সম্প্রতি ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের ১২ দিনের সামরিক আগ্রাসনের বারবার সিরিয়ার আকাশসীমা ব্যবহার করেছে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান। কিন্তু দেশীয় আকাশসীমা লঙ্ঘনের ঘটনায় কোনো প্রতিবাদ তো দূরের কথা, কার্যত নীরব থেকেছেন সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম দ্য জেরুজালেম পোস্ট ও হিব্রু ভাষার মারিভ-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে হাইফা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আমাতজিয়া বারাম বিশ্লেষণ করেন, সিরিয়ার নতুন সরকারের কাছে এই নীরবতা ছিল কৌশলগতভাবে লাভজনক।
বারামের মতে, সিরিয়ার শাসক মনে করেন, ইরানের ওপর যত বেশি আঘাত আসবে, দামেস্কের রাজনৈতিক অবস্থান ততই মজবুত হবে। কারণ কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে সিরিয়া বর্তমানে ইরানকেই বড় হুমকি মনে করে। ফলে ইসরায়েলের হাতে ইরান দুর্বল হলে, তাতে সিরিয়ার নতুন নেতৃত্ব উপকৃত হবে বলেই মনে করছেন আল-শারা।
এছাড়া ইসরায়েলের এই সামরিক অভিযানের মাধ্যমে আল-শারা বেশ কিছু মূল্যবান শিক্ষা পেয়েছেন। যেমন, ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর ক্ষমতা, তাদের গোয়েন্দা দক্ষতা ও যুদ্ধ পরিচালনায় নিখুঁত কৌশলের ধারণা- সব মিলিয়ে একরকম ‘মাস্টারক্লাস’ হয়েছে সিরিয়ার জন্য।
বারাম বলেন, আল-শারা নিশ্চয়ই তার নোটবুকে লিখে রেখেছেন- ইসরায়েল চাইলে যে কোনো সময় তার ওপরও এমন হামলা করতে পারে। আত্মঘাতী মনোভাব না থাকলে, এখন ইসরায়েলের সঙ্গে বিবাদে না জড়ানোই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।
এদিকে সিরিয়ার অভ্যন্তরেও নতুন কোনো যুদ্ধ চায় না জনগণ। গোলান মালভূমির নিয়ন্ত্রণে ইসরায়েলি উপস্থিতি কার্যত মেনে নিয়েছে দামেস্ক। সেখানকার জাতীয়তাবাদী চাপ উপেক্ষা করে, আল-শারা একপ্রকার ‘বাস্তব রাজনীতি’ করছেন বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
সিরিয়ার অবস্থান এতটাই কৌশলগতভাবে হিসাব করা যে, ইসরায়েলের ইরানবিরোধী অভিযানে তিনি উপকার দেখছেন। একইসঙ্গে, এই প্রেক্ষাপটে সিরিয়া- ইসরায়েল সম্পর্ক নতুন এক মোড়ে এগোতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে।
সবমিলিয়ে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের জিও-পলিটিকসকে কাঁপিয়ে দিলেও, সিরিয়া এই অস্থিরতায় নীরব থেকে নিজের অবস্থান শক্ত করেছে- এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষক আমাতজিয়া বারাম।
মন্তব্য করুন