নতুন আয়কর আইনে বিদেশি ঋণের সুদের ওপর সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ হারে করারোপের বিধান রাখা হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এখন সেই আইন বাস্তবায়ন শুরু করেছে। তবে ব্যবসায়ীরা এ ধরনের করারোপের সম্পূর্ণ বিরোধী। তারা মনে করছেন, এ করারোপের উদ্যোগ দেশে বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের প্রক্রিয়াকে ব্যয়বহুল করে তুলবে। কারণ, বিদেশি ঋণদাতারা এখন তাদের সুদের ওপর ধার্য করের অংশটি ঋণগ্রহীতার ওপরই চাপিয়ে দেবে। তখন এ অতিরিক্ত কর ব্যবসার জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।
সম্প্রতি ব্যবসায়ীদের অন্যতম সংগঠন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) থেকে বিদেশি ঋণের সুদের ওপর আয়কর আরোপের বিষয়ে আপত্তি তুলে এনবিআরকে চিঠি দিয়েছে। সংগঠনটির সদস্য প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেডের (বিএসআরএম) দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ চিঠি দেওয়া হয়েছে। এনবিআর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এমসিসিআইয়ের সেক্রেটারি জেনারেল ফারুক আহাম্মাদ স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের সব ব্যবসা মূলত আমদানিনির্ভর। এ ছাড়া সব শিল্প প্রতিষ্ঠানের মেশিনারিজ ও শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল বৈদেশিক ঋণের মাধ্যমেই আমদানি করা হয়। বর্তমানে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতির কারণে সময়মতো এলসি খোলা ও আমদানি করতে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যর্থ হচ্ছে।
গত ১৬ জুলাইয়ের ওই চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, নতুন শিল্প প্রকল্প ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে শিল্পমালিকদের বৈদেশিক ঋণের ব্যবস্থা করার সুযোগ রয়েছে। এরই মধ্যে বৈদেশিক ঋণ ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশীয় অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ রয়েছে। তবে বিদেশি ঋণের সুদের ওপর আগে কর নেওয়ার বিধান ছিল না। ১৯৭৬ সালের একটি স্ট্যাটিউটরি রেগুলেটরি অর্ডারের (এসআরও) মাধ্যমে তা অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল; কিন্তু গত ২৩ মে আয়করের নতুন এসআরও জারির মাধ্যমে সেই এসআরও বাতিল করা হয়েছে। এতে আয়কর আইন-২০২৩ অনুযায়ী বিদেশি ঋণের সুদের ওপর উৎসে কর আরোপ বাধ্যতামূলক হয়ে পড়ে।
এ অবস্থায় এমসিসিআই মনে করে, বিদেশি ঋণের সুদের ওপর ধার্য এ কর দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। অতিরিক্ত ২০ শতাংশ হারে উৎসে কর কেটে নিলে ব্যবসার ব্যয় বাড়বে। এতে অধিক পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশের বাইরে চলে যাবে। এ ছাড়া দেশীয় ঋণের সুদ করমুক্ত। এ বৈষম্যের কারণে বিদেশি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্তও হতে পারে। তাই এসব বিষয় বিবেচনা করে বিদেশি ঋণের সুদের ওপর কর কর্তনের বিধানটি বাতিলের দাবি জানিয়েছে এমসিসিআই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এমসিসিআইয়ের সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, বিদেশি ঋণের সুদের ওপর কর নেওয়ার ফলে আমাদের ব্যবসার ব্যয় বেড়ে যাবে। এ ছাড়া ব্যবসার অডিট রিপোর্টের ওপর আমরা লাভ-লোকসান নির্ধারণ করি। স্থানীয় ঋণে তো আমরা কোনো আয়কর দিচ্ছি না। এখন বিদেশি ঋণে যদি তা দিতে হয়, তাহলে আমাদের ব্যবসা বাধাগ্রস্ত হবে। উৎসে কর নেওয়া এবং রিটার্নের মাধ্যমেও যদি কর দিই, তাহলে ডাবল ট্যাক্সেশন হবে। এজন্য আমরা বলছি যে, এটি ঠিক হচ্ছে না। দেশের বর্তমান অবস্থায় বিদেশি ঋণকে উৎসাহিত করা উচিত। তিনি বলেন, বিদেশি ঋণ এলে লোকাল লিকুইডিটির ওপর চাপ কমবে। একই সঙ্গে বিদেশি ঋণের মাধ্যমে আমাদের রিজার্ভও বাড়বে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের মোট বৈদেশিক ঋণ ছিল ৯৬ দমমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে বেসরকারি খাতের ঋণ ছিল ২৪ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। যেখানে স্বল্পমেয়াদি বাণিজ্যিক ঋণের অংশ ১১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এর আগে বিদেশি ঋণে সুদ ব্যয়ের সীমা নির্ধারণের বিধান বাতিলের দাবি জানিয়ে এনবিআরকে চিঠি দিয়েছিল বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সংগঠন ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ফিকি)। নতুন আয়কর আইনের ৫৩ ধারা অনুযায়ী, কোনো করবর্ষে সুদ ব্যয়ের বিষয়ে এনবিআরের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হবে। তবে কোনো আয়বর্ষে পরিশোধিত সুদের পরিমাণ ১৫ লাখ টাকার বেশি না হলে এ ধারা প্রযোজ্য হবে না।
মন্তব্য করুন