বিশ্বজুড়ে নতুন করে উত্তেজনার আগুন জ্বলে উঠেছে। সম্ভাবনা আছে, চীন হয়তো আক্রমণ চালিয়েছে তাইওয়ানে, অথবা রুশ বাহিনী পেরিয়ে গেছে পূর্ব ইউরোপের কোনো ন্যাটো সদস্য দেশের সীমানা।
এমন একটি জটিল ও উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে ব্রিটেনের বড় বড় কোম্পানিগুলো যুদ্ধকালীন প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। এ প্রস্তুতিতে তাদের পরামর্শ দিচ্ছেন সাবেক ব্রিটিশ সেনাকমান্ডার এবং বর্তমানে গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা পরামর্শক সংস্থা ‘সিবিলাইন’র প্রধান জাস্টিন ক্রাম্প।
সোমবার (০২ জুন) দ্য টেলিগ্রাফের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে ক্রাম্প জানান, ব্রিটেনের বড় সুপারমার্কেট চেইন থেকে শুরু করে সিলিকন ভ্যালির প্রযুক্তি জায়ান্ট—অনেকেই তার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। কারণ তারা বিশ্বাস করছেন, বৈশ্বিক কোনো বড় সংঘাত আর মাত্র দুই বছরের দূরত্বে।
আমরা এখন এমন এক বিশ্বে বসবাস করছি যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে অস্থিতিশীল ও বিপজ্জনক, বললেন ক্রাম্প। ইরানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা, চীনের তাইওয়ান নিয়ে হুমকি, রাশিয়ার ইউক্রেন ও পূর্ব ইউরোপে আগ্রাসন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি অনাস্থা—সব মিলিয়ে ২০২৭ সাল হতে পারে ইতিহাসের সবচেয়ে সংকটপূর্ণ সময়।
ক্রাম্প আরও উল্লেখ করেন, রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন ও চীনের শি চিন পিং যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর পূর্ণাঙ্গ সামরিক পুনর্গঠন ২০৩০ সালের আগেই মোকাবিলা করতে চাইছেন। তাদের মনে এখন ঘড়ির কাঁটা চলছে, তিনি বলেন।
২০২৭ সালে বড় ন্যাটো সামরিক মহড়া, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক প্রস্তুতি লক্ষ্য, এবং ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বিলম্ব—সব মিলিয়ে যুদ্ধকালীন প্রস্তুতিতে ব্রিটেনের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর ভাবনা বদলাতে শুরু করেছে।
ব্রিটেনের বড় বড় প্রতিষ্ঠান যেমন সুপারমার্কেট চেইন ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো এখন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে কীভাবে পরিচালিত হবে সে পরিকল্পনা করছে। বিশেষ করে চীনের সঙ্গে সংঘাত হলে সরবরাহ শৃঙ্খল কোথায় কোথায় ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।
ক্রাম্প বলেন, যুদ্ধ হলে শুধু পণ্য পরিবহন বন্ধ হবে না, বড় ঝুঁকি হলো ডিজিটাল সিস্টেম ভেঙে পড়া। যদি দোকানে পণ্যের তথ্য না থাকে, লেনদেন সম্ভব না হয়, তাহলে ব্যবসা চালানো অসম্ভব হয়ে যাবে।
যদি যুদ্ধ ব্রিটেনে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে রিজার্ভ বাহিনী ও সাবেক সৈনিকদের পুনরায় নিয়োগ দিতে হতে পারে, যা কর্মক্ষেত্রে বড় ধরনের শূন্যতা তৈরি করবে। সরকার প্রয়োজনে পুরুষদের পুনরায় সেনাবাহিনীতে ডাকতে পারে, যদিও সেটি তখনই সম্ভব হবে যখন পরিস্থিতি অত্যন্ত মারাত্মক হবে।
করোনাকালীন সময়ে যেমন হুড়োহুড়ি ও সরবরাহ শৃঙ্খলে ভাঙন দেখা গিয়েছিল, তেমনি বড় ধরনের যুদ্ধকালীন সংকটেও তেমন পরিস্থিতির আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে, আন্তর্জাতিক সরবরাহ শৃঙ্খল যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর অভাব দেখা দিতে পারে।
সম্প্রতি স্পেন-পর্তুগালে হওয়া বিদ্যুৎ বিভ্রাট যুদ্ধকালীন বিপদের পূর্বাভাস দেয়। সেখানে ব্রিটেনে আগত টমেটোবাহী ট্রাকগুলো স্পেনের সিস্টেমে লক হয়ে পড়ে, যেহেতু বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে ট্রাকের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া যায়নি। এমন ঘটনা বিশ্বে প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবসায় বড় ধরনের ঝুঁকি সৃষ্টি করে।
ক্রাম্পের মতে, মানুষের একটা ‘নর্মালসি বায়াস’ থাকে—তারা ধরে নেয় সবকিছু আগের মতোই থাকবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, যুদ্ধ, মহামারি, বা বড় ধরনের বিদ্যুৎ বিভ্রাটের মতো ঘটনা এখন নতুন স্বাভাবিক।
তিনি বলেন, অনেক ব্যবসায়ী আগে ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধকালীন প্রস্তুতি নিতে চাইতেন না, কারণ ব্যর্থ হলে তার ক্যারিয়ারে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। কিন্তু অনুশীলনের উদ্দেশ্যই হলো ভুল থেকে শেখা।
জাস্টিন ক্রাম্প ও তার মতো অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুদ্ধ এখন আর কোনো কাল্পনিক গল্প নয়—এটি হতে পারে বাস্তব জীবনের ভয়াবহ বাস্তবতা। তাই ব্যক্তি, সরকার এবং করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে। কারণ যুদ্ধ শুরু হলে আর সময় থাকবে না।
মন্তব্য করুন