শেষ বাঁশির আগ মুহূর্তে গোল হজম করে শেষ হয়ে গেল বাংলাদেশের লড়াই। অতিরিক্ত সময়ের নবম মিনিটে হংকংয়ের করা চতুর্থ গোলের সঙ্গে সঙ্গেই রেফারির বাঁশি—আর সেই বাঁশিই যেন বাংলাদেশের এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের আশার সমাপ্তির ঘণ্টাধ্বনি।
হতে পারত এক অনুপ্রেরণার গল্প। হতে পারত বাংলাদেশের ফুটবলে নতুন এক অধ্যায়—যেখানে হামজা চৌধুরীর নিখুঁত ফ্রি কিক আর তরুণ সামিত সোমের মাথা থেকে আসা গোল জয়ের সাক্ষী হবে ঢাকার ন্যাশনাল ফুটবল স্টেডিয়াম। কিন্তু সেই গল্প লেখা হলো না। শেষ বাঁশি বাজার মুহূর্তে এক অমনোযোগ, এক ভুল সিদ্ধান্তে ভেসে গেল সবকিছু। হংকংয়ের কাছে ৩-৪ গোলে হেরে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের তৃতীয় ম্যাচ শেষ করল বাংলাদেশ। আর এই ম্যাচের হার কার্যত শেষ করে দিয়েছে বাংলাদেশের আশা।
বৃহস্পতিবার রাতের ম্যাচে শুরুটা ছিল আশাব্যঞ্জক। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলার অভিজ্ঞতা থাকা মিডফিল্ডার হামজা চৌধুরী ১৩তম মিনিটে দারুণ এক ফ্রি কিকে এগিয়ে দেন বাংলাদেশকে। তার বাঁকানো শট প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারের মাথা ছুঁয়ে জালে জড়ালে গ্যালারিতে ছড়িয়ে পড়ে উল্লাস। প্রথমার্ধে হংকংকে তেমন সুযোগও দেয়নি বাংলাদেশ—বরং ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ ছিল লাল-সবুজদেরই।
কিন্তু প্রথমার্ধের যোগ করা সময়েই আসে বিপর্যয়। কর্নার থেকে নেওয়া বল ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হয় রক্ষণভাগ, সেই সুযোগে হংকং ম্যাচে সমতা ফেরায় (১-১)।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই আরও বড় ধাক্কা—রাফায়েল মার্কেইসের গোলে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায় অতিথিরা। ম্যাচের ৭৫ মিনিটে একই ফুটবলার নিজের দ্বিতীয় গোল পূর্ণ করে ব্যবধান বাড়ান ৩-১ এ। তখন মনে হচ্ছিল, আরেকটি পরাজয়ের গ্লানি নিয়েই মাঠ ছাড়বে বাংলাদেশ।
কিন্তু বদলি হিসেবে নামা জামাল ভূঁইয়া ও সামিত সোম যেন ম্যাচে নতুন রক্ত ঢেলে দেন। জামালের নিখুঁত পাস থেকে ৮৪ মিনিটে গোল করে ব্যবধান কমান শেখ মোরছালিন (২–৩)। এরপর যোগ করা সময়ের ৯৮তম মিনিটে সামিত সোমের অসাধারণ হেডে স্কোরলাইন দাঁড়ায় ৩-৩— এটাই তার জাতীয় দলের প্রথম গোল। উল্লাসে তখন পুরো স্টেডিয়াম এক ঢেউ।
কিন্তু ভাগ্য যেন নিষ্ঠুরভাবে মুখ ফিরিয়ে নিল শেষ মুহূর্তে। ৯৯তম মিনিটে হংকংয়ের আক্রমণ ঠেকাতে গিয়ে ভুল ব্যাকপাস দেন বাংলাদেশের রক্ষণভাগ। গোলরক্ষক মিতুল মার্মা সহজ বলটি সামলাতে ব্যর্থ হন। বল ঢুকে যায় জালে, আর সঙ্গে সঙ্গে রেফারির শেষ বাঁশি।
হতভম্ব হয়ে মাঠে বসে পড়েন হামজা চৌধুরী, শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন স্কোরবোর্ডের দিকে। গ্যালারিতে নেমে আসে নিস্তব্ধতা—যেন এক স্বপ্নভঙ্গের মুহূর্ত।
বাংলাদেশের হার এই ম্যাচে শুধু তিন পয়েন্টের নয়, হার আশার, হার সম্ভাবনার।
মন্তব্য করুন