কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২৭ জুন ২০২৫, ১১:০৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে জিতল কে?

ছবি : সংগৃহীত
ছবি : সংগৃহীত

ইরান ও ইসরায়েলের সাম্প্রতিক যুদ্ধ একেবারেই প্রচলিত কোনো যুদ্ধ নয়, বরং এটি ছিল অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই, কৌশলগত শক্তি প্রদর্শন এবং মনস্তাত্ত্বিক প্রতিপত্তির প্রশ্ন। কেউই সরাসরি বিজয়ী হতে পারেনি- তবু কেউ হারেনি বললেও পুরো সত্য বলা হয় না।

ইসরায়েলের অন্যতম উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল- ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস করা। কিন্তু তারা পারল কেবল পৃষ্ঠগত কিছু ক্ষতি করতে। মূল কাঠামো অক্ষুণ্ন রইলো। এছাড়া ইরানের বিশাল ভৌগোলিক বিস্তার এবং মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে তাদের প্রভাব ইসরায়েলকে একটি সীমিত যুদ্ধেই আটকে রাখে।

ইসরায়েল প্রাথমিকভাবে ইরানে হামলা চালিয়ে সামরিক সক্ষমতা ও গোয়েন্দা দখলের শক্তি দেখাতে চেয়েছিল। তবে ইরানের পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় তেলআবিব ও হাইফার মতো শহরে ধ্বংসযজ্ঞের ছবি ছড়িয়ে পড়ায়, ইসরায়েলের ‘অজেয় সেনাবাহিনী’ ভাবমূর্তিতে বড় ধাক্কা লাগে।

বিশেষ করে আরব বিশ্বের চোখে এটি ছিল এক মনস্তাত্ত্বিক পরাজয়, যেটি ভবিষ্যতের রাজনৈতিক চেতনায় ইসরায়েলবিরোধী শক্তিকে আরও অনুপ্রাণিত করবে।

ইরান এই যুদ্ধে সরাসরি সামরিক জয়ের চেয়ে বার্তা দিতে চেয়েছে- ‘আমরা পাল্টা আঘাত করতে পারি এবং করবও।’ ইসরায়েলের এফ-৩৫ ভূপাতিত করা এবং শহরগুলোর উপর সফল ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত এই বার্তাকেই প্রতিষ্ঠিত করে।

তবে, এর বিনিময়ে ইরানকে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক দিক দিয়ে চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে। যুদ্ধ ইরানের অর্থনীতি আরও দুর্বল করেছে এবং আন্তর্জাতিকভাবে তাদের ওপর চাপ বাড়িয়েছে।

এই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যে অংশ না নিলেও, ইসরায়েলের প্রধান সমর্থক হিসেবে তারা গভীরভাবে জড়িত ছিল। কিন্তু যুদ্ধ দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় আমেরিকাকেও হস্তক্ষেপ করে যুদ্ধ থামাতে হয়।

রাশিয়া ও চীন, যারা এই সংঘাত থেকে সরাসরি লাভবান হয়েছে (বিশেষ করে তেলের দাম বৃদ্ধিতে), তারা নতুন কৌশলগত সুবিধা অর্জন করেছে। ফলে, অনেক বিশ্লেষকের মতে, এই যুদ্ধে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রই।

শেষত, যুদ্ধ এমন এক পর্যায়ে গিয়ে থামে যেখানে কেউ জয়োল্লাস করতে পারে না, আবার সরাসরি পরাজয়ও স্বীকার করতে হয় না। এই দ্বন্দ্ব শেষ হয়েছে ‘অমীমাংসিত বিজয়’ দিয়ে- যেখানে ইসরায়েল সামরিকভাবে শক্তি দেখিয়েছে, কিন্তু মনস্তাত্ত্বিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ইরান সরাসরি জিতেনি, তবে প্রমাণ করেছে তারা ভেঙে পড়েনি। আর রাশিয়া ও চীন অঞ্চলজুড়ে নতুন সুবিধা আদায়ের পথে অনেকদূর এগিয়ে গেছে।

এই যুদ্ধের ফলাফল একটাই- মধ্যপ্রাচ্যের সামরিক ও কৌশলগত মানচিত্রে পরিবর্তনের ইঙ্গিত। আর এটি ইঙ্গিত দেয়, ভবিষ্যতের যুদ্ধ হবে সরাসরি বিজয়ের জন্য নয়, বরং প্রভাব, ক্ষমতা ও আত্মরক্ষার একটি অমীমাংসিত প্রতিযোগিতা।

আল-জাজিরার নিবন্ধ থেকে অনুবাদকৃত।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের বাধায় প্রাণ গেল নবজাতকের

বিয়ের অনুষ্ঠানেই বিশাল টাকার মালিক দম্পতি, স্কুল নির্মাণে দান করলেন দেড় কোটি

স্বাধীনতা দিবসে দীর্ঘতম ভাষণ দিয়ে মোদির রেকর্ড

মেসির চেয়েও বেশি বিক্রি হচ্ছে সন হিউং মিনের জার্সি!

সাজেকে যাচ্ছিলেন ৬ বন্ধু, অতঃপর...

বর্জ্যপানি বিশ্লেষণ / মেথ, কোকেইন ও হেরোইন ব্যবহারে নতুন রেকর্ড

জলাধার, মাঠ ও পার্ক সংরক্ষণে ডিএনসিসির চিঠি

বৈধ না হলে নির্বাচনের কোনো মানে নেই : ড. ইউনূস

গণমাধ্যমে লুকিয়ে থাকা গণহত্যার সহযোগীদের দ্রুত বিচার দাবি জেআরজেএর

নির্বাচনের আগে রাকসুর ফান্ড নিয়ে যত প্রশ্ন

১০

সিপিএলের প্রথম ম্যাচে ব্যর্থ সাকিব

১১

যুদ্ধ শেষের শর্ত জানালেন নেতানিয়াহু

১২

পুরান ঢাকায় সেনাবাহিনীর অভিযান, ৮ চাঁদাবাজ আটক 

১৩

বিমানের ভেতরে সিগারেট ধরিয়ে আসনের কভার জ্বালানোর চেষ্টা যুবতীর!

১৪

এনসিপি থেকে ২৫ নেতাকর্মীর পদত্যাগ

১৫

মুরাদনগরে শ্রেণিকক্ষে ছুরি প্রদর্শনের ভিডিও ভাইরাল, ৪ শিক্ষার্থী বহিষ্কার

১৬

সিলেটে খাল থেকে ভারতীয় নাগরিকের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার

১৭

এবার পাকিস্তানকে মোদির কঠোর হুঁশিয়ারি

১৮

ইলিশ খেলে দূরে থাকবে এই কঠিন ৪ রোগ

১৯

১৫ আগস্ট : টিভিতে আজকের খেলা

২০
X