পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় বেলুচিস্তান প্রদেশে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিদায়াতুল্লাহ বুলেদিকে তার নিজ বাসভবনে ঢুকে হত্যা করেছে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। শুক্রবার (৩০ মে) রাজ্যের সুরাব শহরে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
সুরাব জেলা প্রশাসনের মুখপাত্র শহীদ রিন্দ এক বিবৃতিতে বলেন, শুক্রবার সুরাব শহরের একটি ব্যাংক লুট করা হয়েছে, বেশ কয়েকটি সরকারি দপ্তরে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়েছে এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিদায়াতুল্লাহ বুলেদির বাড়িতে ঢুকে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এটি রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে একটি ঘৃণ্য ও সংগঠিত আক্রমণ।
শনিবার (৩১ মে) পাকিস্তানের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ডনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।
রিন্দ হামলার জন্য সরাসরি কোনো সংগঠনের নাম উল্লেখ না করলেও দাবি করেন, হামলাকারীরা ভারতের মদদপুষ্ট। তিনি জানান, সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথবাহিনী ইতোমধ্যে অভিযানে নেমেছে এবং দোষীদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
তবে ঘটনার হালনাগাদ তথ্য জানতে ডন কর্তৃপক্ষ সুরাব পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
ভৌগোলিক আয়তনের দিক থেকে পাকিস্তানের বৃহত্তম ও খনিজসমৃদ্ধ প্রদেশ বেলুচিস্তানে বিচ্ছিন্নতাবাদ একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা। প্রদেশটির জনগণের একটি বড় অংশ দীর্ঘদিন ধরেই পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের দাবি জানিয়ে আসছে।
এই অঞ্চলের স্বাধীনতাকামী আন্দোলনের সূচনা মূলত ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশ ভেঙে ভারত ও পাকিস্তান স্বাধীনতা অর্জনের পরপরই ঘটে। বেলুচিস্তানে সেই সময় ৪টি করদ রাজ্য ছিল—মাকরা, লাস বেলা, খারান ও কালাত। এর মধ্যে ৩টি রাজ্য পাকিস্তানে যোগ দিলেও কালাতের তৎকালীন রাজা আহমেদ ইয়ার খান বালোচ প্রথমে পাকিস্তানে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানান।
পরে ১৯৪৮ সালে তিনি যোগদানের সিদ্ধান্ত নিলেও তার ভাই প্রিন্স আগা আবদুল করিম খান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে সশস্ত্র সংগ্রামের সূচনা করেন। সেই থেকে শুরু হওয়া বেলুচ বিদ্রোহ এখনও থামেনি।
বর্তমানে বেলুচিস্তানে স্বাধীনতাকামী দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সক্রিয় হলো বালোচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)। সংগঠনটি নিয়মিত পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর হামলা চালিয়ে আসছে।
বেলুচিস্তান প্রদেশের একটি অংশ ইরান ও আফগানিস্তানেও বিস্তৃত। ফলে একটি স্বাধীন বেলুচিস্তান গঠিত হলে তার প্রভাব শুধু পাকিস্তুানে নয়, ইরান ও আফগানিস্তানেও পড়বে। এই কারণেই এই দুই প্রতিবেশী দেশ বেলুচ স্বাধীনতার পক্ষে কোনো অবস্থান নেয় না।
অন্যদিকে পাকিস্তানের দাবি, ভারতের সহায়তায়ই বেলুচিস্তানে সন্ত্রাস ও বিচ্ছিন্নতাবাদ ছড়ানো হচ্ছে। গত মাসে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জনসংযোগ দপ্তর (আইএসপিআর) প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী অভিযোগ করেন, ভারত নিয়মিতভাবে বিএলএ-কে অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করছে, যার উদ্দেশ্য পাকিস্তানকে অভ্যন্তরীণভাবে অস্থিতিশীল করা।
বেলুচিস্তানের স্বাধীনতার দাবিকে কেন্দ্র করে চলমান সহিংসতা এখনো কোনো স্থায়ী সমাধানের পথ খুঁজে পায়নি। স্বাধীনতাকামী দলগুলোর অভ্যন্তরীণ মতভেদ, নেতৃত্বের সংকট ও আন্তর্জাতিক সমর্থনের অভাব—সব মিলিয়ে তাদের আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়লেও হঠাৎ করেই কোনো বড় হামলা বেলুচিস্তানের অস্থির বাস্তবতাকে আবারও সামনে এনে দেয়।
হিদায়াতুল্লাহ বুলেদির ওপর হামলা সেই বাস্তবতারই আরেকটি রক্তাক্ত স্মারক।
মন্তব্য করুন