নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনে যোগ দিতে গিয়ে কিছু বিড়ম্বনায় পড়ার অভিযোগ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ সময় ‘তিনটি নাশকতার’ অভিযোগ তুলে সেগুলোর তদন্ত দাবি করেছেন তিনি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান, তিনি ও ফার্স্ট লেডি ম্যানিলা ট্রাম্প একটি এস্কালেটরে ওঠার পর হঠাৎ করেই সেটি থেমে যায়, তিনি বক্তব্য রাখার সময় একটি টেলিপ্রম্পটারে সমস্যা দেখা দেয় এবং অডিটোরিয়ামের অডিও বন্ধ হয়ে যায়।
তবে জাতিসংঘের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অডিও সিস্টেমটি অনূদিত বক্তৃতা ইয়ারফোনের মাধ্যমে শোনার জন্য নকশা করে তৈরি করা।
এর আগে জাতিসংঘ জানিয়েছিল, ট্রাম্পের এক ভিডিওগ্রাফার এস্কালেটরে উল্টো দিক করে ওঠার সময় সম্ভবত একটি নিরাপত্তাব্যবস্থা সচল হয়ে উঠেছিল। তাতেই সেটি বন্ধ হয়ে যায়। আর যে টেলিপ্রম্পটারের কথা বলা হচ্ছে, তা মার্কিন প্রতিনিধিদলের ছিল।
এ বিষয়ে বিবিসি জানায়, ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প এসব ঘটনার সমালোচনা করে জানান, এসব ঘটনা নিয়ে অবিলম্বে তদন্ত শুরুর দাবি জানিয়ে তিনি জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বরাবর একটি চিঠি পাঠাচ্ছেন।
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) এক পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘গতকাল জাতিসংঘে সত্যি অপমানজনক ঘটনা ঘটেছে—একটা নয়, দুইটা নয়, তিন-তিনটা অত্যন্ত অশুভ ঘটনা। এটা কাকতালীয় নয়, জাতিসংঘে তিনটি নাশকতার ঘটনা ছিল এটি। তাদের নিজেদের নিয়ে লজ্জিত হওয়া উচিত।’
টাইমসে প্রকাশিত একটি নিবন্ধের তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন যে এস্কালেটর বন্ধ হয়ে যাওয়া নিয়ে জাতিসংঘের কর্মীরা মশকরা করেছে। তিনি এস্কালেটর থেমে যাওয়ার জন্য দায়ীদের গ্রেপ্তারের আহ্বান জানান।
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘এটি পুরোপুরি নাশকতা ছিল…এস্কালেটরের সব নিরাপত্তা টেপ সেইভ করা উচিত, বিশেষ করে জরুরি স্টপ বাটনটি। সিক্রেট সার্ভিসেস যুক্ত আছে।’
জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক ওয়াল্টজও ট্রাম্পের মতো আনুষ্ঠানিক তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। এসব ঘটনা ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
এক্স পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘আন্তর্জাতিক ফোরামে আমাদের নিরাপত্তা ও মর্যাদার ওপর হুমকি যুক্তরাষ্ট্র সহ্য করবে না। আমরা দ্রুত সহযোগিতা ও সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ চাই।’
বুধবার হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘কেউ একজন ইচ্ছাকৃতভাবে এস্কালেটরটি বন্ধ করে দিয়েছিল। জাতিসংঘের কেউ যদি প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডি পা দেওয়ামাত্র ইচ্ছাকৃতভাবে এস্কালেটর বন্ধ করে থাকে, তাদের চাকরিচ্যুত করে তাৎক্ষণিক তদন্ত শুরু করা দরকার।’
জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেসের মুখপাত্র স্টেফেন দুজারিক বলেছেন, ‘ট্রাম্প দম্পতি এস্কালেটর দিয়ে ওঠার সময় তাদের ভিডিওগ্রাফার তাদের দিকে মুখ করে কিন্তু এস্কালেটরের ওপরের দিকে পেছন ফিরে ভিডিও করার সময় ‘সম্ভবত’ তার অসাবধানতাবশত নিরাপত্তা ফাংশনটি চালু হয়ে গিয়েছিল।’
এস্কালেটরে এই বিপত্তির পর বক্তৃতা করার সময় ট্রাম্প আরও বেশি প্রাযুক্তিক সমস্যার মধ্যে পড়েন। তখন তিনি জানান, টেলিপ্রম্পারটি কাজ করছে না। অবশ্য তার বক্তৃতার শেষ দিকে সেটি ঠিক হয়।
এ নিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি শুধু এটাই বলতে পারি, এই টেলিপ্রম্পরটি যেই পরিচালনা করে থাকুক বড় ধরনের সমস্যার মধ্যে আছে।’
পরে জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছেন, ওই সময় হোয়াইট হাউস টেলিপ্রম্পারটি পরিচালনা করছিল। তারা তাদের নিজস্ব ল্যাপটপগুলো নিয়ে এসেছিল এবং সেগুলো জাতিসংঘের সিস্টেমের সঙ্গে প্লাগিং করে দেয়।
ট্রাম্প তার দীর্ঘ পোস্টে অডিও সমস্যার কথাও উল্লেখ করে বলেছেন, ‘অডিটোরিয়ামের ভেতরে সাউন্ড পুরোপুরি বন্ধ ছিল। দোভাষী ইয়ারপিস ব্যবহার করার আগ পর্যন্ত বিশ্বনেতারা কিছুই শুনতে পাননি।’
ট্রাম্পের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সাউন্ড সিস্টেম এমনভাবে নকশা করা হয়েছে, যেন লোকজন তাদের আসনে বসে ইয়ারপিসের মাধ্যমে অনূদিত ছয়টি ভাষায় বক্তব্য শুনতে পান।
মন্তব্য করুন