চলতি মৌসুমে চাঁপাইনবাবগঞ্জে গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ রপ্তানিযোগ্য আমের চাষ করেছেন চাষিরা। সেই তুলনায় বাড়েনি আমের রপ্তানি। ফলে বাড়তি খরচে রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন করে লোকসানের মুখে পড়েছেন আমচাষিরা। তাদের অভিযোগ, সরকারের টেকসই পরিকল্পনার অভাবে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী জানায়, চলতি মৌসুমে ২০২৪-২৫ সালে চীনসহ বিশ্বের ৩৮টি দেশে ৫ হাজার টন আম রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। মৌসুমের শেষ সময়ে এসে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ১৪টি দেশে রপ্তানি হয়েছে ২ হাজার ২০০ টন আম। তবে শেষ পর্যন্ত ৪ হাজার টন রপ্তানি সম্ভব হবে বলে দাবি করেছেন আম উৎপাদন প্রকল্পের পরিচালক। কিন্তু সরকার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ওপর ভিত্তি করে এবার রাজশাহী অঞ্চলে ৬ হাজার ৭২০ টন রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন করেছেন চাষিরা। এগুলোর উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় রপ্তানির বিকল্প হিসেবেও ভাবতে পারছেন না তারা। মুখ থুবড়ে পড়ছে তাদের স্বপ্ন।
চাষিরা জানান, মৌসুমের শুরুতে কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূত এবং রপ্তানিকারকরা এসে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমবাগান পরিদর্শন করেন। এ সময় তারা চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে বিপুল পরিমাণ আম তাদের দেশে নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। আম রপ্তানির আশায় বুক বাঁধেন চাষিরা। সরকারিভাবে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত হতাশ তারা।
আমচাষি ও উদ্যোক্তারা বলছেন, আম রপ্তানিতে টেকসই কর্মপরিকল্পনা না থাকা, আমের উৎপাদন এলাকায় প্যাকেজিং হাউসের অভাব, ফাইটো স্যানিটারি জটিলতার কারণে এ বছর আম রপ্তানিতে সফলতা নেই। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদেশে আম রপ্তানি বাড়াতে এবং রপ্তানি প্রক্রিয়া সহজ করতে সরকারের নানামুখী উদ্যোগ চলমান রয়েছ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. ইয়াছিন আলী জানান, চলতি মৌসুমে চীনসহ বিশ্বের ৩৮টি দেশে ৫ হাজার টন আম রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। আর রাজশাহী অঞ্চলে রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন হয়েছে ৬ হাজার ৭২০ টন। ২০২৩ সালে রপ্তানি হয়েছিল সাড়ে ৩ হাজার মেট্রিকটন আম। কিন্তু এ বছর মৌসুম শেষ হতে চললেও এখন পর্যন্ত ২ হাজার ২০০ মেট্রিকটন আম রপ্তানি হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার আমচাষি ও তরুণ উদ্যোক্তা মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘চলতি বছর রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় আমি ১ বিঘা জমিতে গৌড়মতি জাতের আম চাষ করি। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিদেশে আম পাঠাতে না পারায় মুখ থুবড়ে পড়েছে আমার সেই স্বপ্ন। বাড়তি যত্ন পরিচর্যায় অতিরিক্ত খরচ করে আম উৎপাদন করেই এখন লোকসানের মুখে পড়েছি।’
আমচাষি মো. রবিউল ইসলাম বলেন, আম রপ্তানি নিয়ে সরকারের দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম নেই। কয়েক বছর ধরে যা হচ্ছে সব কাগজ-কলমে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার আমচাষি মো. বুলবুল আলম বলেন, উত্তম কৃষি চর্চা (গ্যাপ) অনুসরণ এ প্রকল্পের আওতায় ৯ বিঘা জমিতে ব্যানানা জাতের আম উৎপাদন করি। কিন্তু ফাইটো স্যানেটারি সার্টিফিকেট জটিলতা এবং আমচাষি ও রপ্তানিকারক সংস্থার মধ্যে সংযোগ ভালো না হওয়ায় উৎপাদিত আম বিদেশে দিতে পারেননি।
বুলবুলের মতো একই আশঙ্কায় দিন কাটছে জেলার অন্য চাষিদেরও।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম মানিক বলেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উদাসীনতাসহ নানা কারণে আম রপ্তানিতে গতি নেই।
রাজশাহীর বিপন এগ্রোর স্বত্বাধিকারী হাফিজুর রহমান খান বলেন, আম রপ্তানির জন্য নিরাপদ স্থান, প্যাকিং, গ্রেডিং, কার্গো বিমান ইত্যাদি সমস্যার কারণেই আমরা আম রপ্তানিতে পিছিয়ে আছি।
রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ এগ্রো ফুড সমিতির সভাপতি আনোয়ারুল হক বলেন, রাজশাহী অঞ্চলে রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন করেন শতাধিক বাণিজ্যিক চাষি। কিন্তু সরকারের জটিল রপ্তানি নীতিমালা ও অবকাঠামোর অভাবে আম রপ্তানিতে গতি আসছে না।
তবে রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের পরিচালক আরিফুর রহমান বলেন, চলতি বছর ৫ হাজার টন আম রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এবার ৪ হাজার টন আম রপ্তানি করা সম্ভব হবে। আর বিদেশে আম রপ্তানি সহজ করতে সরকারের নানা পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
মন্তব্য করুন