কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১২ আগস্ট ২০২৩, ০৬:২১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

টায়ারে আগুন নিয়েও জীবন বাঁচাল ‘পিংকির ট্রাক’

আইভারসন পিংকি ও তার ট্রাক। ছবি : বিবিসি
আইভারসন পিংকি ও তার ট্রাক। ছবি : বিবিসি

গত কয়েক দিনের দাবানলে বিপর্যস্ত যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপ। এ দাবানলটিকে ইতিহাসের ভয়াবহ বিপর্যয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যেখানে অনেকের জীবন বাঁচিয়েছে পিংকির ট্রাক। যার মাধ্যমে অনেকেই পৌঁছেছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। এর মূল নায়িকার হিসেবে কাজ করেছেন পিংকি নামের এক নারী। খবর বিবিসির।

শনিবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লিনেট পিংকি আইভারসন নামের এক নারী দাবানল থেকে অনেকের জীবন বাঁচিয়েছেন। তিনি তার জনপ্রিয় ট্রাকে করে তাদের উদ্ধার করেন। গত কয়েক বছর ধরে বিচিত্র সাজের জন্য পিংকির ট্রাক বেশ জনপ্রিয়। তিনি এটিকে নিজের মতো করে সাজিয়েছেন। এ ছাড়াও তার একটি খরগোশ রয়েছে।

পিংকি জানান, তার এ ট্রাক অনেকের জীবনে নতুন করে বাঁচার সুযোগ দিয়েছে। মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) তিনি তাদের দাবানলের ভেতর আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছে দিয়েছেন।

বিবিসিকে নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমি এমনভাবে আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছি যখন আমার গাড়ির টায়ারে আগুন জ্বলছিল। আমি অনেকের জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করেছি। তবে আমি সবাইকে বাঁচাতে পারেনি। এসময় তিনি নিজের দুর্বিষহ স্মৃতি ভুলতে পারছেন না বলেও জানান।

ওই নারী জানান, আগুনের শুরুতে তিনি বাসায় পানি দিচ্ছিলেন। কিন্তু ক্রমে আগুন বাড়তে থাকলে তিনি অসহায় হয়ে পড়েন। তার চোখের সামনে বাড়িঘর পুড়ে যায়। এ সময় এক নারী বের হতে পারেননি। এ ছাড়া অন্য আরেকজন সাহায্য চেয়ে চিৎকার করছিলেন। তখন তিনি পুরো কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। তিনি নিজের গাড়ির চাবি আর টিনিকে (খরগোশ) নিয়ে বের হতে পেরেছিলেন।

পিংকি জানান, আগুনের ধোঁয়ার মধ্যে বের হওয়ার সময় আমি ছোট একটা কিছু বুঝতে পেরেছিলাম। এটি আমার নোটবুকের সাথে জড়িয়ে ছিল। পরে তিনি আশ্রয়কেন্দ্রে নোটবুকে কাজ করার সময় সেটাকে ভয়ঙ্কর বিচ্ছু হিসেবে আবিষ্কার করেন। বিচ্ছুটি বিষাক্ত হওয়ায় তার দংশনে মৃত্যুরও আশঙ্কা ছিল।

৭০ বছর বয়সী আইভারসন গত ছয় বছর ধরে লাহায়নিয়ার বৃদ্ধ ও অক্ষমদের একটি হাউজিং কমিউনিটি বসবাস করে আসছেন। তিনি জীবনে আরেকটিবার বাঁচার সুযোগ পাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

আশ্রয়কেন্দ্রে আলাপকালে স্টেভ স্ট্রেয়েড বলেন, তারেদ বাসায় একজন অক্ষম ব্যক্তি আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কয়েকজনের সাহায্য চেয়েছেন। কিন্তু তাদের কেউ অনুরোধে সাড়া দেয়নি। এরপর তার অনুরোধে সাড়া দিয়ে আমিই তাকে উদ্ধার করতে যাই।

তার মতো আরও অনেকেই সাইকেলে করে আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছেছেন। দ্বীপটির এমন অনেকেই রয়েছেন যারা ৬০ বছর বয়সে সাইকেলে করে আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছেন। এ সময় আগুনের লেলিহান শিখা সেখানে ১০ মিটার উচ্চতায় পৌঁছেছিল।

উল্লেখ্য, গত কয়েক দিন ধরে ভয়াবহ দাবানলে পুড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বীপ অঙ্গরাজ্য হাওয়াইয়ের মাউই দ্বীপ। কয়েক দিনের দাবানলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৮০ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া নিখোঁজ রয়েছে আরও এক হাজার মানুষ। দ্বীপ অঙ্গরাজ্যটির ইতিহাসে এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ আগে কখনো আঘাত হানেনি।

এর আগে ১৯৬০ সালে হাওয়াইয়ের সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হেনেছিল। তখন সুনামিতে রাজ্যের ৬১ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, গত মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) রাতে হাওয়াইয়ের মাউই দ্বীপ এবং বিগ আইল্যান্ডে দাবানল শুরু হয়। ভয়াবহ এই দাবানলের কারণ এখনো জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে হারিকেন থেকে সৃষ্ট ঝোড়ো হাওয়া ও শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে আগুন এত ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।

হাওয়াইয়ের গভর্নর যশ গ্রিন বলেন, মাউই দ্বীপের পশ্চিম উপকূলীয় পর্যটন শহর লাহাইনা পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এমন ধ্বংসযজ্ঞ বাসিন্দারা আগে কখনো দেখেননি।

এর আগে স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার বিকেলে হাওয়াইয়ের গভর্নর যশ গ্রিন এই দাবানলকে সেখানকার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলে অভিহিত করে দিনটিকে হৃদয়বিদারক বলে বর্ণনা করেন।

গ্রিন বলেন, লাহাইনার ৮০ শতাংশ পুড়ে গেছে। প্রায় ১ হাজার ৭০০টি ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করেন তিনি। দাবানলের কারণে ঠিক কতজন নিখোঁজ রয়েছেন, তার প্রকৃত সংখ্যা কর্তৃপক্ষের জানা নেই। তবে সংখ্যাটি এক হাজারের নিচে হবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যোগাযোগব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় লোকজনকে খুঁজে বের করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতোমধ্যে দ্বীপটি থেকে ১৪ হাজারেরও বেশি পর্যটককে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

আগুনে শত শত বাড়িঘর পুড়ে যাওয়ায় কয়েক হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েছে। তাদের বেশিরভাগই লাহাইনার বাসিন্দা। তাদের জন্য ২ হাজার ঘরের ব্যবস্থা করতে বলেছেন গভর্নর গ্রিন। পাশাপাশি সম্ভব হলে গৃহহীনদের আশ্রয় দিতে নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। দ্বীপের বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ ব্যাহত হয়েছে। দুই হাজারের বেশি মানুষ বৃহস্পতিবার রাতে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করেছে। পশ্চিম মাউই শহরে প্রায় ১১ হাজার মানুষ বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সব বলে দেওয়ার হুমকি দিলেন ঢাবি ভিসি

পাওনা ৭০০ টাকায় কাল হলো রিকশাচালকের

যুবদল নেতাকে কুপিয়ে হত্যা, ২ বন্ধু আটক

 অমর্ত্য সেনকে কি বাংলাদেশে বের করে দেবে ভারত?

রাজধানীতে গার্মেন্টস শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ , যান চলাচল বন্ধ

ডিভোর্সের গুঞ্জন, মুম্বাই বিমানবন্দরে গোবিন্দ

যমুনা ব্যাংকে চাকরি, আবেদন করুন আজই

উপদেষ্টারা অসহায়, সবকিছু নির্ধারণ করে আমলারাই : ফখরুল

ড. ইউনূসের কারণে বিশেষ সুবিধা পেয়েছে বাংলাদেশ : প্রেস সচিব

নির্বাচন নিয়ে অনৈতিক চাপ দিলে পদত্যাগ করব : সিইসি

১০

যাতায়াত সুবিধাসহ আরএফএল গ্রুপে চাকরির সুযোগ

১১

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে ইরানের সেনাপ্রধানের হুংকার

১২

বাজার স্থিতিশীলতার লক্ষ্যে ইরানের অনুকরণে ব্যবস্থার ঘোষণা সিরিয়ার

১৩

সকালে সময় বাঁচাতে রোজ পাউরুটি খাচ্ছেন? চিকিৎসকদের স্পষ্ট সতর্কবার্তা

১৪

ঈদে মিলাদুন্নবী কবে, জানা যাবে সন্ধ্যায়

১৫

নির্বাচনের আগেই লুট হওয়া সব অস্ত্র উদ্ধার করা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

১৬

সন্ধ্যা হলেই যে ১৯ জায়গা বেশি ‘বিপজ্জনক’

১৭

কেশবপুর সংসদীয় আসন অপরিবর্তিত রাখার দাবিতে প্রেসক্লাবের উদ্যোগে মানববন্ধন

১৮

‘বেশি সময় লাগেনি, ৮-১০ সেকেন্ডে কাজ সেরেছি’

১৯

বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ডস সিরিজ নিয়ে মিলল বড় সুখবর

২০
X