

ভারতে ফুটবলের অন্যতম বড় তারকা লিওনেল মেসির চার শহরের সফর ঘিরে যখন উচ্ছ্বাস, ভিড় আর তারকাখচিত আয়োজন—ঠিক তখনই ভিন্ন সুর তুললেন ভারতের অন্যতম বড় ক্রীড়া আইকন অভিনব বিন্দ্রা। আর্জেন্টাইন মহাতারকাকে আক্রমণ না করেও তিনি তুলে ধরলেন একটি অস্বস্তিকর কিন্তু জরুরি প্রশ্ন: ভারত কি সত্যিই ক্রীড়া সংস্কৃতি গড়ে তুলছে, নাকি দূর থেকে বিশ্বতারকাদের উদ্যাপন করেই সন্তুষ্ট থাকছে?
কলকাতা, হায়দরাবাদ ও মুম্বাই পেরিয়ে সোমবার নয়াদিল্লিতে শেষ হচ্ছে মেসির ভারত সফর। ভিআইপি সাক্ষাৎ, করপোরেট আয়োজন, রাজনৈতিক ও বলিউড উপস্থিতিতে এই সফর রীতিমতো ‘মেসি-ম্যানিয়া’তে পরিণত হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটেই অলিম্পিক সোনাজয়ী শুটার অভিনব বিন্দ্রা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দীর্ঘ এক পোস্টে নিজের ভাবনার কথা জানান।
বিন্দ্রা স্পষ্ট করে দেন, তার মন্তব্য কোনোভাবেই মেসির বিরুদ্ধে নয়। বরং মেসির সংগ্রাম, সাফল্য আর বৈশ্বিক প্রভাবের প্রতি তিনি গভীর শ্রদ্ধাশীল। আধুনিক ক্রীড়ার অর্থনীতি, ব্র্যান্ডিং আর আইকনদের আকর্ষণ তিনি বোঝেন বলেও উল্লেখ করেন। তবে এই উন্মাদনার মাত্রা তাকে ভাবিয়েছে— দেশের ক্রীড়া অগ্রাধিকারের জায়গাটা ঠিক কোথায়?
তার প্রশ্ন, যে বিপুল অর্থ, শক্তি আর মনোযোগ কয়েক দিনের সফরের পেছনে ব্যয় হচ্ছে, তার সামান্য অংশও যদি মাঠ, কোচিং, কিংবা তৃণমূল ক্রীড়া কাঠামোয় বিনিয়োগ হতো— তাহলে কী বদল আসতে পারত না? বিন্দ্রার ভাষায়, ক্রীড়া সংস্কৃতি গড়ে ওঠে না ঝলমলে মুহূর্তে, গড়ে ওঠে ব্যবস্থায়— ধৈর্যে, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় এবং সাধারণ শিশুর অসাধারণ স্বপ্নে বিশ্বাস রেখে।
তিনি মনে করিয়ে দেন, বড় ক্রীড়া জাতি তৈরি হয় না কেবল অনুপ্রেরণায়। অনুপ্রেরণার সঙ্গে দরকার সুযোগ— খেলার মাঠ, প্রশিক্ষিত কোচ, নিয়মিত প্রতিযোগিতা আর এমন এক পরিবেশ, যেখানে খেলাধুলা উৎসব নয়, দৈনন্দিন অভ্যাস হয়ে ওঠে।
মেসির মতো আইকনরা একটি প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করেন— এটি স্বীকার করেই বিন্দ্রা বলেন, সেই অনুপ্রেরণাকে বাস্তবে রূপ দিতে না পারলে তা ক্ষণস্থায়ী হয়ে যাবে। তার মতে, কিংবদন্তিদের প্রতি প্রকৃত সম্মান দেখানো হয় বড় আয়োজন দিয়ে নয়, বরং এমন ব্যবস্থা তৈরি করে, যেখানে দেশের কোনো এক কোণে একটি শিশু মাঠ পায়, কোচ পায় এবং স্বপ্ন দেখার সুযোগ পায়।
মেসি-উন্মাদনার মাঝেই তাই বিন্দ্রার এই প্রশ্ন কেবল সমালোচনা নয়, বরং ভারতের ক্রীড়া ভবিষ্যৎ নিয়ে এক গভীর আত্মসমালোচনার আহ্বান।
মন্তব্য করুন