এশিয়া কাপে পাকিস্তানকে রেকর্ড ব্যবধানে হারানোর পর শ্রীলঙ্কাকেও ৪১ রানে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করেছে ভারত। ভারতের দেওয়া সহজ ২১৪ রানের লক্ষ্য কুলদীপ যাদবের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা অলআউট হয় ১৭২ রানে।
আর ৪১ রানের জয়ে ভারত ফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলেছে। তাতে বাংলাদেশের নিশ্চিত হয়েছে বিদায়। সুপার ফোরের বাকি দুই ম্যাচের ফল যাই-ই হোক না কেন, তাতে টাইগারদের ফাইনাল আর খেলা হবে না। আর রানরেটে বড় ব্যবধানে এগিয়ে থাকার সুবাদে ফাইনাল নিশ্চিত করেছে ম্যান ইন ব্লুরা। শুক্রবারের নিয়মরক্ষার ম্যাচে মুখোমুখি হবে এই দুই দল।
কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে ২১৪ রান তাড়া করতে নেমে শ্রীলঙ্কা শুরুটা ছিল নার্ভাস। পুরো টুর্নামেন্টে ব্যাট হাতে সুবিধা না করা লঙ্কানরা এই ম্যাচেও অব্যাহত রেখেছে সেই ধারা। ম্যাচের শুরুতেই ভারতীয় পেসার মোহাম্মদ সিরাজ আর জাসপ্রীত বুমরাহর দুর্দান্ত বোলিংয়ে রান তুলতে হিমশিম খেয়েছেন স্বাগতিকদের টপঅর্ডার ব্যাটাররা।
পাওয়ার প্লে শেষের আগেই সাজঘরে ফেরেন শ্রীলঙ্কার প্রথম তিন ব্যাটার। দলীয় সাত রানে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন পাথুম নিশাঙ্কা। ২৫ রানে জোড়া আঘাতে ফিরে যাব কুশল মেন্ডিস এবং দিমুথ কারুনারাত্নে। উইকেট ভাগাভাগি করেছেন বুমরাহ এবং সিরাজ।
বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচসেরা হওয়া সাদিরা সামারাবিক্রমা ফিরেছেন দ্রুতই। কুলদীপ যাদবের প্রথম শিকার ছিলেন তিনি। খানিক বাদে আবারও কুলদীপের আঘাত। এবার ফিরেছেন চারিথ আসালাঙ্কা।
উইকেটে এসে থিতু হতে পারেননি অধিনায়ক দাশুন শানাকাও। রবীন্দ্র জাদেজার বলে রোহিত শর্মাকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। স্কোরবোর্ডে ১০০ রান ওঠার আগেই শ্রীলঙ্কা হারায় নিজেদের ছয় উইকেট।
এরপর ক্রিজে আসেন ভারতকে স্বল্প রানে আটকানোর নায়ক ওয়াল্লাগে। ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে নিয়ে তার জুটি কিছুটা হলেও স্বপ্ন দেখাচ্ছিল লঙ্কানদের। দুজন মিলে জুটি গড়েন ৬৩ রানের। ১৬২ রানে থামে সেই জুটি। জাদেজার বলে থামে ধনাঞ্জয়ার ৬৬ বলে ৪১ রানের সংগ্রামী ইনিংস।
শ্রীলঙ্কা এরপর গুটিয়ে যায় দ্রুত। লঙ্কান শেষ চার ব্যাটার আউট হয় ১০ রানে। ১৭২ রানে মাহিশা পাথিরানা আউট হলে নিশ্চিত হয় ভারতের ফাইনাল। এ ম্যাচে ভারতের পক্ষে ৪৩ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন কুলদীপ। দুটি করে উইকেট পেয়েছেন জাসপ্রিত বুমরাহ ও রবিন্দ্র জাদেজা। মোহাম্মদ সিরাজ ও হার্দিক পান্ডিয়া পেয়েছেন একটি করে উইকেট।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে এসে লঙ্কান স্পিনে পতন হয় ভারতের। তবে টস জিতে ভারতের শুরুটা ছিল ভালো। ১১ ওভার শেষে তাদের সংগ্রহ ছিল কোনো উইকেট না হারিয়ে ৮০ রান। বলা যায়, উড়ছিলেন দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও শুভমান গিল। আশা ছিল আরেকটি ৩০০ এর বেশি স্কোরের কারণ তখনও বোলিংয়ে আসেননি দুনিথ ওয়াল্লাগে! তিনি বোলিংয়ে এসেই গিল-রোহিতদের মাটিতে নামিয়ে আনেন। দুই ওপেনারকে ফেরানোর মাঝে বিরাট কোহলিকে দাঁড়াতেই দেননি এই স্পিনার।
শুরুটা শুভমান গিলকে দিয়ে। ১২তম ওভারের প্রথম বলটি মিডল স্টাম্পের ওপর রেখেছিলেন ওয়াল্লাগে । সেখানে মিড-অনে খেলতে গিয়ে বলের লাইন মিস করেন এই ওপেনার। ব্যাটের নিচের দিকের কানায় লেগে বল আঘাত হানে অফ স্টাম্পে। সাজঘরে ফেরার আগে গিলের ব্যাট থেকে এসেছে ১৯ রান।
নিজের পরের ওভারে কোহলিকে ফিরিয়েছেন ওয়াল্লাগে। খানিকটা খাটো লেন্থের বল লেগের দিকে ঘুরিয়ে দৌড় দিতে চেয়েছিলেন কোহলি, কিন্তু বল চলে যায় শর্ট মিড উইকেটে দাঁড়িয়ে থাকা ফিল্ডারের হাতে। এই মাঠে চারটি ওয়ানডে সেঞ্চুরি করা কোহলি এদিন ৪ রানও করতে পারেননি।
নিজের প্রথম দুই ওভারে গিল-কোহলিকে ফেরানোর পর তৃতীয় ওভারেও উইকেটের দেখা পান ভেল্লালেগে। এবার তার শিকার রোহিত। ১৬তম ওভারের প্রথম বলটি স্টাম্পের ওপর রেখেছিলেন। গুড লেন্থের এই বল যতটা উচ্চতায় আসার কথা তার থেকে অনেক নিচু হয়েছে, সেটাতেই বোকা বনেছেন রোহিত। বোল্ড হওয়ার আগে ভারত অধিনায়ক তার নামের পাশে যোগ করেছেন ৫৩ রান।
তিন অঙ্ক ছোঁয়ার আগেই তিন উইকেট হারানো ভারতকে টেনে তুলেন লোকেশ রাহুল-ইশান কিষাণ জুটি। কিন্তু রাহুলকে ৩৯ রানে থামিয়ে ৬৩ রানের চতুর্থ উইকেট জুটিও ভাঙেন ভেল্লালেগে। সঙ্গীকে হারিয়ে বেশিক্ষণ উইকেটে টিকতে পারেননি ইশানও। তার ব্যাট থেকে এসেছে ৩৩ রান।
এর পরের গল্পটা শুধুই লঙ্কান স্পিনারদের। ১৬ রানের ব্যবধানে পরের ৪ ব্যাটারকে সাজঘরে ফেরান ওয়াল্লাগে -আসালঙ্কা জুটি। শেষদিকে অক্ষর প্যাটেল কিছুটা প্রতিরোধ গড়লেও দলকে অলআউটের শঙ্কা থেকে বাঁচাতে পারেননি। ২৬ রান করা এই ব্যাটারকে সাজঘরে ফিরিয়ে ভারতের কফিনে শেষ পেরেকটা মারেন মাহিশ থিকশানা।
মন্তব্য করুন