প্রায় সাত লাখ বছর ধরে নিস্তেজ থাকা ইরানের তাফতান আগ্নেয়গিরি আবার সক্রিয় হয়ে উঠছে। সাম্প্রতিক এক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, আগ্নেয়গিরিটির চূড়ার নিচের জমি অস্বাভাবিকভাবে ফুলে উঠতে শুরু করেছে। এই উত্থান ইঙ্গিত করছে— পৃথিবীর গভীরে গ্যাস ও ম্যাগমা জমা হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে বড় ধরনের অগ্ন্যুৎপাতের সৃষ্টি করতে পারে।
লাইভ সায়েন্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের মে মাস পর্যন্ত তাফতানের একটি নির্দিষ্ট এলাকায় ভূমি ৯ সেন্টিমিটার পর্যন্ত উঁচু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা এটিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূতাত্ত্বিক সংকেত হিসেবে দেখছেন। কারণ এত দীর্ঘ সময় নিষ্ক্রিয় থাকা কোনো আগ্নেয়গিরিতে এমন পরিবর্তন সাধারণত ম্যাগমাটিক কার্যকলাপের দিকেই ইঙ্গিত করে।
গবেষণার প্রধান বিজ্ঞানী পাবলো গঞ্জালেজ জানিয়েছেন, ‘তাফতান এতদিন মৃত আগ্নেয়গিরি হিসেবেই বিবেচিত ছিল। কিন্তু এই নতুন কার্যকলাপ আমাদের ধারণাকে পাল্টে দিচ্ছে। এখন আমরা বলতে বাধ্য যে এটি মৃত নয়, বরং সুপ্ত অবস্থায় ছিল— আর এখন আবার জেগে ওঠার প্রস্তুতি নিচ্ছে।’
কেন বাড়ছে উদ্বেগ?
২০২০ সাল পর্যন্ত স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণে তাফতানকে নিষ্ক্রিয় বলে মনে হলেও ২০২৩ সালে স্থানীয়রা আগ্নেয়গিরি থেকে ধোঁয়া ও গ্যাস নির্গমন লক্ষ করেন। ৫০ কিলোমিটার দূর থেকেও গ্যাসের গন্ধ পাওয়া যায়। ভূমিকম্প বা ভারী বৃষ্টিপাতের মতো স্বাভাবিক কারণকে বাদ দিয়ে বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভূমির এই উত্থান সরাসরি আগ্নেয়গিরির অভ্যন্তরে চাপ সঞ্চয়ের ফল।
বিশেষজ্ঞদের মতে, তাৎক্ষণিক কোনো অগ্ন্যুৎপাতের সম্ভাবনা নেই। তবে পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তনশীল হতে পারে। বিস্ফোরণ যদি ঘটে, তা হয় শান্তভাবেও হতে পারে, আবার জটিল ও বিধ্বংসী আকারেও দেখা দিতে পারে। তাই আগেভাগেই পর্যবেক্ষণ ও সতর্কতা গ্রহণ করা জরুরি।
তাফতান আগ্নেয়গিরির উচ্চতা প্রায় ৩ হাজার ৯৪০ মিটার, এটি ইরান-পাকিস্তান সীমান্তে অবস্থিত মাক্রান আগ্নেয় বলয়ের একমাত্র সক্রিয় আগ্নেয়গিরি হিসেবে পরিচিত। আরবীয় টেকটোনিক প্লেট ইউরেশীয় প্লেটের নিচে সরে যাওয়ার ফলে এর সৃষ্টি হয়েছিল। মানব ইতিহাসে এর কোনো অগ্ন্যুৎপাত নথিভুক্ত হয়নি। সর্বশেষ বড় অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনা ঘটেছিল প্রায় সাত লাখ বছর আগে।
গবেষণা কী বলছে?
বিজ্ঞানীরা এখন আগ্নেয়গিরি থেকে নির্গত গ্যাস পর্যবেক্ষণ শুরু করেছেন, যা আগ্নেয়গিরির ভেতরের তাপমাত্রা ও চাপ বৃদ্ধির বিষয়ে আরও সুনির্দিষ্ট ধারণা দেবে।
ড. গঞ্জালেজ বলেন, আমরা আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য নয়, বরং আগাম সতর্কবার্তা দিতে এই গবেষণা করছি। তাফতানের বর্তমান কার্যকলাপ উপেক্ষা করলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
মন্তব্য করুন