প্রবাসী আয় সংগ্রহে ইতিহাস গড়েছে গত মার্চ মাস। ওই মাসের শেষ দিন অর্থাৎ ৩১ তারিখ পর্যন্ত রেমিট্যান্স এসেছে ৩২৯ কোটি বা ৩.২৯ বিলিয়ন। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৪০ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা। সে হিসেবে প্রতিদিন প্রায় ১১ কোটি ডলার করে রেমিট্যান্স এসেছে। এর আগে যা আর কখনো দেখা যায়নি। গতকাল রোববার বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র এ তথ্য জানায়।
দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরপরই বেড়ে যায় রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ের গতি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই অর্থ পাচার কমেছে। একই সঙ্গে কমেছে হুন্ডি কারবারির দৌরাত্ম্যও। অন্যদিকে খোলাবাজারের মতোই রেমিট্যান্সের ডলারের দাম পাওয়া যাচ্ছে ব্যাংকগুলোতেও। এসব কারণে প্রবাসীরা বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তা ছাড়া ঈদুল ফিতর কেন্দ্র করে বেড়ে যায় রেমিট্যান্স প্রবাহের গতি।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের বেশি, যা গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১ হাজার ৪৯৪ কোটি ডলার। সে হিসেবে গত অর্থবছরের চেয়ে রেমিট্যান্স বেড়েছে প্রায় ৪০০ কোটি ডলার।
এ বিষয়ে চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের রিসার্চ ফেলো ও অর্থনীতিবিদ এম হেলাল আহমেদ জনি কালবেলাকে বলেন, সরকার পতনের পর হুন্ডির প্রভাব অনেকাংশেই কমেছে। পাশাপাশি প্রবাসীরাও বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছেন। এজন্যই দেশের প্রবাসী আয় দিন দিন বাড়ছে। পাশাপাশি ডলারের বাজার দীর্ঘদিন স্থিতিশীল রয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে প্রবাসী আয় আরও বাড়বে বলে আশা এই অর্থনীতিবিদের। এ ছাড়া মার্চ ঈদের আগের মাস হওয়ায় বেড়ে যায় রেমিট্যান্স আসা।
এর আগে গত ডিসেম্বরে দেশের ২ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স আসে। আর এ নিয়ে অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্ট থেকে টানা ৮ মাস দুই বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, আগস্টে এসেছিল ২২২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ, অক্টোবরে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার, নভেম্বরে ২২০ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে ২৬৪ কোটি ডলার, জানুয়ারিতে ২১৯ কোটি ডলার এবং ফেব্রুয়ারিতে ২৫৩ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
২০২০ সালে করোনাকালীন জুলাই মাসে ২৫৯ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। সেই রেকর্ড ভাঙে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে। ২০২৪ সালের শেষ মাস ডিসেম্বরের পুরো সময়ে রেমিট্যান্স আসে প্রায় ২৬৪ কোটি ডলার। এবার মার্চ মাসে সেই রেকর্ডও অতিক্রম করে গেছে। গড়েছে নতুন ইতিহাস।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, মার্চে সরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৭৫ কোটি ডলার এবং বিশেষায়িত দুই ব্যাংকের মধ্যে এক ব্যাংকের (কৃষি ব্যাংক) মাধ্যমে এসেছে ৩০ কোটি ১০ লাখ ৫০ হাজার ডলার। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ২২৩ কোটি ২২ লাখ ৮০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স। এ ছাড়া বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে প্রায় ৫৯ লাখ ডলার।
তবে আলোচিত সময়ে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি—এমন ব্যাংকের সংখ্যা চারটি। এগুলো মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রমালিকানাধীন বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বেসরকারি আইসিবি ইসলামী ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংক এবং বিদেশি ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান। এ ছাড়া ১ হাজার থেকে ৫০ লাখের কম সংগ্রহ করেছেন—এমন ব্যাংক রয়েছে ২২টি। এসব ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রমালিকানাধীন বেসিক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল)। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ কমার্স, কমিউনিটি ব্যাংক, সিটিজেন, এক্সিম, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী, আইএফআইসি, মিডল্যান্ড, ওয়ান, সীমান্ত, ইউনিয়ন ও উত্তরা ব্যাংক। আর বিদেশি সবকটি ব্যাংকই সংগ্রহ করেছে ৫০ লাখ ডলারের কম রেমিট্যান্স।
তথ্য বলছে, মার্চে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স সংগ্রহ করেছে বেসরকারি খাতের শরিয়াহভিত্তিক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ। রেমিট্যান্স সংগ্রহের পরিমাণ ৫১ কোটি ৫৮ লাখ ডলার। পরের অবস্থান বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের, এককভাবে সংগ্রহ করেছে ৩০ কোটি ডলার। এ ছাড়া জনতা ব্যাংক ২৪ কোটি, ব্র্যাক ব্যাংক ২১ কোটি, ট্রাস্ট ব্যাংক ২২ কোটি, সোনালী ব্যাংক ২০ কোটি, অগ্রণী ও সিটি ব্যাংক সাড়ে ১৫ কোটি ডলার সংগ্রহ করেছে।
মন্তব্য করুন