যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বয়স্ক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। পুরো নাম জোসেফ রবিনেট বাইডেন জুনিয়র। তবে তিনি জো বাইডেন হিসেবেই পরিচিত। ৮০ বছর বয়সী জো বাইডেনের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ৫০ বছরের। যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে ২০০৯-১৭ পর্যন্ত দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে ছিলেন তিনি। এরও আগে ৩৬ বছর ডেলাওয়্যার অঙ্গরাজ্যের সিনেটর ছিলেন প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ।
পেনসিলভানিয়ার একটি ক্যাথলিক পরিবারে ১৯৪২ সালের ২০ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন তিনি। চার ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় বাইডেন। বেড়ে ওঠেন স্ক্রানটন, নিউ ক্যাসল কাউন্টি ও ডেলাওয়ারের মধ্যেই। বাবা জোসেফ রবিনেট বাইডেন সিনিয়র আর আইরিশ বংশোদ্ভূত মা ক্যাথরিন ইউজেনিয়া ফিনেগান। অভাব-অনটনের কারণে তার পরিবার ডেলাওয়ারে ঠাঁই নেয়।
বাইডেন পড়াশোনা করেছেন আইন, ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে। সেরাকিউজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতক পাসের আগে ডেলাওয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়েন। সেই সময় থেকেই নেতৃত্ব দিতে বেশ পারদর্শী ছিলেন। তবে ছোটবেলা থেকে বাচনশক্তিতে সমস্যা ছিল বাইডেনের। এ জন্য স্কুলের সহপাঠীরা প্রায়ই তাকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করত।
ব্যক্তিজীবনে নানা দুর্ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন জো বাইডেন। স্বজন হারানো, স্ত্রী-সন্তান বিয়োগ, নিজের মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণসহ নানা সংকট আর ২০ বছর নিজের সঙ্গে সংগ্রাম করেন বাইডেন।
১৯৬৬ সালে সিরাকিউজ ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় বাইডেন নিলিয়া হান্টারকে বিয়ে করেন। তাদের ঘরে জোসেফ আর ‘বিউ’ বাইডেন, রবার্ট হান্টার ও নাওমি ক্রিস্টিনা নামের তিন সন্তান রয়েছে। ১৯৭২ সালে বড় দিনের আগে ক্রিসমাস ট্রি কিনতে গিয়ে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় নিলিয়া নিহত হন। সঙ্গে মেয়ে নাওমিও নিহত হন। নিলিয়াকে হারানোর ৫ বছরের মাথায় ১৯৭৭ সালে তার শিক্ষিকা বাইডেন জিল ট্রেসি জ্যাকবকে বিয়ে করেন। তাদের ঘরে অ্যাশলে ব্লেজার নামে এক কন্যাসন্তান রয়েছে।
শুরুতে জো বাইডেন আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও ১৯৬১ সাল থেকে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু হয়। পরে নগর পরিষদের একটি আসনে জয়ের মাধ্যমে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। ১৯৭০ সালে ডেলাওয়ারের নিউ ক্যাসল কাউন্টির কাউন্সিলম্যান নির্বাচিত হন জো বাইডেন। ১৯৭২ সালে সিনেটে বিজয় আসে তার।
সেই ১৯৭৩ থেকে টানা ২০০৯ সাল পর্যন্ত সিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বাইডেন। ২০০৮ সালে জো বাইডেনকে রানিংমেট হিসেবে বেছে নেন ওবামা। ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বারাক ওবামার আমলে টানা ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
এ ছাড়া আমেরিকার পররাষ্ট্র সম্পর্কিত সিনেট কমিটির সভাপতি ছিলেন জো বাইডেন। ২০০২ সালে ইরাকে যুদ্ধে যাওয়ার বিষয়ে তিনি অনুমোদন দেন। তবে এর আগে জর্জ ডব্লিউ বুশের সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বিরোধিতা করায় তোপের মুখে পড়েন তিনি। পরবর্তীতে তিনি বলকান গৃহযুদ্ধ, ইরাকে বোমা হামলা, আফগানিস্তান দখলদারিত্বে সমর্থন দেন। এতে নিজ দলের কাছেই সমালোচিত হন বাইডেন।
মন্তব্য করুন