গাজায় যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে বন্দি বিনিময়ের চুক্তিতে রাজি হয়েছে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি। তবে এই চুক্তির আওতায় ২ হাজার ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিলেও একজন ব্যক্তিকে মুক্তির তালিকায় রাখেনি ইসরায়েল—তিনি মারওয়ান বারঘুতি, যাকে ফিলিস্তিনিরা ‘নিজেদের নেলসন মেন্ডেলা’ বলে আখ্যা দেন।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) এক সংবাদ সম্মেলনে ইসরায়েল সরকারের মুখপাত্র শোশ বেদ্রোসিয়ান বলেন, ‘এই বন্দি বিনিময়ের অংশ হবেন না মারওয়ান বারঘুতি।’
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় সম্পন্ন হওয়া এই চুক্তি অনুযায়ী, গাজায় আটক ইসরায়েলি নাগরিকদের মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েল প্রায় ২,০০০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে ছেড়ে দেবে। এর মধ্যে ১,৭০০ জন পুরুষ, বাকিরা নারী ও শিশু।
১৯৫৯ সালে পশ্চিম তীরের রামাল্লার কোবারা গ্রামে জন্ম নেওয়া বারঘুতি ফাতাহ দলের শীর্ষ নেতা এবং ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনের অন্যতম মুখ্য সংগঠক। ২০০২ সালে ইসরায়েলি বাহিনী তাকে গ্রেপ্তার করে এবং পরের বছর ৫টি হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়।
২০০০ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ইন্তিফাদায় তিনি ছিলেন ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের প্রধান কণ্ঠস্বর। এখনো কারাগারে থেকেও তার জনপ্রিয়তা এতটাই প্রবল, জনমত জরিপে দেখা গেছে—বারঘুতিকে মুক্তি দেওয়া হলে তিনি ফিলিস্তিনের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হওয়ার সবচেয়ে সম্ভাবনাময় প্রার্থী।
কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, কাতার ও মিসরসহ কয়েকটি দেশ বারঘুতির মুক্তি নিশ্চিত করতে তৎপর ছিল। কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি এবং মিসরের গোয়েন্দা প্রধান মেজর জেনারেল হাসান মাহমুদ রশাদ ব্যক্তিগতভাবে এই বিষয়ে আলোচনায় যুক্ত ছিলেন।
তবে তেলআবিব স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে—বারঘুতির মুক্তি কোনোভাবেই সম্ভব নয়। ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের মতে, তিনি শুধু একজন বন্দি নন, বরং ‘ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের প্রতীক’, আর তাকে মুক্তি দিলে ফিলিস্তিনিদের আন্দোলন নতুন গতি পেতে পারে।
ইসরায়েলের এই অবস্থান ফিলিস্তিনি সমাজে গভীর হতাশা ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, বারঘুতিকে বাদ দিয়ে কোনো বন্দি বিনিময় চুক্তিই প্রকৃত অর্থে পূর্ণাঙ্গ হতে পারে না, কারণ তিনি শুধু একজন রাজনৈতিক নেতা নন—তিনি ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ, আত্মত্যাগ ও স্বাধীনতার প্রতীক।
সূত্র : টাইমস অব ইসরায়েল ও মিডল ইস্ট আই
মন্তব্য করুন