‘কুল’ মানে কী? কে কাকে কুল বলেন? এসব প্রশ্নের অনেকটাই উত্তর পাওয়া গেল এক সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক গবেষণায়। গবেষণায় উঠে এসেছে, বিশ্বের নানা সংস্কৃতি ও পরিবেশের মধ্যে ‘কুল’ বা আকর্ষণীয় মানুষের মধ্যে সাধারণ কিছু গুণ খুঁজে পাওয়া যায়, যেগুলো প্রায় একরকমই। তথ্য সিএনএনের।
গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িকী জার্নাল অব এক্সপেরিমেন্টাল সাইকোলজিতে। গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন চিলির অ্যাডলফো ইবানেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক টড পেজ্জুতি।
কুল হওয়ার ৬টি প্রধান বৈশিষ্ট্য
বিশ্বজুড়ে প্রায় ছয় হাজার মানুষের ওপর ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত চলা এ গবেষণা চালানো হয়। এতে দেখা যায়, ‘কুল’ মানুষের মধ্যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় এই ছয়টি বৈশিষ্ট্য:
# বহির্মুখিতা # ভোগবাদিতা # ক্ষমতা ও প্রভাব খাটানোর প্রবণতা # দুঃসাহস # খোলামেলা মনোভাব # আত্মনির্ভরতা
অন্যদিকে, যারা ‘ভালো’ মানুষ হিসেবে বিবেচিত হন, তাদের গুণগুলো হয় ভিন্ন। তারা বেশি দায়িত্বশীল, সহানুভূতিশীল, ঐতিহ্যপন্থি এবং নিয়মমাফিক জীবনযাপনকারী।
১২টি দেশ, একই রকম ‘কুলনেস’
এই গবেষণায় অংশ নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত, কোরিয়া, মেক্সিকো, জার্মানি, চিলি, নাইজেরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুরস্ক ও স্পেনের অংশগ্রহণকারীরা। প্রত্যেককে অনুরোধ করা হয়, তাদের দৃষ্টিতে একজন ‘কুল’ ব্যক্তি এবং একজন ‘ভালো’ ব্যক্তির কথা চিন্তা করতে। এরপর তারা দুটি মাপকাঠিতে সেই ব্যক্তিদের গুণাবলি মূল্যায়ন করেন—বিগ ফাইভ পারসোনালিটি স্কেল ও পোরট্রাইট ভ্যালুস কয়েশ্চেনিয়ার।
সব দেশেই ফল প্রায় একই ধরনের। গবেষক টড পেজ্জুতি বলেন, ‘চীন, চিলি, যুক্তরাষ্ট্র—যেখানেই যান না কেন, কুল মানুষকে চেনার প্যাটার্নটা একই। এটি আমাদের একটা গভীর মনস্তাত্ত্বিক চাহিদার ইঙ্গিত দেয়।’
কুল মানেই সবসময় ‘ভালো’ নয়
গবেষণার সহ-নেতা, অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্যালেব ওয়ারেন বলেন, ‘কেউ কুল হতে গেলে সাধারণত একটু পছন্দনীয় হতে হয়, যা ভালো মানুষের একটি বৈশিষ্ট্য। তবে কুলনেসের মধ্যে এমন কিছু দিকও থাকে যা সবসময় নৈতিকভাবে ইতিবাচক নয়। যেমন, ক্ষমতার মোহ বা ভোগবাদিতা।’
গবেষকরা আরও জানান, কুল হওয়া শেখানো যায় না। পেজ্জুতির মতে, এই বৈশিষ্ট্যগুলো সাধারণত স্বভাবজাত এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এগুলো পরিবর্তন করা কঠিন।
কুল নাকি বিতর্কিত?
গবেষণার আলোকে একজন কুল মানুষের উদাহরণ দিতে গিয়ে পেজ্জুতি বলেন, আমার মাথায় প্রথমেই ইলন মাস্ক আসেন।
তিনি বলেন, মাস্ক বিতর্কিত হলেও তার মধ্যে কুলনেসের ছয়টি বৈশিষ্ট্যই রয়েছে—প্রভাবশালী, সাহসী, আত্মনির্ভর, খোলামেলা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অত্যন্ত সক্রিয়। এমনকি জনপ্রিয় পডকাস্ট ‘দ্য জো রোগান এক্সপেরিয়েন্স’-এ গাঁজা সেবন করে নিজের ভোগবাদিতার চিত্রও তুলে ধরেছেন মাস্ক।
ভবিষ্যৎ গবেষণার দরজা খোলা
পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জোনা বার্গার বলেন, কুলনেস নিয়ে আলোচনা অনেক হয়েছে, কিন্তু গবেষণা খুব কম। এই গবেষণা একটি বড় শূন্যতা পূরণ করেছে।
অন্যদিকে, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক জন ফ্রিম্যান মনে করেন, কুলনেসকে এখন সময় এসেছে ‘ভালো’ ও ‘খারাপ’ দুই দিক থেকেই বিশ্লেষণ করার।
তার ভাষায়, এই শব্দটা এখন শুধু ব্যক্তিত্বের নয়; বরং সামাজিক ইঙ্গিতও। কে প্রভাবশালী, কার সঙ্গে কে যুক্ত—এসব কিছু বোঝাতে ব্যবহৃত হয় কুল শব্দটি। সোশ্যাল মিডিয়া আর ইনফ্লুয়েন্সার কালচারে এর প্রাসঙ্গিকতা আরও বেড়েছে।
সংক্ষেপে বললে, সাহস, স্বাধীনতা, উন্মুক্ততা এবং দৃষ্টিভঙ্গির প্রভাব—এই চারটি মূল স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে আছে ‘কুল’ হওয়ার ধারণা। যদিও এর কিছু গুণ বিতর্ক তৈরি করতে পারে, তবুও আজকের বিশ্বে কুলনেস অনেকের কাছেই এক ধরনের লক্ষ্য হয়ে উঠেছে।
মন্তব্য করুন