কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৮ জুলাই ২০২৫, ১০:২৯ এএম
অনলাইন সংস্করণ

সহিংসতার ফলে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ জানাল জিপিই

প্রতীকী ছবি।
প্রতীকী ছবি।

বিশ্বজুড়ে সহিংসতার ক্রমবর্ধমান প্রকোপ শুধু মানুষের জীবনকেই নয়, বিশাল ক্ষতির মুখে ফেলছে বৈশ্বিক অর্থনীতিকেও। গ্লোবাল পিস ইনডেক্স (জিপিই) ২০২৫-এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সহিংসতার কারণে বিশ্বের মোট অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ বছরে পৌঁছেছে ২০.১ ট্রিলিয়ন ডলারে, যা বৈশ্বিক মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ১৩.৫ শতাংশ।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১৭ বছরের মধ্যে ১৪ বার বিশ্বে শান্তি পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। ২০২৪ সালও ছিল সেই অবনতির ধারাবাহিকতার একটি অংশ। বিশ্লেষকরা এটিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী শান্তির পতন হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

জিপিই প্রতিবছর বিশ্বের ১৬৩টি স্বাধীন দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে শান্তির মাত্রা পরিমাপ করে। ২০২৫ সালের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা, ঘরোয়া সংঘাত এবং সামগ্রিক অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধির ফলে সহিংসতা ক্রমেই বেড়ে চলেছে।

ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড পিসের প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ কিলেলি বলেন, ‘বর্তমান বিশ্বে শান্তির অবস্থা প্রবল চাপের মুখে। আজকের সংঘাতগুলো আরও জটিল, দীর্ঘস্থায়ী এবং আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম করে ছড়িয়ে পড়ছে। অথচ এসব থামানোর যন্ত্রগুলো দুর্বল হয়ে পড়েছে।’

বিশেষভাবে সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পূর্ব ইউরোপ। সেখানে ইউক্রেন যুদ্ধ এখনো চলমান। এ ছাড়া আফ্রিকার সাব-সাহারান অঞ্চল, যেখানে রাজনৈতিক সহিংসতা, সন্ত্রাসবাদ ও সামরিক অভ্যুত্থান বেড়েই চলেছে দিন দিন।

সহিংসতা থেকে উদ্ভূত বার্ষিক ক্ষতির মধ্যে রয়েছে সামরিক ব্যয়, নিরাপত্তা খাতে ব্যয়, উৎপাদন হ্রাস, শরণার্থী সংকট এবং মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁকি। গবেষকরা বলছেন, এই ব্যয় বিশ্বের শিক্ষা খাতে বার্ষিক ব্যয়ের তুলনায় দশগুণ বেশি।

কিলেলি বলেন, ‘সহিংসতার প্রতিটি ডলার খরচ মানে স্বাস্থ্য, শিক্ষা কিংবা জলবায়ু পরিবর্তনের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে সেই ডলার না যাওয়া। এটি কেবল প্রাণহানির প্রশ্ন নয়, এটি ভবিষ্যতের সম্ভাবনাগুলোকেও নষ্ট করে দিচ্ছে।’

জিপিই জানায়, এই প্রেক্ষাপটেও কিছু দেশ শান্তি ধরে রেখেছে। আইসল্যান্ড টানা ১৭তম বছরের মতো বিশ্বের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে শীর্ষে রয়েছে। এ ছাড়া পর্তুগাল, নিউজিল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও সুইজারল্যান্ড রয়েছে শীর্ষ পাঁচে।

অন্যদিকে, শান্তিতে নিচের দিকে রয়েছে আফগানিস্তান, ইয়েমেন, দক্ষিণ সুদান ও সিরিয়া। এ দেশগুলো সহিংসতার উচ্চ মাত্রা, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তাহীনতার জন্য তালিকার তলানিতে অবস্থান করছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সহিংসতা ঠেকাতে এখনই কূটনীতি, উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড ও সামাজিক বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন। রিপোর্টে সুপারিশ করা হয়েছে, যুদ্ধ ও প্রতিরক্ষা খাতে অতিরিক্ত খরচ কমিয়ে শান্তি স্থাপনে বরাদ্দ বাড়ানো উচিত।

বিশ্লেষক মারিয়া কাস্তেলা বলেন, ‘শান্তি মানে শুধু যুদ্ধ বন্ধ হওয়া নয়। শান্তি মানে এমন এক সমাজ গড়ে তোলা, যেখানে মানুষ নিরাপদ বোধ করে, মতপ্রকাশ করতে পারে, এবং ভবিষ্যতের প্রতি আশাবাদী থাকে।’

বিশ্ব এখন এমন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে, যেখানে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা কি সংঘাত আর বিভাজনের পথে চলব, নাকি শান্তি ও উন্নয়নের জন্য দৃঢ় পদক্ষেপ নেব।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

গাজীপুরে চাঁদাবাজির অভিযোগে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আটক

ইউক্রেনে আবার অস্ত্র সহায়তা দিবে যুক্তরাষ্ট্র

পদ্মার ভয়াবহ ভাঙনে মুহূর্তে বিলীন ১৯ স্থাপনা

চট্টগ্রামে বহুতল ভবনে আগুন

যশোরে ইমামবাড়াতে চুরি, খোয়া গেছে দেড়শ বছরের পাঞ্জা

সহপাঠীকে মারধর, তা’মীরুল মিল্লাতের ৫ শিক্ষার্থীকে টিসি

১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন : ফল নিয়ে অসন্তোষ, হাইকোর্টের নির্দেশ বাস্তবায়নের দাবি

লক্ষ্মীপুর জেলা যুবদলের সভাপতি হুমায়ুন, সম্পাদক লিংকন

বিএনপির সঙ্গে চীনের রাষ্ট্রদূতের বৈঠক

ট্রাম্পকে নোবেল পুরস্কারে মনোনীতের কারণ চিঠিতে ব্যাখ্যা করলেন নেতানিয়াহু

১০

হবিগঞ্জ-সিলেট বাস চলাচল বন্ধ

১১

ঘুষের বিনিময়ে আসামিকে ছেড়ে দিলেন এএসআই

১২

সিরিজ জয়ের মঞ্চে বাংলাদেশের সামনে বৃষ্টির শঙ্কা

১৩

ভারতে ভার্চুয়াল ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়াকে গুরুত্ব দিচ্ছে নতুন প্রজন্ম

১৪

উত্তাল সমুদ্রে নেমে ভেসে গেলেন চবির ৩ শিক্ষার্থী

১৫

আইপিএল জেতা ভারতীয় ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ

১৬

নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ট্রাম্পকে নেতানিয়াহুর মনোনয়ন

১৭

নিউইয়র্ক পুলিশের সার্জেন্ট হলেন সিলেটের মারুফ

১৮

ঢাকাসহ ৪ বিভাগে অতি ভারি বর্ষণের পূর্বাভাস

১৯

ইতিহাস গড়ার ম্যাচে কেমন হতে পারে বাংলাদেশের একাদশ?

২০
X