যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দরে সম্প্রতি নজরে আসা নিরাপত্তা বিভ্রাটের পর বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক আধুনিকায়নের ঘোষণা দিল ট্রাম্প প্রশাসন। বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে এক সংবাদ সম্মেলনে পরিবহনমন্ত্রী শন ডাফি এই নতুন প্রকল্প উন্মোচন করেন।
ডাফি একে ‘আগের প্রশাসনের জোড়াতালি-মার্কা মেরামতির বিপরীতে এক বৈপ্লবিক অগ্রগতি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তবে এই উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন হবে। অন্যদিকে ট্রাম্প প্রশাসন বর্তমানে বাজেট কাটছাঁটের মধ্যে দিয়ে বড় অঙ্কের কর ছাড় দিচ্ছে।
অনেকদিন ধরেই নিয়ন্ত্রণকর্মীদের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রের বিমান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় এখনো পুরোনো রাডার, উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়া যন্ত্রপাতি এমনকি ফ্লপি ডিস্কে চলা কম্পিউটার ব্যবহার করা হচ্ছে।
২৮ এপ্রিল নিউ জার্সির নিউ আর্ক লিবার্টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এমনই এক বিভ্রাট ঘটে, যখন ফিলাডেলফিয়ার নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে বিমানগুলোর সঙ্গে প্রায় ৯০ সেকেন্ডের জন্য রাডার ও রেডিও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এর আগে জানুয়ারিতে ওয়াশিংটনের রিগান ন্যাশনাল বিমানবন্দরের আকাশে এক যাত্রীবাহী বিমান ও একটি সামরিক হেলিকপ্টারের সংঘর্ষ ঘটে, যা ২০০৯ সালের পর সবচেয়ে গুরুতর বাণিজ্যিক বিমান দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এই পরিস্থিতির জন্য সাবেক পরিবহনমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন বাইডেন প্রশাসনকে দায়ী করেন ডাফি। তিনি জানান, ৩০ এপ্রিল ট্রাম্প মন্ত্রিসভা বৈঠকে তিনি এ বিষয়টি তুলে ধরেন।
সেখানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, আমরা বড় কোনো ঠিকাদার আনব— হতে পারে রেথিয়ন, হতে পারে আইবিএম। কেউ একজন দায়িত্ব নেবে এবং একাই পুরো সিস্টেমের আধুনিকায়ন সম্পন্ন করবে। তারা আর্থিকভাবে শক্তিশালী, গ্যারান্টি দেয়, এবং একসঙ্গে পুরো প্রযুক্তি সংযুক্ত করবে।
যদিও প্রকল্পটির বিস্তারিত এখনও প্রকাশ করা হয়নি, পরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে একে ‘পরিবহন খাতে এক সোনালি যুগের সূচনা’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে, ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) জানিয়েছে, নিউ আর্ক বিমানবন্দরে সম্প্রতি সৃষ্ট সিস্টেম বিভ্রাটের পর আগমন ও প্রস্থান হার কমিয়ে আনা হয়েছে। একইসঙ্গে ব্যাকআপ সরঞ্জাম সংযোজন ও নিয়ন্ত্রণকর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এফএএ’র সাবেক কর্মকর্তা ও এমব্রি-রিডল অ্যারোনটিক্যাল ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক মাইকেল ম্যাককরমিক বলেন, নিউ আর্কের সমস্যা যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে প্রচলিত হলেও এটি কিছু বিশেষ কারণে আরও জটিল। ২০২৪ সালে নিয়ন্ত্রণকর্মীদের লং আইল্যান্ড থেকে ফিলাডেলফিয়ায় সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তই মূলত সাম্প্রতিক টেলিকম বিভ্রাটের মূল কারণ বলে তিনি মনে করেন।
তিনি জানান, নিয়ন্ত্রণকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হলেও বিমানের অভ্যন্তরীণ প্রযুক্তির মাধ্যমে অন্যান্য বিমানের অবস্থান শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছিল। ফলে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি।
মন্তব্য করুন