

মারা গেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার মৃত্যুতে দেশের রাজনীতির পাশাপাশি ক্রীড়াঙ্গনেও নেমে এসেছে শোকের ছায়া। তার শাসনামলে নেওয়া নীতিগত সিদ্ধান্ত ও অবকাঠামোগত উদ্যোগই আজকের বাংলাদেশের ক্রীড়াসাফল্যের ভিত্তি গড়ে দিয়েছে—বিশেষ করে ক্রিকেট ও ফুটবলে।
খালেদা জিয়ার দ্বিতীয় মেয়াদে (২০০১-২০০৬) বাংলাদেশের ক্রিকেটে আসে এক গুরুত্বপূর্ণ রূপান্তর। এই সময়েই দেশের ক্রিকেটে পেশাদার কাঠামো গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়। তার কনিষ্ঠ পুত্র আরাফাত রহমান কোকো ২০০২ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার নেতৃত্বে তৃণমূল পর্যায়ে প্রতিভা অন্বেষণ, আধুনিক কোচিং কাঠামো এবং আন্তর্জাতিক মানের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।
এই সময়েই বাংলাদেশে অস্ট্রেলীয় হাই-পারফরম্যান্স মডেলের ধারণা আসে। বিদেশি কোচ নিয়োগ ও দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ পরিকল্পনার বীজ বপন হয়, যা পরবর্তী সময়ে সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবালদের মতো বিশ্বমানের ক্রিকেটার তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
অবকাঠামো উন্নয়নেও খালেদা জিয়ার সরকার ছিল সক্রিয়। তার শাসনামলেই ঢাকার মিরপুর স্টেডিয়ামকে ধাপে ধাপে ক্রিকেটের প্রধান ভেন্যুতে রূপান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়, যা পরবর্তী সময় শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম হিসেবে ‘হোম অব ক্রিকেট’-এর মর্যাদা পায়। পাশাপাশি চট্টগ্রাম ও খুলনায় আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম নির্মাণ ও আধুনিকায়নে সরকারি বরাদ্দ বাড়ানো হয়।
আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আয়োজনেও এ সময়টি ছিল উল্লেখযোগ্য। ২০০৪ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয় আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ, যা দেশের ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা বাড়াতে বড় ভূমিকা রাখে। ২০০৫ সালে ঢাকায় সফলভাবে আয়োজন করা হয় সাফ গেমস (বর্তমানে সাউথ এশিয়ান গেমস), যা বাংলাদেশের ক্রীড়া আয়োজনে সক্ষমতার প্রমাণ দেয়।
ফুটবলেও আসে ঐতিহাসিক সাফল্য। ২০০৩ সালে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল প্রথমবারের মতো সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে নেয়, যা দেশের ফুটবল ইতিহাসে এখনো এক অনন্য অর্জন।
রাজনৈতিক জীবনের ব্যস্ততায় খালেদা জিয়া হয়তো সরাসরি মাঠে ছিলেন না; কিন্তু তার আমলে নেওয়া দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও নীতিগত সিদ্ধান্তই বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনকে এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখিয়েছে। আজ তার প্রয়াণে দেশের ক্রীড়াঙ্গন হারাল এক নীরব স্থপতিকে—যার অবদান ইতিহাসের পাতায় গভীরভাবে লেখা থাকবে।
মন্তব্য করুন