

মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে বক্সিং ডে টেস্টের প্রথম দিনটা রীতিমতো রোমাঞ্চ আর নাটকে ভরা। পিচে গত বছরের চেয়ে মাত্র চার মিলিমিটার বেশি ঘাস থাকলেও সেটাই যথেষ্ট ছিল ব্যাটসম্যানদের জন্য ভয়ংকর হয়ে উঠতে। দিনের খেলায় পড়েছে মোট ২০টি উইকেট—অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে কোনো টেস্টের প্রথম দিনে যা যৌথভাবে তৃতীয় সর্বোচ্চ। সবকিছুই ঘটেছে ৯৪,১৯৯ দর্শকের রেকর্ড ভিড়ের সামনে।
টস জিতে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক বেন স্টোকস প্রথমে ব্যাট করতে পাঠান অস্ট্রেলিয়াকে। সবুজ পিচে ইংলিশ পেসাররা শুরু থেকেই ফুল লেংথে আঘাত হানেন। ট্রাভিস হেড দ্রুত বিদায় নেন, এরপর জশ টাংয়ের আগমনে ম্যাচের মোড় ঘুরে যায়। মার্নাস লাবুশেন ও স্টিভ স্মিথ দুজনেই বলের নড়াচড়ে পরাস্ত হন। মাত্র ৫১ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে বসে স্বাগতিকরা।
উসমান খাজা ও অ্যালেক্স ক্যারি কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে মধ্যাহ্ন বিরতিতে দলকে ৭২/৪-এ নেন। কিন্তু বিরতির পরপরই খাজা আউট হলে আবারও ধস নামে। ক্যারিও পরিকল্পিত ফাঁদে পড়ে ফিরে যান। ৯১/৬ অবস্থায় অস্ট্রেলিয়া বড় বিপদে পড়লেও মাইকেল নেসার ও ক্যামেরন গ্রিন জুটি গড়ে দলকে কিছুটা স্বস্তি দেন। নেসারের ৩৫ রান অস্ট্রেলিয়াকে দেড়শ পার করাতে সাহায্য করে। শেষ পর্যন্ত ৪৬ ওভারে ১৫২ রানে অলআউট হয় অস্ট্রেলিয়া। ইংল্যান্ডের হয়ে জশ টাং নেন পাঁচ উইকেট।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে ইংল্যান্ডের অবস্থা আরও শোচনীয়। শুরুতেই বেন ডাকেট ও জ্যাক ক্রলির বিদায়ে চাপে পড়ে সফরকারীরা। মাইকেল নেসার নিজের প্রথম লাল বলের টেস্টেই ঝলক দেখান—জো রুটকে শূন্য রানে ফেরান, যা রুটের টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৫তম ডাক। স্টিভ স্মিথ এই ক্যাচে পৌঁছে যান টেস্টে সর্বোচ্চ ক্যাচ নেওয়ার তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে।
হ্যারি ব্রুক কিছুটা আগ্রাসী ৪১ রান করলেও অন্য প্রান্তে উইকেট পড়তেই থাকে। স্কট বোল্যান্ড এমসিজিতে নিজের চেনা ভেন্যুতে আবারও ভয়ংকর হয়ে ওঠেন। শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ড গুটিয়ে যায় মাত্র ১১০ রানে, ৩০ ওভারেরও কম সময়ে। নেসার নেন চার উইকেট, বোল্যান্ড তিনটি।
দিনের শেষটা ছিল নাটকীয়। অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে ট্রাভিস হেড ও স্কট বোল্যান্ডকে ওপেনিংয়ে পাঠিয়ে। বোল্যান্ড পুরো একটি ওভার নির্বিঘ্নে সামলালে উল্লাসে ফেটে পড়ে এমসিজি। প্রথম দিনের শেষে অস্ট্রেলিয়া ৪৬ রানের লিড নিয়ে ৪/০ অবস্থায়।
উইকেটের এমন আচরণে দ্বিতীয় দিনেও বোলারদের দাপট অব্যাহত থাকবে বলেই ধারণা। তবে অস্ট্রেলিয়া শিবির আশা করছে, পরের দিনে ব্যাটিং একটু সহজ হবে। এক দিনের মধ্যেই স্পষ্ট—এই টেস্টে কিছুই সহজ হতে যাচ্ছে না।
মন্তব্য করুন