরে দাঁড়ালে শুধু অর্থ হারানোই নয়, এসিসি বোর্ডরুমেও তাদের বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে চাপ বাড়ছে পিসিবি চেয়ারম্যান মহসিন নকভির ওপর। কারণ, তিনি শুধু ক্রিকেট বোর্ডের প্রধানই নন, পাকিস্তান সরকারের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী এবং একই সঙ্গে এসিসিরও সভাপতি। অর্থাৎ সিদ্ধান্ত যেটাই নেন, সেটি সরাসরি প্রভাব ফেলবে তার ব্যক্তিগত ভাবমূর্তির ওপরও।
পাকিস্তানি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, নাকভি এখন ‘পাতলা বরফের ওপর হাঁটার মতো অবস্থায়’। কারণ, পিসিবির জন্য এই ১৫০ কোটি টাকার ক্ষতি বিশাল ধাক্কা হয়ে আসতে পারে।
ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল রোববারের ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে। খেলা শেষে দুই দলের ক্রিকেটাররা হাত মেলাননি, এমনকি টসেও করমর্দন হয়নি। পাকিস্তানের অভিযোগ, ম্যাচ রেফারি পাইক্রফটই নাকি দুই অধিনায়ককে টসে করমর্দন থেকে বিরত থাকতে বলেছিলেন। আইসিসি অবশ্য এ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে।
তবে পিসিবির কড়া অবস্থান এখনো বহাল। নাকভি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘পিসিবি আনুষ্ঠানিকভাবে আইসিসির কাছে অভিযোগ জানিয়েছে। পাইক্রফট ক্রিকেটের চেতনাবিরোধী আচরণ করেছেন। আমরা তার তাৎক্ষণিক অপসারণ দাবি করছি।’
তবে বাস্তবতা হলো— পিসিবি যদি দাবি আদায়ে ব্যর্থ হয়েও এশিয়া কাপ ছেড়ে দেয়, তবে তারা হারাবে বিপুল অর্থ, সম্প্রচারক থেকে শুরু করে স্পন্সরদের ক্ষোভ, আর সবচেয়ে বড় কথা— ক্রিকেট রাজনীতিতেও তাদের অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়বে।
সংক্ষেপে বললে, পাকিস্তানের সামনে এখন কঠিন সমীকরণ : সম্মান রক্ষা নাকি আর্থিক ক্ষতি ঠেকানো— কোনোটাই সহজ নয়।
মন্তব্য করুন