ভোর প্রায় ৩টা। ইরানের রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন স্থানে অন্ধকার রাতেই ভয়াবহ হামলা চালাল ইসরায়েল। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই দৃশ্যমান হতে থাকে এ হামলার ক্ষয়ক্ষতি।
শুক্রবার ইরানে একটি বৃহৎ সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। নাম দেয়া হয় ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’। এই অভিযানটি ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্য করে পরিচালিত হয়। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু জানান, এই অভিযানটি চলবে যতদিন পর্যন্ত ইরানের পারমাণবিক হুমকি পুরোপুরি নির্মূল না হয়।
অভিযান ও লক্ষ্য
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) ও গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ যৌথভাবে এই অভিযানে অংশগ্রহণ করে। অভিযানের লক্ষ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক সমৃদ্ধি কেন্দ্র, ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, এবং শীর্ষ সামরিক নেতাদের নির্মূল করা। নাটাঞ্জ পারমাণবিক সমৃদ্ধি কেন্দ্র, তেহরানের রাডার সিস্টেম, এবং ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চারগুলো লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়।
এ হামলায়, ইরানের শীর্ষ সামরিক নেতাদের মধ্যে জেনারেল হোসেইন সালামি, মোহাম্মদ বাঘেরি, এবং আলি শামখানি নিহত হন। এছাড়াও ৬জন বিজ্ঞানীও নহত হন।
মোসাদের ভূমিকা
ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা, মোসাদ এই অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারা ইরানে গোপনে অস্ত্র সরবরাহ করে এবং তিনটি সমন্বিত অপারেশন পরিচালনা করে। যার মাধ্যমে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও রাডার সিস্টেমগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়। এই গোপন অভিযানগুলো ইসরায়েলের পরবর্তী বিমান হামলাকে সফল করে তোলে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ইরান এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ১০০টি ড্রোন ইসরায়েলের দিকে পাঠায়। তবে এর বেশিরভাগই প্রতিহত করে ইসরায়েল। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি প্রতিশোধের হুমকি দেন। এই হামলার ফলে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায় এবং আন্তর্জাতিক বিমান চলাচলে প্রভাব পড়ে। ইউএই বিভিন্ন গন্তব্যে ফ্লাইট বাতিল করে, যার মধ্যে তেহরান, বাগদাদ, এবং বুখারেস্ট অন্তর্ভুক্ত।
‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ ইরানে ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় সামরিক অভিযানগুলোর মধ্যে একটি। এই অভিযানটি ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক সক্ষমতা লক্ষ্য করে পরিচালিত হয়, যার ফলে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতি ভবিষ্যতে আরও বৃহত্তর সংঘাতের দিকে নিয়ে যেতে পারে, যা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
মন্তব্য করুন