বিশ্বে আবারও ফিরতে পারে স্নায়ুযুদ্ধ। ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন ও উৎপাদন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার পাল্টাপাল্টি অবস্থানের কারণে এমন আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। একদিকে জার্মানিতে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পাঠানোর কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে পুনরায় নিষিদ্ধ করা ভয়ংকর অস্ত্র তৈরির ঘোষণা দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। দুই দেশের এমন পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে আবারও বিশ্বে ফিরতে পারে স্নায়ুযুদ্ধ।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সতর্কবার্তা দিয়ে বলেছেন, জার্মানিতে যুক্তরাষ্ট্রের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের সিদ্ধান্ত আবারও স্নায়ুযুদ্ধের দিকে ধাবিত করতে পারে। কেননা জার্মান চ্যান্সেলর ওলফ শলৎস এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বুধবার (১০ জুলাই) ওয়াশিংটনে ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনের সময় হোয়াইট হাউস টমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রসহ দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে এ পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে দেশটি।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে বলেন, আমরা অবধারিতভাবে স্নায়ুযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। স্নায়ুযুদ্ধে সরাসরি সংঘর্ষের জন্য সব বৈশিষ্ট্য ফিরে আসছে।
জামার্নিকে যুক্তরাষ্ট্রের এমন পদক্ষেপের বিষয়ে সতর্ক করেছে রাশিয়া। দেশটিতে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, এ ধরনের পদক্ষেপ সামনে আগালে মস্কো ও বার্লিনের মধ্যকার সম্পর্কের আরও অবনতি হবে।
রুশ রাষ্ট্রদূত সের্গেই নেচায়েভ বলেন, এটা আশা করা যায় যে জার্মান রাজনীতিবিদরা অভিজাতরা এ ধরনের ধ্বংসাত্মক এবং বিপজ্জনক পদক্ষেপ, যা জার্মান প্রজাতন্ত্র বা সামগ্রিকভাবে ইউরোপীয় মহাদেশের নিরাপত্তার জন্য অবদান রাখে না, তা যুক্তিযুক্ত কিনা তা পুনর্বিবেচনা করবে। কেননা এর মাধ্যমে জার্মান-রাশিয়া সম্পর্কের অপূরণীয় ক্ষতি হবে।
এর আগে বুধবার যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ২০২৬ সালে জার্মানিতে মাল্টি-ডোমেন টাস্ক ফোর্সের দূরপাল্লার অস্ত্র মোতায়েন শুরু করবে যুক্তরাষ্ট্র। ভবিষ্যতে স্থায়ীভাবে এসব রেখে দেওয়ার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এ কর্মযজ্ঞ শুরু হতে যাচ্ছে। এসব অস্ত্র ইউরোপের অন্যান্য দেশে মোতায়েন মার্কিন অস্ত্রের চেয়ে বেশি দূরপাল্লার এবং বিধ্বংসী। ভূমি থেকে তা যেকোনো লক্ষ্যবস্তুতে মুহূর্তে আঘাত হানার জন্য সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হবে, যা হবে শত্রুর জন্য রীতিমতো ভয়ের।
বিবৃতিতে বলা হয়, ন্যাটোর প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি এবং ইউরোপীয় সমন্বিত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় অবদান রাখতে ওয়াশিংটন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জার্মানি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় আধুনিক যুগের সবচেয়ে শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র সেখানে পাঠানো হবে।
এর আগে ২০২১ সালে ইউএস সেনাবাহিনী জার্মানির উইসবাডেনে দ্বিতীয় মাল্টি-ডোমেন টাস্ক ফোর্স চালু করে। যা প্রথাগত স্থল যুদ্ধ কৌশলের বাইরে শক্তিশালী মার্কিন কমান্ড নিশ্চিত করে চলেছে। এবারের অস্ত্র এবং লজিস্টিক সাপোর্ট হবে আরও উন্নত ও কার্যকর।
উল্লেখ্য, ১৯৮৭ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের মিখাইল গর্বাচেভ ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রোনাল্ড রিগ্যান স্বাক্ষরিত মধ্যবর্তী-রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সেস (আইএনএফ) চুক্তির অধীনে ৫০০ কিলোমিটার অতিক্রমকারী স্থলভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র ২০১৯ সাল পর্যন্ত নিষিদ্ধ ছিল। এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো দুই পরাশক্তি তাদের পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডার কমাতে সম্মত হয়েছিল এবং এ ধরনের অস্ত্রের একটি সম্পূর্ণ মজুত ধ্বংস করে।
স্বাক্ষরকারীদের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে জার্মানি, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড ও চেক প্রজাতন্ত্র ১৯৯০ এর দশকে তাদের ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করে। পরে স্লোভাকিয়া ও বুলগেরিয়াও তা অনুসরণ করে।
যুক্তরাষ্ট্র ২০১৯ সালে আইএনএফ চুক্তি থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেয়। ওই সময় দেশটির অভিযোগ ছিল, মস্কো চুক্তি লঙ্ঘন করে ৯এম৭২৯ স্থলচালিত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের উৎপাদন ও উন্নতি করছে। এ ক্ষেপণাস্ত্রটিই ন্যাটোতে এসএসসি-৮ নামে পরিচিত।
তখন রাশিয়া অভিযোগ অস্বীকার করলেও চলতি বছরের জুন মাসে মধ্য ও স্বল্পমাত্রার পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের উৎপাদন পুনরায় শুরু করার ঘোষণা দেয়। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপ ও এশিয়ার দেশগুলোর কাছে এ ধরনের অস্ত্র বিক্রি করছে, যা খুবই বিপজ্জনক। এ অবস্থায় রাশিয়া বসে থাকতে পারে না।
মন্তব্য করুন