মার্কিন নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে রাশিয়া সফরে গেছেন উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন। এ যাত্রায় তিনি ব্যবহার করেছেন উত্তরাধিবার সূত্রে পাওয়া বুলেটপ্রুফ ট্রেন। এটি তার পূর্বপুরুষেরাও ব্যবহার করেছেন। ফলে এ বিশেষ ট্রেনে আসলেই কি আছে তা নিয়ে কৌতূহলেরও যেন শেষ নেই।
সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, রাশিয়ার ভ্লাদিভস্তকে যাচ্ছেন কিম। এ যাত্রায় তার সময় লাগবে ২০ ঘণ্টা। এতে ট্রেনটিকে পাড়ি দিতে হবে এক হাজার ১৮০ কিলোমিটার। আধুনিক যুগের বিভিন্ন ট্রেনের বিভিন্ন গতিশীল ট্রেনের সময়ে এটির গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার মাত্র। তার এ ট্রেনটির নাম তাইয়েংহো, যার বাংলা অর্থ হলো সূর্য। উত্তর কোরিয়ার প্রতিষ্ঠাতা কিম ইল সুংয়ের প্রতীকী নামও তাইয়েংহো।
ইতিহাস
উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উনের ট্রেনপ্রীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া। তার দাদা কিম ইল সুং, তাঁর বাবা কিম জং ইল দুজনেই বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে ট্রেন ব্যবহার করতেন। তার দাদা কিম ইল সুং এ ট্রেনযোগে ভিয়েতনাম এবং পূর্ব ইউরোপ সফর করেছিলেন। মূলত বিমান সফরে ব্যাপক ভীতির কারণে কিম জং ইল ট্রেনে সফর করতেন। এজন্য ২০০১ সালে তিনি প্রায় ১০ দিন সময় ব্যয় করে ট্রেনযোগে মস্কো সফরে গিয়েছিলেন তিনি।
খাবার ব্যবস্থা
কিম জং ইলের সেই মস্কো সফরে সঙ্গী হিসেবে ছিলেন রুশ সশস্ত্রবাহিনীর কমান্ডার কনস্তান্তিন পুলিকোভস্কি। তিনি বলেন, ‘ওই ট্রেনে রুশ, চীনা, কোরীয়, জাপানি এমনকি ফরাসি খাবারও পাওয়া যেত।’ ট্রেনে তাজা লবস্টার থেকে শুরু করে সবকিছুই তাজা পাওয়া যেত। এ ছাড়া ট্রেনে ফ্রান্সের বোর্দো থেকে রেড ওয়াইন এবং প্যারিস থেকে বারগ্যান্ডি ওয়াইন আনা হতো।
তুলনা করতে গিয়ে কনস্তান্তিন পুলিকোভস্কি বলেন, ‘এমনকি মহামান্য পুতিনের ট্রেনেও কিম জং ইলের ট্রেনের সমান আরামদায়ক ব্যবস্থা নেই।’
নিরাপত্তা ব্যবস্থা
অন্যান্য ট্রেনের তুলনায় এই ট্রেনের বিশেষত্ব হলো—এটি খুবই শক্তিশালী ধাতব পাত দিয়ে মোড়ানো। এটি রকেট ও গুলির আঘাত ফেরাতেও সক্ষম। এ ছাড়া কিমের নিরাপত্তা দিতে ট্রেনটির মধ্যে একটি বাহিনীও রয়েছে। এই বাহিনী অন্যান্য প্রেসিডেন্টকে নিরাপত্তা দেওয়া বাহিনীর তুলনায় অনেকাংশেই বড়।
চোসুন ইলবো পত্রিকায় বলা হয়েছে, সম্ভাব্য হুমকি খতিয়ে দেখতে অন্তত ১০০ জনের একটি নিরাপত্তা এজেন্টের দল ট্রেনটি পৌঁছানোর আগেই সামনের স্টেশনগুলোতে পৌঁছে যায়। এ ছাড়া এটি যেসব স্টেশনের মধ্য দিয়ে যায়, সেখানে বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়া হয়, যেন অন্যান্য রেল রুটগুলো দিয়ে অন্য কোনো ট্রেন চলাচল করতে না পারে। সোভিয়েত নির্মিত দুটি সামরিক হেলিকপ্টার ট্রেনের যাত্রাপথে টহল দিয়ে বেড়ায়। ট্র্যাকগুলো নিরাপদ কি না, তা নিশ্চিত করতে কিমের আগে আরেকটি ট্রেন থাকে। শুধু তাই নয়, কিমের ট্রেনের পেছনে থাকে তৃতীয় আরেকটি ট্রেন। এই ট্রেনে মূলত বিভিন্ন কর্মী এবং দেহরক্ষীরা থাকেন। পাশাপাশি কোনো সম্ভাব্য আক্রমণের দিকেও তারা নজর রাখেন।
উত্তর কোরিয়ায় অন্তত ২০টি স্টেশন রয়েছে যেগুলো শুধু বিশেষ ওই ট্রেনই ব্যবহার করে।
অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা
দক্ষিণ কোরিয়ার সংবাদমাধ্যম চোসুন ইলবো ২০০৯ সালের নভেম্বরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানায়, সাঁজোয়া এ ট্রেনের জন্য ৯০টি কামরা সব সময় সজ্জিত রাখা হয়। এসব বগিতে অন্যান্য যানও বহন করা হয়। এর মধ্যে কিমের ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য অস্ত্র সজ্জিত দুটি মার্সিডিজও থাকে।
ট্রেনটিতে একাধিক কনফারেন্স রুম, ছোট থিয়েটার ও একাধিক বেডরুম রয়েছে। এ ছাড়া ট্রেনটিতে স্যাটেলাইট ফোনের সংযোগ ও সাধারণ যাত্রীদের মতো বসে ভ্রমণ করতে একাধিক কামরায় লাল চামড়ায় মোড়ানো চেয়ার রয়েছে।
জানা যায়, কিমের বাবা কিম জং ইল বিমানে চড়তে ভয় পেতেন। তাই কোথাও সফরে গেলে ট্রেনই ছিল তার ভরসা। কিমের দাদা উত্তর কোরিয়ার প্রতিষ্ঠাতা কিম ইল সাংও বিদেশ সফরে প্রায়ই ট্রেন ব্যবহার করতেন।
মন্তব্য করুন