জুনায়েদ শিশির
প্রকাশ : ২৬ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
আপডেট : ২৬ জুন ২০২৩, ০৯:৪৭ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ক্রেতার পছন্দ বিদ্যুৎসাশ্রয়ী ডিপ ফ্রিজ

সাক্ষাৎকার
ক্রেতার পছন্দ বিদ্যুৎসাশ্রয়ী ডিপ ফ্রিজ

প্রতিবছর কোরবানির ঈদে বাজারে ফ্রিজ ও রেফ্রিজারেটর বিক্রির ধুম পড়ে। ক্রেতা আকৃষ্টে কোম্পানিগুলোও এ সময় বাজারে নিয়ে আসে নতুন নতুন মডেল। এর পাশাপাশি রাখা হয় আকর্ষণীয় ছাড় ও লোভনীয় উপহার পাওয়ার অফার। এক্ষেত্রে গুণগতমান ও বিক্রয়োত্তর সেবার নিশ্চয়তা দেখে ক্রেতারা পছন্দের কোম্পানির ও মডেলের পণ্যটি কেনার মনস্থির করেন। সেখানে দেশীয় স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন বরাবরই থাকছে শীর্ষে। চলতি মৌসুমে বাজারে বেচাবিক্রি, খাতটির অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি এবং বৈশ্বিক সম্ভাবনার বিষয়ে কথা বলেছেন ওয়ালটন রেফ্রিজারেটরের চিফ বিজনেস অফিসার তোফায়েল আহমেদ। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন কালবেলার স্টাফ রিপোর্টার জুনায়েদ শিশির

কালবেলা: এবারের কোরবানির ঈদে ফ্রিজের বিক্রি কেমন যাচ্ছে?

বরাবরের মতো এবারের কোরবানির ঈদেও ব্যাপক বিক্রি হচ্ছে ওয়ালটনের ফ্রিজ। বিশেষ করে ওয়ালটনের ডিপ ফ্রিজ বা চেস্ট ফ্রিজার ক্রেতাদের বিশেষ আকৃষ্ট করেছে। সারাবছর যে পরিমাণ ফ্রিজ বিক্রি হয়, তার প্রায় ৬০ ভাগই বিক্রি হয় ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায়। এরই মধ্যে আমরা ফ্রিজ বিক্রির এই লক্ষ্য অতিক্রম করেছি। তবে ক্রেতা চাহিদা ও সমাগম দেখে এটা বলা যায়, ঈদের আগের শেষ কয়েকদিনে ফ্রিজ বিক্রির পরিমাণ আরও অনেক বাড়বে। কারণ ওয়ালটন ফ্রিজ দামে সাশ্রয়ী, মানে সেরা। রয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ সার্ভিস নেটওয়ার্কের আওতায় দ্রুত ও সর্বোত্তম বিক্রয়োত্তর সেবার নিশ্চয়তা। তাই প্রতিবছরের মতো এবারের কোরবানির ঈদেও সিংহভাগ ক্রেতার আস্থা ওয়ালটন ফ্রিজে। ঈদে ক্রেতা চাহিদার শীর্ষে রয়েছে ওয়ালটনের ফ্রিজ ও ফ্রিজার।

কালবেলা: ঈদবাজারে আপনাদের কত মডেলের ফ্রিজ রয়েছে? দাম কেমন?

এবারের ঈদবাজারে ওয়ালটনের রয়েছে ৫০ লিটার থেকে ৬৪৬ লিটার ধারণক্ষমতার ২৫০টিরও বেশি সর্বাধুনিক মডেলের ফ্রস্ট, নন-ফ্রস্ট রেফ্রিজারেটর ও ফ্রিজার। এর মধ্যে ঈদকে সামনে রেখে এসেছে সর্বাধুনিক ফিচার ও ডোরসমৃদ্ধ অর্ধশতাধিক নতুন মডেলের ফ্রিজ। এ ছাড়াও আছে ব্যাপক বিদ্যুৎসাশ্রয়ী ২২টি মডেলের ডিপ ফ্রিজ বা ফ্রিজার। এসব ফ্রিজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যাপক বিদ্যুৎসাশ্রয়ী ইনভার্টার প্রযুক্তির অত্যাধুনিক ফিচার ও বৈচিত্র্যময় ডিজাইনের এআইওটিবেজড স্মার্ট সাইড বাই সাইড, গ্লাস ডোর, বিএসটিআইর সর্বোচ্চ ফাইভ স্টার এনার্জি রেটিং সনদপ্রাপ্ত ফ্রস্ট ও নন-ফ্রস্ট ফ্রিজ। ক্রেতারা ওয়ালটনের এসব ফ্রিজ ১৭ হাজার থেকে ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকার মধ্যে কিনতে পারছেন। ওয়ালটন ফ্রিজের গ্রাহকরা ১ বছরের রিপ্লেসমেন্টের পাশাপাশি কম্প্রেসরে ১২ বছরের গ্যারান্টি পাচ্ছেন।

কালবেলা: ঈদ উপলক্ষে আপনারা ফ্রিজ ক্রেতাদের বিশেষ কী সুবিধা দিচ্ছেন?

বছরজুড়েই আমরা ক্রেতাদের নানান সুবিধা দিয়ে থাকি। এবারের কোরবানির ঈদ উপলক্ষে সারাদেশে চলছে ওয়ালটনের ডিজিটাল ক্যাম্পেইন সিজন-১৮। এই সিজনে ক্রেতাদের জন্য ঘোষণা করা হয়েছে ‘ওয়ালটন পণ্যে সাজবে বাড়ি, ঈদে এবার নিজের গাড়ি’ শীর্ষক বিশেষ সুবিধা। এর আওতায় দেশের যে কোনো ওয়ালটন প্লাজা, পরিবেশক শোরুম ও অনলাইন সেলস প্ল্যাটফর্ম ই-প্লাজা থেকে ফ্রিজ, টিভি, এয়ার কন্ডিশনার অথবা ওয়াশিং মেশিন কিনে ক্রেতারা পাচ্ছেন গাড়ি ফ্রিসহ লাখ লাখ উপহার। এ সুবিধা আছে ১৫ জুলাই, ২০২৩ তারিখ পর্যন্ত। ইতোমধ্যে ওয়ালটন পণ্য কিনে ৪ জন ক্রেতা গাড়ি উপহার পেয়েছেন।

কালবেলা: বর্তমানে অভ্যন্তরীণ বাজারে বছরে ফ্রিজের চাহিদা কেমন? টাকার অঙ্কে ফ্রিজের অভ্যন্তরীণ বাজারের আকার কত?

দেশে ফ্রিজের চাহিদা ক্রমশই বাড়ছে। বর্তমানে প্রায় ১০-১২ হাজার কোটি টাকার বাজার রয়েছে। প্রতিবছর ৭ শতাংশ হারে বাজারটি বড় হচ্ছে। বছরে প্রায় ৩০ লাখ ফ্রিজের চাহিদা রয়েছে। এ বাজারের বড় অংশই দেশীয় কোম্পানিগুলোর দখলে। ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল বাজারের প্রায় ৬০ শতাংশ ওয়ালটনের দখলে। আর ফ্রিজের বাজারের ক্ষেত্রে প্রায় ৭০ শতাংশই বর্তমানে ওয়ালটনের দখলে।

কালবেলা: এ শিল্পে কতটা এগোল দেশ, এ বাজারে বৈশ্বিক সম্ভাবনা কেমন দেখছেন?

ফ্রিজ শিল্পে বাংলাদেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। চাহিদার পুরোটাই ওয়ালটনের জোগান দেখার সক্ষমতা রয়েছে। ওয়ালটন বরাবরই চেয়েছে ইলেকট্রনিক্স সেক্টরে আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে দেশের চাহিদা পূরণ করে এ খাতকে রপ্তানিমুখী সেক্টরে পরিণত করতে। সে লক্ষ্য অর্জনে আমরা সফল হয়েছি। ফ্রিজ শিল্পে বিপুল বৈশ্বিক সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা সেই সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে বিশ্ববাজারে শক্ত অবস্থান গড়তে কাজ করছি। ইউরোপ-আমেরিকাসহ উন্নত দেশগুলোতে রপ্তানি কার্যক্রম সম্প্রসারণ করছি।

কালবেলা: ফ্রিজে কী কী নতুন প্রযুক্তি যুক্ত করছেন?

ফ্রিজে নতুন নতুন প্রযুক্তির সংযোজন ঘটাতে আমাদের আরঅ্যান্ডআই (রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন) বিভাগ প্রতিনিয়ত গবেষণা করে চলছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি আমরা বিশ্বের প্রথম নাইন-ইন-ওয়ান কনভার্টিবল মোডের ফ্রিজ উন্মোচন করেছি। একই সঙ্গে আমাদের রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম উৎপাদনকৃত ফোর-ডোর রেফ্রিজারেটর। জায়ান্টটেক সিরিজের এসব ফ্রিজের মধ্য দিয়ে হাই-টেক রেফ্রিজারেটর উৎপাদন ও বিপণনে নতুন যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। স্মার্টফোনের মাধ্যমে বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে জায়ানটেক সিরিজের এসব ফ্রিজ পরিচালনা করার পাশাপাশি স্মার্ট কন্ট্রোল, ইউটিউব ব্রাউজিং, অনলাইন গ্রোসারি শপিং, অফলাইন ভিডিও ও অডিও, কাউন্টডাউন ক্লক, অনলাইন রেসিপি, ক্লক, ক্যালেন্ডার, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, সেলফি ক্যামেরা, ওয়েদার আপডেট ইত্যাদি প্রযুক্তি ও ফিচার পাচ্ছেন। রয়েছে টারবো ও ইকো ফিচারসমৃদ্ধ ডুয়ো কুলিং সেটিংস। এসব ফ্রিজের এমএসও (ম্যাট্রিক্স স্পিড অপটিমাইজেশন) ইনভার্টার টেকনোলজি বাইরের তাপমাত্রা অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয়ভাবে সবচেয়ে কম বিদ্যুৎ খরচে ফ্রিজের অভ্যন্তরীণ সর্বোচ্চ কুলিং পারফরম্যান্স নিশ্চিত করে। ভবিষ্যতে আমরা আরও চমকপ্রদ অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে আসছি।

কালবেলা: দেশের বাজারের পাশাপাশি বহির্বিশ্বে আপনারা কী পরিমাণ ফ্রিজ রপ্তানি করছেন?

দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি শুরু থেকেই আমাদের লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশে তৈরি ফ্রিজসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স পণ্য রপ্তানি করা। এজন্য আমরা বিভিন্ন দেশের স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী প্রোডাক্ট ডেভেলপ করেছি। এরই মধ্যে বিশ্বের প্রায় ৪০টি দেশে ফ্রিজসহ ওয়ালটনের বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। ২০২২ সালে আমাদের বিক্রীত ফ্রিজগুলোর মধ্যে ৯ শতাংশের বেশি রপ্তানি থেকে এসেছে। আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে অল্প সময়ের মধ্যে বিশ্বের প্রধান দেশগুলোতে ফ্রিজসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ করা। দেশের মতো বিশ্ববাজারেও শীর্ষ ব্র্যান্ডে পরিণত হওয়া।

কালবেলা: এই শিল্পটি এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার কী সহায়তা দিতে পারে?

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ইলেকট্রনিক পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য নতুন করে করারোপ করা হয়নি। পূর্বের সুবিধাগুলো বহাল রাখা হয়েছে। উৎপাদন পর্যায়ে আংশিক ভ্যাট অব্যাহতি রয়েছে। সরকারের দেওয়া নীতিসহায়তা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ এখন রেফ্রিজারেটর উৎপাদন শিল্পে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বিশ্বের সর্বাধুনিক রেফ্রিজারেটর এখন দেশেই তৈরি হচ্ছে। লাক্সারি সেগমেন্টের পণ্যও এখন দেশেই উৎপাদিত হচ্ছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রেফ্রিজারেটর রপ্তানি হচ্ছে। সুতরাং কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে তৈরিকৃত রেফ্রিজারেটর আমদানির কোনো প্রয়োজন নেই। এ বিষয়টিতে আমাদের এখন দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

টিসিবির নিয়ন্ত্রণ হারানো ট্রাকচাপায় বৃদ্ধ নিহত

ইতালির প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফর বাতিল

জেলেনস্কির টার্গেট তুরস্ক, অস্ট্রিয়া ও সুইজারল্যান্ড

শিক্ষকের ওপর হামলা, ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ

‘আপনাকে গভীরভাবে অনুভব করি প্রতি পদে পদে’

এইচএসসির ফল প্রকাশের তারিখ নিয়ে প্রচার, শিক্ষা বোর্ডের বক্তব্য

হাসারাঙ্গাকে ছাড়াই শ্রীলঙ্কা দল ঘোষণা

ভিক্ষুক পুনর্বাসন প্রকল্পের টাকা নিয়ে উধাও সমাজসেবা কর্মকর্তা

সিলেটে সাদাপাথর লুট / গোয়েন্দা প্রতিবেদনের সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের দ্বিমত

আমাদের আদর্শগত শত্রু বিজেপি, বললেন থালাপতি বিজয়

১০

৩৮ বছরের শিক্ষকতা শেষে অশ্রুসিক্ত ভালোবাসায় প্রধান শিক্ষককে বিদায়

১১

পাঠ্যবইয়ে শেখ হাসিনার নাম হবে গণহত্যাকারী : আসিফ মাহমুদ

১২

নির্বাচনে বিএনপির বিজয় ঠেকাতে নানা চেষ্টা চলছে : তারেক রহমান

১৩

নারী চ্যাম্পিয়ন্স লিগে পাঁচ বাংলাদেশি ফুটবলার

১৪

অধ্যাপক আলী রীয়াজের সঙ্গে ইইউ রাষ্ট্রদূতের বৈঠক

১৫

রিজার্ভ বেড়ে ৩০.৮৫ বিলিয়ন ডলারে

১৬

জাকসু নির্বাচন, ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ নিয়ে আসছে ছাত্রশিবির

১৭

ঢাকঢোল পিটিয়ে বেদখলে থাকা জমি উদ্ধার 

১৮

‘আর একটা পাথর সরানো হলে জীবন ঝালাপালা করে দেব’

১৯

আমাদের দাবি না মানলে নির্বাচন হবে না : জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি

২০
X