অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অবদান রাখা সাবেক অধিনায়ক ও প্রথম পূর্ণকালীন প্রধান কোচ বব সিম্পসন আর নেই। সিডনিতে ৮৯ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া নিশ্চিত করেছে এই কিংবদন্তির মৃত্যুর খবর।
সিম্পসন শুধুমাত্র অসাধারণ একজন ব্যাটারই ছিলেন না, বরং ছিলেন দলগঠনের অন্যতম কারিগর। ১৯৫৭ থেকে ১৯৭৮ সালের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৬২টি টেস্ট খেলেছেন, যেখানে ৪৬.৮১ গড়ে রান করেছেন এবং ৭১টি উইকেট নিয়েছেন লেগস্পিনে। সেই সময়ের সেরা স্লিপ ফিল্ডারদের একজন হিসেবেও খ্যাতি ছিল তার।
মাত্র ১৬ বছর বয়সে নিউ সাউথ ওয়েলসের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক; ক্যারিয়ারে ২১ হাজারের বেশি রান ও ৩৪৯ উইকেট ছিল তার।
১৯৬৮ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে প্রথমবার অবসর নিলেও ১৯৭৭ সালে ওয়ার্ল্ড সিরিজ ক্রিকেটের সংকটে দেশকে সামাল দিতে আবারও অধিনায়ক হিসেবে ফেরেন সিম্পসন। ৪১ বছর বয়সে ভারতের বিপক্ষে ঘরের মাঠে এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বিদেশের মাটিতে দশটি টেস্টে দলকে নেতৃত্ব দেন।
বিশেষ করে অধিনায়ক হিসেবে তার রেকর্ড ছিল দুর্দান্ত— টেস্টে করা ১০টি সেঞ্চুরির সবগুলোই এসেছে অধিনায়কত্ব হাতে থাকার সময়। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যানচেস্টারে করা ৩১১ রানের ইনিংস এখনো কিংবদন্তির কাতারে ধরা হয়।
১৯৮৬ সালে যখন ধারাবাহিক ভরাডুবিতে নিমজ্জিত ছিল অস্ট্রেলিয়া, সে সময় কোচের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন সিম্পসন। অধিনায়ক অ্যালান বর্ডারের সঙ্গে মিলেই গড়ে তোলেন শৃঙ্খলা ও কঠোর পরিশ্রম নির্ভর একটি সংস্কৃতি, যা পরবর্তীতে শেন ওয়ার্ন, মার্ক ওয়া, রিকি পন্টিং, ম্যাথু হেইডেনদের হাত ধরে বিশ্ব ক্রিকেটে আধিপত্য তৈরি করে।
তার সময়ে অস্ট্রেলিয়া ১৯৮৭ বিশ্বকাপ জেতে, ১৯৮৯ সালে অ্যাশেজ পুনরুদ্ধার করে এবং ১৯৯৫ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে পুনরায় বিশ্বের সেরা টেস্ট দল হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে।
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার চেয়ারম্যান মাইক বেয়ার্ড বলেন, ‘বব সিম্পসন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের অন্যতম মহান এক কিংবদন্তি। তার অবদান, নেতৃত্ব ও দূরদর্শী কোচিং আমাদের সোনালী যুগের ভিত্তি তৈরি করেছে।’
শেন ওয়ার্নও একাধিকবার বলেছেন, সিম্পসনের কাছ থেকেই তিনি আধুনিক লেগস্পিনের সূক্ষ্ম কৌশল শিখেছেন। ফিটনেস এবং ফিল্ডিংয়ের ওপর তার জোর দেওয়াই অস্ট্রেলিয়াকে দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের সেরা ফিল্ডিং সাইডে পরিণত করেছিল।
আইসিসি হল অব ফেম এবং অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট হল অব ফেমে অন্তর্ভুক্ত এই কিংবদন্তি ২০০৭ সালে ‘অর্ডার অফ অস্ট্রেলিয়া’ সম্মাননায় ভূষিত হন।
মন্তব্য করুন