আলাস্কায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠকের সময় নজিরবিহীন এক দৃশ্য ধরা পড়ে। জয়েন্ট বেস এলমেনডর্ফ-রিচার্ডসনে দুই নেতা লাল কার্পেট ধরে মঞ্চের দিকে এগোচ্ছিলেন। ঠিক সে সময় আকাশে উড়ে যায় একঝাঁক মার্কিন যুদ্ধবিমান, যার মধ্যে ছিল ভয়ংকর বি-২ স্পিরিট স্টেলথ বোমারু বিমানও।
ছোট একটি ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, বিমানগুলো ঠিক পুতিনের মাথার উপর দিয়েই উড়ে যায়। এ সময় পুতিন হালকা চমকে যান এবং আকাশের দিকে তাকান। বিস্ময়ের সঙ্গে তিনি মুহূর্তে বুঝতে পারেন, কেবল কাকতালীয় নয়- এটি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শক্তি প্রদর্শনের একটি নিখুঁত উদাহরণ।
বি-২ স্পিরিট স্টেলথ বোমারু বিমান মার্কিন সামরিক শক্তির অন্যতম প্রতীক। প্রতিটি বিমান প্রায় ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারের। এটি বিশ্বের তৈরি করা সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিমান। বিশেষ স্টেলথ প্রযুক্তির কারণে শত্রুপক্ষের রাডার এড়িয়ে বিমানটি সহজে লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছাতে পারে। এছাড়া বিমানটি আকাশেই জ্বালানি নিতে পারে, ফলে একটানা পৃথিবীর যে কোনো স্থানে পৌঁছে আঘাত হানতে সক্ষম।
বিমানটি সাধারণ ও পারমাণবিক উভয় ধরনের অস্ত্র বহন করতে পারে। একসঙ্গে ১৬টি বি-৮৩ পারমাণবিক বোমা বহন করার ক্ষমতা রাখে। এর ফলে, বিমানটি কেবল সামরিক মহড়ার জন্য নয়, বরং বাস্তব যুদ্ধক্ষেত্রেও এক ধরনের শক্তিশালী ভরসা হিসেবে কাজ করে।
চলতি বছরের জুনে ইরানের ফোর্দোসহ অন্যান্য পরমাণু স্থাপনায় হামলার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র এই বিমান ব্যবহার করেছে। সেখানে অন্তত ছয়টি ‘বাঙ্কার বাস্টার’ বোমা ফেলা হয়েছিল, যার প্রতিটির ওজন প্রায় ৩০ হাজার পাউন্ড। এই হামলার উদ্দেশ্য ছিল অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে সঠিক আঘাত হানা।
বি-২ বোমারু বিমানে দুজন পাইলট থাকলেও এর বেশিরভাগ কার্যক্রম চলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। এতে পাইলটদের ওপর চাপ কম থাকে। অত্যাধুনিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ও নির্ভুল নেভিগেশন প্রযুক্তির কারণে বিমানটি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে এবং শত্রু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এড়িয়ে যেতে পারে।
পুতিনের মাথার ওপরেই কেন বি-২ ওড়ানো হলো?
ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য ছিল ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধের জন্য কূটনৈতিক আলোচনায় বসা। তবে বৈঠকের শেষে কোনো উল্লেখযোগ্য ঘোষণা বা সমাধান সামনে আসেনি। তবুও এই মুহূর্তে, পুতিনের মাথার ওপর দিয়ে বিমান উড়ানোকে শুধু মহড়া হিসেবে দেখা যায় না। এটি ছিল একটি শক্তিশালী কৌশলগত বার্তা, যা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সক্ষমতা প্রদর্শন করে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই ধরনের প্রদর্শন কেবল রাজনৈতিক শাসক বা বৈঠককে ভয় দেখানোর জন্য নয়, বরং আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও শক্তি প্রদর্শনের একটি অঙ্গ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি রাশিয়ার মতো শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বীর ওপর চাপ সৃষ্টি করে এবং বিশ্বমঞ্চে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবকে জোরদার করে।
আলাস্কায় এই দৃশ্য স্পষ্টভাবে দেখিয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিক আলোচনার পাশাপাশি তার সামরিক ক্ষমতাকে কার্যকরভাবে প্রদর্শনের প্রস্তুতি রাখে। বি-২ স্পিরিট বিমান শুধু প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের প্রতীক নয়, এটি মার্কিন কৌশলগত প্রভাব, শক্তি প্রদর্শন এবং সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবিলার সক্ষমতার একটি প্রমাণ।
মন্তব্য করুন