বিশ্বের অন্যতম জনবহুল শহর চীনের রাজধানী বেইজিং। জাঁকজমক ও কোলাহলপূর্ণ এই শহরে রয়েছে একাধিক সরকারি ভবন। তবে জানেন কি, এই শহরের মাটির নিচেও রয়েছে আরেকটি ‘গোপন’ শহর। সেই শহরে মাটির ওপরের মানুষের ভিড় বা আলোর ছটা নেই। তারা বাঁচেন অন্ধকারে।
অদ্ভুত এ শহরের নাম ডিক্সিয়া চেং। এর আয়তন ৭৮ বর্গকিলোমিটার। ডিক্সিয়া চেংয়ের অবস্থান বেইজিংয়ের ১০ থেকে ১৮ মিটার গভীরে। সেখানে বাস করেন ‘র্যাট ট্রাইবাল’ নামে একটি জাতি। মাটির নিচে বাস করায় তারা এ নামে পরিচিত।
জানা যায়, ১৯৬৯ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনের মধ্য উত্তেজনা চরমে ওঠে। এমন সময় এই ভূগর্ভস্থ শহর নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান মাও সে তুং। খাদ্য সঞ্চয় ও যুদ্ধের জন্য এ শহরকে প্রস্তুত করতে বলেন তিনি।
যেই কথা—সেই কাজ। ডিক্সিয়া চেং শহরের নকশা এমনভাবে তৈরি করা হয়েছিল, যাতে শহরটিকে পরমাণু ও জৈব রাসায়নিক হামলা থেকে রক্ষা করা যায়। এমনকি বেইজিংয়ের ওপর হামলা হলে দেশটির নেতা, সরকারি কর্মকর্তা ও সাধারণ মানুষ যাতে আশ্রয় নিতে পারেন, সেই জন্য একাধিক প্রবেশপথও তৈরি করা হয়েছিল। এ শহরে একসঙ্গে প্রায় ৬০ লাখ মানুষ বাস করতে পারবেন বলে তখন দাবি করেছিল চীনা সরকার।
তবে বর্তমানে চীনের রাজধানী শহরের বিপুল জনসংখ্যা, সীমিত জমি ও ভবনের দাম আকাশচুম্বী হওয়ায় প্রায় ১০ লাখ মানুষ এই ভূগর্ভস্থ শহরে বসবাস করেন।
ডিক্সিয়া চেংয়ে ঢোকার জন্য প্রায় ৯০টি প্রবেশপথ রয়েছে। সেগুলো তিন তলা ও শহরের সব কেন্দ্রীয় সরকারি ভবনের সঙ্গে যুক্ত। তবে এসবের মধ্যে অনেক এখনো লোকচক্ষুর আড়ালে রয়েছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের খবরে বলা হয়, দিনের আলো না গেলেও এ শহরে দোকানপাট, খেলাধুলার জায়গা, রেস্তোরাঁ, সেলুন, থিয়েটার ও অন্য সব নাগরিক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। বছরের পর বছর ধরে এই শহর পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণের জায়গাও হয়ে উঠেছে।
শহরের বাড়ির ভাড়া খুব কম হওয়ায় বাইরে থেকে কাজের খোঁজে আসা অনেক তরুণ-তরুণী প্রথমে ডিক্সিয়া চেংয়ে আশ্রয় নেন। টাকা জমিয়ে বেইজিংয়ের বুকে সুস্থ জীবনযাপন করার আশায় বুক বেঁধে অনেকে সারা জীবনই এ শহরে কাটিয়ে দেন।
মন্তব্য করুন