

গাজা অভিমুখে ধেয়ে আসছে প্রলয়ংকরী ঝড়। এর ফলে লাখ লাখ বাসিন্দা বাস্তুচ্যুতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে সতর্কতা জারি করেছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) আনাদোলু এজেন্সির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ গাজায় প্রবল ঝড় ও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এর ফলে ৯ লাখের বেশি বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি মারাত্মক বন্যা-ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে সতর্ক করেছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। দুই বছরের ইসরায়েলি যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ ও ভেঙে পড়া মানবিক পরিস্থিতির মধ্যে নতুন এই দুর্যোগ পরিস্থিতিকে আরও বিপর্যস্ত করতে পারে।
খান ইউনিস পৌরসভার মুখপাত্র সায়েব লাক্কান আনাদলুকে বলেন, উপকূলজুড়ে হাজারো তাঁবু বন্যায় প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। ধসে পড়া ড্রেনেজ ব্যবস্থা এবং উপচে পড়া বৃষ্টির পানি ধরে রাখার পুকুর শহরবাসীর জন্য অতিরিক্ত হুমকি তৈরি করেছে।
ফিলিস্তিনি আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, শুক্রবার ও শনিবার উপত্যকা এবং নিচু এলাকাগুলোতে আকস্মিক বন্যা দেখা দিতে পারে।
লাক্কান বলেন, পরিস্থিতি ‘অভূতপূর্ব ও বিপর্যয়কর,’ কারণ ধ্বংসস্তূপ ও অবকাঠামো ভেঙে পড়ায় ৯ লাখের বেশি মানুষ অনিশ্চিত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে ৮৫ শতাংশ সড়ক, পানি এবং পয়ঃনিষ্কাশন নেটওয়ার্ক ধ্বংস হয়ে গেছে। শহরজুড়ে ১ কোটি ৫০ লাখ টন ধ্বংসস্তূপ পড়ে আছে, যা পরিষ্কার করার কোনো সক্ষমতাই নেই।
তিনি সতর্ক করে বলেন, জ্বালানি সংকটের কারণে পয়ঃনিষ্কাশন স্টেশনগুলো পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এর ফলে পুরো পাড়া-মহল্লাজুড়ে নোংরা পানি উপচে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আনাদোলু জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে অক্টোবরের ১০ তারিখ পর্যন্ত পৌরসভা মাত্র ১৬ হাজার লিটার ডিজেল পেয়েছে। এর মাধ্যমে মাত্র তিন দিনের কার্যক্রম চালাতে সক্ষম। এ অবস্থায় জরুরি টিমগুলো সীমিত সরঞ্জাম নিয়ে বাঁধ তৈরি ও পানি প্রবাহ ঘুরিয়ে দেওয়ার কাজ করছে।
গাজা কর্মকর্তারা বলছেন, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরও ইসরায়েল দৈনিক চুক্তি লঙ্ঘন করেছে, যার ফলে শত শত ফিলিস্তিনি হতাহত হয়েছেন এবং খাদ্য-চিকিৎসা সরঞ্জাম প্রবেশ প্রায় অচল হয়ে পড়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খান ইউনিসে ২ হাজার ২০০টি ড্রেনেজ ব্যবস্থার মধ্যে এক হাজার ৯০০টিই ধ্বংস হয়ে গেছে। একটি জাতিসংঘ-সমর্থিত জরুরি প্রকল্প বাকি ড্রেনগুলো পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করছে। কিন্তু শহর ঘিরে থাকা বিপদের পরিমাণ এতই বিশাল যে তা যথেষ্ট নয়।
লাক্কান শহরটিতে দ্রুত মোবাইল পাম্প ও জরুরি সরঞ্জাম পাঠানোর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, খান ইউনিসের পরিস্থিতি ‘অত্যন্ত মর্মান্তিক,’ আন্তর্জাতিক সহায়তা ছাড়া ধ্বংসস্তূপ সরানো বা সেবা পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়। গাজার উপকূলে বন্যা ও মৃত্যুঝুঁকিতে থাকা দুই মিলিয়ন বাস্তুচ্যুত মানুষকে বাঁচাতে এখনই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।”
বৃহস্পতিবার ইউএনআডব্লিউএ জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় ২ লাখ ৮২ হাজারটির বেশি বাড়ি ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে শীত সামনে রেখে হাজারও পরিবার তাঁবুতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে গাজার সরকারি গণমাধ্যম কেন্দ্র জানায়, উপত্যকার ৯৩ শতাংশ তাঁবুই ধসে পড়েছে এবং আর বসবাসযোগ্য নেই।
মন্তব্য করুন