ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার
প্রকাশ : ১৭ জুন ২০২৫, ০৫:৫১ এএম
আপডেট : ১৭ জুন ২০২৫, ০৬:০৫ এএম
অনলাইন সংস্করণ

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গণতন্ত্রের পথে ঐতিহাসিক অগ্রগতি

লন্ডনে ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক। ছবি : সংগৃহীত
লন্ডনে ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক। ছবি : সংগৃহীত

২০২৫ সালের ১৩ জুন লন্ডনে অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে এক যুগান্তকারী বৈঠক। এই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান।

এই বৈঠকটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হলো যখন জাতি এক অস্থির অধ্যায় অতিক্রম করে একটি নতুন গণতান্ত্রিক সূর্যোদয়ের প্রত্যাশায় দিন গুনছে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅসন্তোষ ও ছাত্র-জনতার সম্মিলিত আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটে। তার পতনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা সৃষ্টি হয়, যার নেতৃত্বে রয়েছেন অধ্যাপক ইউনূস। আর এই উত্তরণকে সংহত করতে এখন কেন্দ্রীয় ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন তারেক রহমান। তিনি একজন এমন নেতা— যিনি শুধু তার রাজনৈতিক অভিভাবকদের উত্তরসূরি নন, বরং নিজ গুণে আজ জাতীয় স্থিতিশীলতার প্রতীক ও আধুনিক বাংলাদেশের প্রধান রূপকার হিসেবে স্বীকৃত।

নির্বাচনের নির্ধারিত সময়সূচি : একটি স্বস্তির বার্তা বৈঠকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হলো— দুজন নেতাই একমত হয়েছেন যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে, যাতে তা রমজান ও বর্ষা মৌসুমের আগেই সম্পন্ন করা যায়। এই ঘোষণা জাতিকে স্বস্তি ও স্থিতিশীলতার বার্তা দিয়েছে। বারবার নির্বাচনী সময়সূচি নিয়ে গুজব, আশঙ্কা ও অনিশ্চয়তার অবসান ঘটিয়ে এই বৈঠক একটি স্পষ্ট ও নির্ভরযোগ্য পথনকশা উপস্থাপন করেছে।

এই নির্ধারিত সময়সীমা আন্তর্জাতিক পর্যায়েও ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারতসহ বহু আন্তর্জাতিক অংশীদার বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রত্যাশা করছিল। সেই প্রত্যাশার প্রতিফলন এখন স্পষ্ট হতে শুরু করেছে।

তারেক রহমান : নেতৃত্বে নতুন গঠনমূলক অধ্যায় তারেক রহমান এখন কেবল একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান নন— তিনি বাংলাদেশের ভবিষ্যতের এক কেন্দ্রবিন্দু। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উত্তরাধিকার বহন করলেও, তার রাজনৈতিক পরিচিতি এখন স্বতন্ত্র। দীর্ঘ নির্বাসন, দমন-পীড়ন এবং চক্রান্তের মধ্য দিয়ে তিনি যে ধৈর্য, সংযম ও নীতি-ভিত্তিক নেতৃত্ব দেখিয়েছেন, তা তাকে একটি প্রাজ্ঞ, ভবিষ্যতদ্রষ্টা নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

তিনি জাতির সামনে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেছেন— একটি আধুনিক, বিকেন্দ্রীকৃত, জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা যা নির্মিত হবে বিএনপির ৩১ দফা ‘রাষ্ট্র মেরামতের’ রূপরেখার ওপর ভিত্তি করে। এই রূপরেখায় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার, প্রশাসনের দলনিরপেক্ষীকরণ, মানবাধিকার সুরক্ষা, এবং অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।

ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও ঐক্যবদ্ধতা বৈঠকটি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে— অন্তর্বর্তী সরকারে ঘাপটি মেরে থাকা ষড়যন্ত্রকারী ও বিভ্রান্তি ছড়ানো চক্রের অপচেষ্টা এখন ভেস্তে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে শোনা যাচ্ছিল, কিছু স্বার্থান্বেষী মহল অধ্যাপক ইউনূসকে ভ্রান্ত তথ্য দিয়ে রাজনৈতিক বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছিল। কিন্তু ইউনুস-তারেক সরাসরি আলোচনা এই ষড়যন্ত্রের সুযোগকে কমিয়ে দিয়েছে। উভয় নেতার মধ্যে যে স্বচ্ছতা ও পারস্পরিক আস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তা অন্তর্বর্তী সরকারের স্বচ্ছতা ও গণতান্ত্রিক উত্তরণের নিরবচ্ছিন্নতা নিশ্চিত করবে।

ভবিষ্যতের রূপরেখা : প্রতিষ্ঠান নির্মাণ ও জনগণের অংশগ্রহণ বৈঠকে আলোচনা হয়েছে নির্বাচন কমিশনের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার, বিচার বিভাগের সংস্কার, এবং রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তিসহ অন্যান্য মৌলিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিষয়ে। পাশাপাশি দুই নেতা একমত হন যে, সামাজিক সুরক্ষা, যুবকর্মসংস্থান, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা সহায়তা, এবং প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে একটি অর্থনৈতিক রূপান্তর ঘটানো জরুরি। এই অগ্রগতির নেতৃত্বে থাকবেন এমন একজন ব্যক্তি যার লক্ষ্য স্পষ্ট— আধুনিক, দায়িত্বশীল এবং উন্নয়নভিত্তিক একটি বাংলাদেশ। সেই নেতা হলেন তারেক রহমান।

উপসংহার : গণতন্ত্রের নতুন সকাল লন্ডনে ইউনূস–তারেক বৈঠক কেবল রাজনৈতিক সমঝোতা নয়, এটি একটি গণতান্ত্রিক সূচনার পূর্বাভাস। একটি নির্ধারিত নির্বাচনী সময়সূচি, একটি ন্যায্য ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি এবং একটি সংস্কারপন্থি রাষ্ট্র গঠনের ঐকমত্য বাংলাদেশের জন্য আশার নতুন দ্বার খুলে দিয়েছে।

এই বৈঠক প্রমাণ করেছে যে, বাংলাদেশ আবারও সম্ভাবনার পথে হাঁটতে প্রস্তুত। এবং এই পথের পুরোভাগে রয়েছেন তারেক রহমান— একজন নেতা, যিনি অতীতের অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যতের দৃষ্টি নিয়ে বাংলাদেশের পুনর্গঠনের নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত।

(লেখক : বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এবং বিশ্বব্যাংকের সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা)

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিমানের ডানা থেকে লাফ দিয়ে আহত ১৮

ইবিতে মাস্টার্সে পুনঃভর্তি / ছাত্রদল নেতাদের বিশেষ বিবেচনা, অন্যদের ক্ষেত্রে বঞ্চনা!

তানভীরের ফাইফারে সিরিজে সমতায় ফিরল টাইগাররা

প্রজাতন্ত্র নির্মাণে নতুন রাজনৈতিক ইশতেহার প্রয়োজন: জেএসডি 

চসিক মেয়রের সঙ্গে কানাডার ফেডারেল এমপির বৈঠক

যে কারণে জোতার শেষকৃত্যে ছিলেন না রোনালদো

চাঁদাবাজির সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে হামলার শিকার কালবেলার সাংবাদিক

উল্টোরথে শেষ হলো রথযাত্রার মহোৎসব

আশুরায় শুধু কারবালার নয়, রয়েছে আরও যত ঘটনা

ফারিন খানের রহস্যময় পোস্ট, কী চলছে এই অভিনেত্রীর জীবনে?

১০

যারা হাসিনাকে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করেছে তারাও পিআর নির্বাচন চায় : সালাহউদ্দিন

১১

ভাইয়ের লাশ আনতে গিয়ে সড়কে গেল আরও দুই ভাইয়ের প্রাণ

১২

পানি আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে : রাশেদ প্রধান

১৩

নির্বাচন নিয়ে টালবাহানার জবাব রাজপথে দেওয়া হবে : মুরাদ

১৪

বিএনপির ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ করলেন সাজু

১৫

বাংলাদেশে ঠেলে দিতে বিশেষ বিমানে করে ২০০ জনকে সীমান্তে আনল ভারত

১৬

যে কারণে চুম্বন দৃশ্যে না বলেন সালমান, রহস্য ফাঁস করলেন আরবাজ

১৭

চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেলে ৩৪৭ রোগী পেলেন অনুদান

১৮

ইনসাফের বাংলাদেশ গড়তে দেশপ্রেমিক নেতৃত্বের বিকল্প নেই: বুলবুল

১৯

চবি ভিসিকে শিক্ষার্থী / ‘নিজের যোগ্যতায় বসেননি, আমরা আপনাকে বসিয়েছি’

২০
X