গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা যত তীব্র হচ্ছে তত পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ইহুদিবাদ সমর্থনকারীদের প্রতি ক্ষোভ ও নিন্দা। এমন পরিস্থিতিতে যেসব আন্তর্জাতিক কোম্পানি ইসরায়েলের সেনাবাহিনী ও সরকারকে সমর্থন করে তাদের পণ্য বয়কটের আহ্বান জানান ফিলিস্তিনপন্থিরা।
কিন্তু এসব বয়কটে কী আসলেই কোনো প্রভাব পড়ে না কি বয়কট প্রচারণা কেবলই রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার অংশ মাত্র।
বিবিসি অ্যারাবিকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই দশক আগে ইরাকে মার্কিন আগ্রাসনের সময় আরব দেশগুলোতে আমেরিকান পণ্য বয়কট করা হয়েছিল। গাজা যুদ্ধের আগে সর্বশেষ যে বয়কট প্রচারাভিযান আলোচিত হয়েছে সেটি ছিল সুইডেন ও ডেনমার্কের বিরুদ্ধে।
ওই দেশ দুটি কোরআন পোড়ানোর অনুমতি দিলে আল আজহারের মতো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতিক্রিয়ায় সুইডিশ ও ডেনিশ পণ্য বয়কটের আহ্বান জানায়।
যেসব বহুজাতিক কোম্পানির বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইসরায়েলকে সমর্থন দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে, তাদের পণ্য বয়কটের ডাক দেওয়ার মূলে রয়েছে ‘বয়কট, ডিভেস্টমেন্ট অ্যান্ড স্যাঙ্কশন’ তথা বিডিএস প্রচারাভিযান।
ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০০৫ সালে প্রায় ১৭০টি ফিলিস্তিনি নাগরিক সমাজ সংস্থা এটি চালু করে। এবারও গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে অভিযানে যেসব কোম্পানি ইসরায়েলকে সমর্থন দিচ্ছে তাদের পণ্য বয়কট করার আহ্বান জানিয়ে আসছে বিডিএস।
যেসব কোম্পানি ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ও সরকারকে সমর্থন করছে তাদের নাম বিডিএসের ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে যেসব মার্কিন কোম্পানি ইসরায়েলের প্রতি রাজনৈতিক ও সামরিক সমর্থন জানায় তাদের পণ্য বয়কটেরও আহ্বান জানানো হয়েছে।
জর্ডানের অর্থনীতিবিদ এবং বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ ওয়াজদি মাখামরেহ জানান, বৈশ্বিক কোম্পানির পণ্য বয়কট স্থানীয় কোম্পানির পণ্য বিক্রি ও সম্প্রসারণে সাহায্য ও উৎসাহ জোগাতে পারে।
তবে বয়কট বেশি সময় ধরে চলতে থাকলে বিদেশি কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ কমে আসলে স্থানীয় অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
ইজিপশিয়ান ফোরাম ফর ইকোনমিক স্টাডিজের প্রধান রাশাদ আবদো জানান, যদি মূল কোম্পানির কোনো শাখাকে বয়কট করা হয় তাহলে মূল কোম্পানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে যেসব স্থানীয় কোম্পানি মূল কোম্পানির ট্রেডমার্ক ব্যবহারের অধিকার পান, বয়কটে কেবল তাদেরই ক্ষতি হয় তাতে মূল কোম্পানি কোনো ক্ষতি হয় না।
তবে চলমান বয়কট প্রচারাভিযানে পশ্চিমা কোম্পানিগুলো বেশ ভালো চাপে পড়েছে। গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তাদের রেস্তোরাঁ এবং ক্যাফে চেইনের শাখাগুলোর চাহিদা নাটকীয় হারে কমে গেছে।
বিশেষ করে মার্কিন রেস্তোরাঁ চেইন ম্যাকডোনাল্ডস ইসরায়েলি সৈন্যদের বিনামূল্যে খাবার বিতরণের ঘোষণা দেওয়ার পরে তারা মধ্যপ্রাচ্যে বিপাকে পড়ে। অন্যদিকে স্টারবাকস কফি চেইনের বাণিজ্যিক এজেন্ট এক বিবৃতিতে জানায়, তারা ইসরায়েলি সরকার বা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করছে না, যদিও তাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের প্রমাণ দেখিয়েছে বয়কটকারীরা।
মন্তব্য করুন