যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস ও কাজের জন্য স্বপ্নের পদ্ধতি ছিল ডিভি ভিসা (ডাইভারসিটি ভিসা)। কিন্তু ২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশ আর ডাইভারসিটি ভিসা কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার যোগ্য নয়। কারণ ২০০৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে ৫০ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি এই ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন। তবে ডিভি কর্মসূচি সেসব দেশের জন্য কার্যকর, যেসব দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের হার তুলনামূলকভাবে কম।
কিন্তু সম্প্রতি ‘২০২৬ সালে ডিভি লটারি তালিকায় নেই বাংলাদেশ’ শিরোনামে খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান ফ্যাক্টওয়াচ বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করে জানিয়েছে, ‘দৈনিক আজকের কণ্ঠ’ নামে একটি ফটোকার্ডে বলা হয়, ২০২৬ সালে ডিভি লটারি তালিকায় নেই বাংলাদেশ। মূলত এই প্রতিবেদন থেকেই ‘নতুন খবর’ হিসেবে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে খবরটি।
প্রতিবেদন ও পোস্টগুলোর কমেন্ট সেকশন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মন্তব্যকারীরা এটিকে ‘এ বছরেই প্রথম ঘটেছে’ ধরে নিয়ে বর্তমান সরকারের সমালোচনা করছেন।
সংস্থাটি বলছে, আজকের কণ্ঠের ফটোকার্ড ছাড়াও বিডি টালি (Bdtelly)’র একটি ফটোকার্ড শেয়ার দিয়ে পোস্টের ক্যাপশনে বলা হচ্ছে, ‘উন্নত জীবনযাত্রা ও ভালো কর্মসংস্থানের আশায় বিদেশে স্থায়ী হতে ইচ্ছুক তরুণ-তরুণীদের জন্য একটি বড় দুঃসংবাদ দিয়েছে আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্ট। বিশেষত আমেরিকায় স্থায়ী হওয়ার অন্যতম সুযোগ ‘ডাইভারসিটি ভিসা (ডিভি) লটারি’র ২০২৬ সালের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশকে।’
মূলত ডাইভারসিটি ভিসা (ডিভি) প্রোগ্রাম বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে শেষ হয়ে গেছে।
ঢাকার মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুসারে পাঁচ বছরে কোনো দেশ থেকে যদি ৫০ হাজারের বেশি অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করে, তাহলে সে দেশ আর ডিভি প্রোগ্রামে অংশ নিতে পারে না। অর্থাৎ ২০০৭ থেকে ২০১২ বাংলাদেশ থেকে এই পাঁচ বছরে ৫০ হাজারেরও বেশি অভিবাসী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন। সে কারণে বাংলাদেশ ডিভি প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের জন্য আর যোগ্য নয়।
বাংলাদেশের মূলধারার সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১২ সালের পর থেকে প্রায় প্রতি বছর ডিভি লটারি নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা যায়। অর্থাৎ এই ভিসা নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা এবং যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তালিকা নবায়ন-সংক্রান্ত কারণে প্রায় প্রতি বছর আলোচনায় উঠে আসে এই বিশেষ ভিসা।
কাজেই সবদিক পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১২ সালের পর থেকে বাংলাদেশের জন্য ডিভি লটারি কার্যক্রম কখনো চালু হয়নি। ফলে সঙ্গত কারণে, ‘২০২৬ সালের ডিভি লটারি কার্যক্রমে বাংলাদেশ নেই’, এই তথ্যকে ‘বিভ্রান্তিকর’ হিসেবে সাব্যস্ত করছে ফ্যাক্টওয়াচ।
এদিকে ডিভি ভিসা নিয়ে প্রায়ই প্রতারকরা নানা প্রচার চালানোর কারণে বাংলাদেশে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস সতর্কবার্তাও দিয়ে রেখেছে। তারা বলছে, ডাইভারসিটি ভিসা-ডাইভারসিটি অভিবাসী ভিসা জালিয়াতদের সম্পর্কে সচেতন হোন। ২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশ আর ডাইভারসিটি ভিসা কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার যোগ্য নয়।
ঢাকায় অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের নাগরিক ও অধিবাসীদের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ভিসার আবেদনের জন্য ব্যক্তিগত মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার কথা জানায়।
ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস নিয়মিতভাবে ভিসা যোগাড় করে দেওয়া বিষয়ক প্রতারণামূলক সহায়তার প্রস্তাব, ই-মেইল, চিঠি, ওয়েবসাইট, ফোন কল, এসএমএস এবং পত্রিকায় ছাপা বিজ্ঞাপনের বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করে থাকে। এসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের সঙ্গে যুক্ত নয় এবং এমন কোন সেবা দেওয়ার জন্য দূতাবাস তাদের অনুমোদন, সনদ বা অনুমতি দেয়নি। প্রতারণার শিকার হবেন না।
ফলে ২০২৬-এর নির্দেশনা অনুযায়ী, এ বছর ডিভি লটারিতে বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি দেশ অংশ নিতে পারবে না। বাদ পড়ার তালিকায় রয়েছে ভারত, পাকিস্তান, চীন, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলোও।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, এশিয়ার ৩১টি দেশ ও অঞ্চল ২০২৬ সালের ডিভি লটারিতে আবেদন করতে পারবে। এর মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান, বাহরাইন, ভুটান, ব্রুনাই, বার্মা (মিয়ানমার), কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইরাক, ইসরায়েল, জাপান, জর্ডান, কুয়েত, লাওস, লেবানন, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মঙ্গোলিয়া, নেপাল, উত্তর কোরিয়া, ওমান, কাতার, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, সিরিয়া, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, পূর্ব তিমুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ইয়েমেন।
মন্তব্য করুন