শেখ হারুন
প্রকাশ : ২৩ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ২৩ জুন ২০২৫, ০৮:৪৪ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ঘুরে দাঁড়িয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠান বিএসসিপিএলসি

আন্তর্জাতিক বাজারেও বিক্রির উদ্যোগ
ছবি : সংগৃহীত
ছবি : সংগৃহীত

দেশে চাহিদার শতভাগ সরবরাহ করার সক্ষমতা থাকলেও বাংলাদেশ সাবমেরিক কেবলস লিমিটেডের (বিএসসিপিএলসি) বদলে বেসরকারি আইটিসির মাধ্যমে সিংহভাগ ব্যান্ডউইডথ সরবরাহ করা হতো। ফলে অবিক্রীত থেকে যাচ্ছিল প্রতিষ্ঠানটির সক্ষমতার প্রায় ৭০ শতাংশ ব্যান্ডউইডথ। এ কারণে গত বছরের আগস্ট মাসে চাহিদার শতভাগ সরবরাহের সক্ষমতা নিয়েও অস্তিত্ব সংকটে পড়েছিল সরকারি প্রতিষ্ঠানটি। তবে বছর না ঘুরতেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। নীতিগত পর্যায়ে কার্যকর পরিবর্তন ও সঠিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে এক বছরেরও কম সময়ের ব্যবধানে বিক্রি বেড়েছে এক টেরাবাইটেরও অধিক ব্যান্ডউইথ।

বিএসসিপিএলসি সূত্রে জানা গেছে, গত বছর এ সময়ে সাবমেরিন কেবলের ব্যান্ডউইথ বিক্রি ছিল ২ হাজার ৬০০ জিবিপিএস, যা বর্তমানে ৩ হাজার ৬০০ জিবিপিএস ছাড়িয়েছে। জানা গেছে, বিগত সরকারের আমলে রাজনৈতিক বিবেচনায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দেওয়ায় ইন্টারনেট সেবার একক কর্তৃত্ব হারায় বিএসসিপিএলসি। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির কারণে ব্যবসা হারাতে শুরু করে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটি। একক নিয়ন্ত্রণ থাকলেও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটির ব্যান্ডউইথ বিক্রি নেমে যায় দেশের চাহিদার অর্ধেকেরও কম। বিক্রি কমে যাওয়ায় আয় ও মুনাফায় ধস দেখা দেয়। এ অবস্থায় ব্যান্ডউইথের ক্ষেত্রে সাবমেরিন কেবলের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়াতে নীতিমালা সংশোধনসহ নানা পদক্ষেপ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার, যার মধ্যে অন্যতম ছিল ভারত থেকে ব্যান্ডউইথ আমদানি সীমিতকরণ। আমদানির পরিমাণ ধাপে ধাপে কমিয়ে দেশীয় অবকাঠামোর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। এ ক্ষেত্রে পরিকল্পিত বিভিন্ন নীতিমালা বাস্তবায়নে কার্যকর ভূমিকা পালন করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।

৫০: ৫০ নীতিমালার বাস্তবায়ন: খাদের কিনারা থেকে প্রতিষ্ঠানটির ঘুরে দাঁড়ানোর পেছনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে ৫০:৫০ নীতিমালা বাস্তবায়ন। চলতি বছরের শুরুতে বিটিআরসির সংশোধিত নির্দেশিকায় বলা হয়, বেসরকারি আইটিসি লাইসেন্সধারী কোম্পানিগুলো দেশের মোট চাহিদার ৫০ শতাংশের বেশি ব্যান্ডউইথ সরবরাহ বা বিক্রি করতে পারবে না। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফায়েজ আহমেদ তৈয়্যবের নির্দেশনায় দেশের ব্যান্ডউইথ চাহিদার ন্যূনতম ৫০ শতাংশ সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে সরবরাহ করার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।

এ ছাড়া ব্যবসায় সমান সুযোগ নিশ্চিতে বেসরকারি আইটিসিগুলোর জন্য বাধ্যতামূলক রাজস্ব ভাগাভাগির হার ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩ শতাংশ করে বিটিআরসি। পাশাপাশি সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানটিকে তাদের পরিষেবা আরও সাশ্রয়ী করার নির্দেশ দেয়। সরকারের এমন সিদ্ধান্তের পর থেকেই বিক্রি বাড়তে শুরু করে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বিএসসিপিএলসির।

ব্যান্ডউইথের মূল্য ছাড় এবং গ্রাহকবান্ধব সেবা নীতি: সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, চলতি বছর এপ্রিলে প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের জন্য ব্যান্ডউইথের মূল্য ১০ শতাংশ কমিয়ে দেয়। এতে প্রতিটি ১০০ জিবিপিএস সংযোগের জন্য গ্রাহক পর্যায়ে দাম কমে যায় প্রায় ১০ লাখ টাকা। পাশাপাশি প্রিপেইড প্যাকেজের আওতায় প্রতিটি ১০০ জিবিপিএস সংযোগের সঙ্গে ৩০ জিবিপিএস সংযোগও বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। ফলে ব্যান্ডউইথ বিক্রয় বৃদ্ধির পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বকেয়া আদায় সম্ভব হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যান্ডউইডথ বিক্রির উদ্যোগ: সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারেও অব্যবহৃত ব্যান্ডউইথ রপ্তানির উদ্যোগ নিয়েছে বিএসসিপিএলসি কর্তৃপক্ষ। ব্যান্ডউইথ রপ্তানির জন্য বর্তমানে একাধিক বিদেশি অপারেটরের সঙ্গে আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। সর্বাধুনিক প্রযুক্তি এবং ১৩.২ টেরাবিট সক্ষমতা সম্পন্ন তৃতীয় সাবমেরিন কেবলের বিশাল ব্যান্ডউইডথ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিপণনের পরিকল্পনা শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

বিশ্বের অন্যতম ধনী ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্টারলিংকও বিএসসিপিএলসির সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক তৈরিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে জানা গেছে। গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে আরও মূল্য ছাড়ের কথা ভাবছে বলেও নিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্টরা। সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে সাবমেরিন কেবল লাইসেন্স প্রদান, ভারত নির্ভর ব্যান্ডউইডথ আমদানিতে বাড়তি সুবিধাসহ বিভিন্ন অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের ফলে প্রতিনিয়ত আয় কমে যাচ্ছিল প্রতিষ্ঠানটির। তারা বলেন, ব্যান্ডউইথের মূল্যছাড়সহ ডিসকাউন্ট বা ফ্রি ব্যান্ডউইডথ প্রদানের পরও গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে নিট মুনাফা ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

প্রতিষ্ঠানের ঘুরে দাঁড়ানোর বিষয়ে বিএসসিপিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আসলাম হোসেন কালবেলাকে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার আসার পরে ৫০:৫০ নীতিমালা বাস্তবায়নের কারণে আগের থেকে বিএসসিপিএলসির ব্যান্ডউইথ বিক্রি বাড়ার পাশাপাশি আগের তুলনায় বকেয়া আদায়ও বেড়েছে। এখন কোম্পানির আর্থিক অবস্থা যথেষ্ট ভালো। এ ছাড়া ব্যান্ডউইথের মূল্য ছাড়সহ বিভিন্ন ডিসকাউন্ট বা ফ্রি ব্যান্ডউইডথ দেওয়ার কারণে গ্রাহকদের আগ্রহও বেড়েছে। আগে আমাদের বিরুদ্ধে ধীরগতির যে অভিযোগ ছিল, সেটাও সমাধান করা হয়েছে। এসব কারণেই মূলত সাবমেরিন কেবল কোম্পানি ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এখন শুধু দেশের অভ্যন্তরে নয়, অব্যবহৃত ব্যান্ডউইথ রপ্তানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা বিভিন্ন দেশের সঙ্গে চুক্তির চেষ্টা করছি, আশা করা যাচ্ছে আগামী ৬ মাসের মধ্যে বেশকিছু ইন্টারন্যাশনাল ব্যান্ডউইথ বিক্রি করা সম্ভব হবে, এতে প্রায় ৭ থেকে ৮ মিলিয়ন ডলার আয় হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পিয়া জান্নাতুলের বাবা আর নেই

সাবেক সিইসি নুরুল হুদাকে হেনস্তার ঘটনায় পুলিশের জিডি

ডিএনসিসির সব ওয়ার্ডে বসছে এয়ার কোয়ালিটি মনিটরিং যন্ত্র : প্রশাসক

কেন মহানায়কের পা ধরে ক্ষমা চেয়েছিলেন অমিতাভ?

আ.লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কেক কাটছিলেন ২ যুবক, অতঃপর...

তিন দিনব্যাপী জবি চলচ্চিত্র উৎসবের পর্দা উঠল শিল্পকলায়

আসছে সিফাত নুসরাতের নতুন বই ‘অগ্নিকন্যা’

সরকারি অফিস সচলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে : ইসলামী আন্দোলন

যুদ্ধ শেষ করতে ইরানের কাছে বার্তা পাঠিয়েছে ইসরায়েল

টিম গ্রুপের নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফরোজা শাহীন

১০

ইসরায়েলের ১৩০টি ড্রোন গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইরান

১১

মেঘনায় ফের ২৮ যাত্রী নিয়ে ডুবল স্পিডবোট

১২

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে ‘অটল’ ফ্রান্স : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

১৩

করোনায় আরও ৩ জনের মৃত্যু 

১৪

রাজনীতি করতে চাইলে শিক্ষকতা ছেড়ে দিন : শিক্ষা উপদেষ্টা

১৫

ট্রাকের নিচে চাপা পড়া সেই পুলিশের সর্বশেষ অবস্থা

১৬

বিএনপি নেতা নেওয়াজের উদ্যোগে ফ্রি আই ক্যাম্প 

১৭

ইরান ইস্যুতে নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক ডাকল পাকিস্তান

১৮

২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে আদালতের প্রশ্নে যা বললেন নুরুল হুদা

১৯

দেশের পরিস্থিতি কানাডাকে জানালো জামায়াত

২০
X