লাক্ষাদ্বীপ কথার অর্থ লক্ষ দ্বীপের সমন্বয়। এই দ্বীপপুঞ্জ পশ্চিমে আরব সাগর এবং পূর্বে লাক্ষাদ্বীপ সাগরের মধ্যে সামুদ্রিক সীমানা হিসেবে কাজ করে।
লাক্ষাদ্বীপ। যার অর্থ হলো লক্ষ দ্বীপের সমন্বয়। এত দিন সেই জায়গা সম্বন্ধে সকলের কমবেশি জানা থাকলেও, বছরে খুব কম ভারতীয়েরই পা পড়ত সেখানে। ভারতের মালাবার উপকূল থেকে প্রায় ৪৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই দ্বীপপুঞ্জেই এখন নজর দেশবাসীর। কারণ, ভারত-মালদ্বীপ নিয়ে তৈরি হওয়া বিতর্ক।
লাক্ষাদ্বীপ এবং মালদ্বীপের মধ্যে মিল প্রচুর। কিন্তু তবুও বিলাসবহুল ভ্রমণের উদ্দেশে ভারতীয়দের বেশি ভিড় জমে মালদ্বীপে। ২০২১-২২ সালে প্রায় আড়াই-তিন লক্ষ ভারতীয় মালদ্বীপ ভ্রমণে গিয়েছিলেন। সেই রীতিই পাল্টাতে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে। মালদ্বীপের বিকল্প হয়ে দাঁড়াতে চলেছে লাক্ষাদ্বীপ।
সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্দেশে অবমাননাকর মন্তব্য করায় বিগত কয়েক দিনে যে ঝড় বয়ে গিয়েছে, তার জেরে রোষের মুখে পড়েছে মালদ্বীপ সরকার।
এর পরেই সমাজমাধ্যমজুড়ে ‘বয়কট মালদ্বীপ’-এর হিড়িক উঠেছে। মালদ্বীপকে বয়কট করার ডাক দিয়েছেন বলিউড ও ক্রিকেট মহলের নক্ষত্রেরাও। পাশাপাশি তারা উৎসাহ জোগাচ্ছেন লাক্ষাদ্বীপের মতো ভারতীয় দ্বীপগুলো ঘুরে দেখার।
ভারত-মলদ্বীপ নিয়ে বিতর্কের মাঝে দেশবাসীর চোখ এখন লাক্ষাদ্বীপের দিকে। ইতোমধ্যেই পরিকল্পনা চলছে ভারতীয় কেন্দ্রশাসিত দ্বীপপুঞ্জকে ঢেলে সাজানোর।
এসব আলোচনার মধ্যেই লাক্ষাদ্বীপ সফরে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রধানমন্ত্রী মোদির সাদা বালির ওপর ভ্রমণ বা বিশাল নীল সৈকতে বিশ্রাম নেওয়ার ছবি প্রকাশ্যে আসার দিনই ৫০ হাজার মানুষ লাক্ষাদ্বীপ নিয়ে গুগ্লে অনুসন্ধান চালিয়েছেন। ফলে মনে করা হচ্ছে চলতি বছর থেকে ভিড় আরও বাড়বে লাক্ষাদ্বীপের সমুদ্রসৈকতে।
সাদা বালি এবং স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ পানির জন্য বিখ্যাত লাক্ষাদ্বীপ দ্বীপপুঞ্জে যাওয়ার আগে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হয়। তবেই সেখানে যাওয়ার অনুমতি মেলে।
লাক্ষাদ্বীপের দ্বীপগুলোতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বহু আদিবাসী উপজাতিদের বাস। তাদের সুরক্ষা, নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তার কথা মাথায় রেখেই সব দ্বীপে পর্যটকদের যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় না।
লাক্ষাদ্বীপে প্রবেশের অনুমতিপত্রের ফর্ম অনলাইনে পাওয়া যায়। সেই ফর্ম জমা দিতে হয় প্রশাসনের কাছে। সেই ফর্ম খতিয়ে দেখে প্রবেশের জন্য সবুজ সংকেত দেওয়া হয়।
লাক্ষাদ্বীপে প্রবেশের অনুমতি পাঠানো হয় ইমেলের মাধ্যমে। কোনো পর্যটক ক’দিন দ্বীপপুঞ্জে কাটাবেন এবং তিনি কোন দেশের বাসিন্দা, তার ওপর নির্ভর করে নির্দিষ্ট প্রবেশমূল্যও নেওয়া হয়।
প্রবেশের অনুমতি পাওয়ার পরেই হোটেল এবং বিমানের টিকিট বুক করতে পারেন পর্যটকেরা। লাক্ষাদ্বীপে সাধারণত ৩০ দিনের বেশি থাকার অনুমতি দেওয়া হয় না।
লাক্ষাদ্বীপ ৩৬টি দ্বীপের সমন্বয়ে তৈরি হলেও এর মধ্যে কাভারত্তি, আগত্তি, বাঙ্গারাম, কদমত এবং মিনিকয়—এই পাঁচটি দ্বীপেই ভ্রমণ করার অনুমতি রয়েছে পর্যটকদের।
মিনিকয়ে ‘জাহাধনি’ নামে বিভিন্ন রঙিন নৌকার একটি প্রতিযোগিতা হয়। যা পর্যটকের কাছে বিশেষ আকর্ষণের। মিনিকয় দ্বীপ টুনা মাছের জন্যও বিখ্যাত। ঔপনিবেশিক ভারতে ১৮৮৫ সালে ব্রিটিশরা লাক্ষাদ্বীপে একটি টুনা মাছ প্রক্রিয়াকরণের কারখানা তৈরি করেছিল।
লাক্ষাদ্বীপের অধিকাংশ মানুষ মালায়লম ভাষায় কথা বলেন। মিনিকয় দ্বীপে কথা বলা হয় মাহি বা মাহল ভাষায়, যার সঙ্গে পুরনো সিংহলী ভাষার মিল রয়েছে। তবে কেউ কেউ হিন্দিতেও কথা বলেন।
লাক্ষাদ্বীপে গেলে যে পদ খেতেই হবে, তা হলো মুস কাবাব। সুগন্ধি চালের ওপর টুনা মাছ, সবজি এবং মসলার স্তর দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। পরে মুখবন্ধ পাত্রে রান্না করা হয়। এ ছাড়াও বিরিয়ানি, কদালাক্কা এবং টুনা কারি সেখানকার জনপ্রিয় খাবার। লাক্ষাদ্বীপের দ্বীপগুলো বিভিন্ন অচেনা ফলেরও ভাণ্ডার।
লাক্ষাদ্বীপের সমুদ্রে নগ্ন হয়ে সাঁতার কাটা বা সৈকতে নগ্ন হয়ে সূর্যস্নান (সানবাথ) করা নিষিদ্ধ। এমনকি, লাক্ষাদ্বীপে কেউ যদি অনুমতি ছাড়া গাছ থেকে নারকেল পাড়েন, তা হলেও তিনি শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন।
মন্তব্য করুন