

জয়ের সুবাসটা যেন ঘুরে বেড়াচ্ছিল দুবাইয়ের গ্যালারিতেই। ১২৫ রানে পাকিস্তান শাহিন্সকে আটকে দিয়ে ম্যাচটাকে নিজের করে নেওয়ার মতো অবস্থায় ছিল বাংলাদেশ ‘এ’ দল। লক্ষ্য মাত্র প্রতি ওভারে ছয়ের কিছু বেশি—যে মানদণ্ডে আধিপত্য দেখিয়েই শুরু করেছিলেন জুনিয়র টাইগাররা। কিন্তু এক ঝাঁক পাকিস্তানি স্পিনারের ঘূর্ণিতে হুট করেই চাপা পড়ে যায় পুরো টপ অর্ডার, আর ম্যাচের গতিপথ ঘুরে যেতে থাকে অচেনা গন্তব্যে।
৫৩ রানের মাঝে সাত উইকেট হারিয়ে যখন নিশ্চিত পরাজয়ের ছায়া ঘনিয়ে আসছে, তখনই দৃঢ় দেয়াল হয়ে দাঁড়ান রাকিবুল হাসান। লোয়ার অর্ডারের লড়াই—একটা পর একটা ছক্কায় শেষ দিকে ম্যাচ ফেরত আনার সেই চেষ্টা—সব মিলিয়ে দারুণ নাটকীয়তায় ভরপুর ফাইনাল। নবম ব্যাটার হিসেবে রাকিবুলের বিদায়ের পর আবারও আশঙ্কার ঢেউ, কিন্তু শেষ জুটিতে আব্দুল গফফার সাকলাইন ও রিপন মন্ডলের তিন ছক্কার ঝড়ে উত্তেজনার পারদ ছুঁয়ে ফেলে তুঙ্গে।
শেষ ওভারে দরকার ছিল ৭—মিলল ৬। ম্যাচ গড়াল সুপার ওভারে। আর ঠিক সেখানেই হোঁচট বাংলাদেশের। ১ ওভারে ৬ রান তুলতে গিয়ে হারাল দুই উইকেট, জবাবে পাকিস্তান জিতে নেয় দুই বল হাতে রেখেই।
ফাইনালের এই উচ্চচাপের ম্যাচে ধরা পড়েছে বাংলাদেশের ব্যাটিং অস্থিরতা—ক্যাচ মিস, ভুল শট সিলেকশন, মিডল অর্ডারের দায়িত্বহীন উইকেট… সব মিলিয়ে চ্যাম্পিয়নশিপ ছোঁয়ার হাতটাই যেন সরে গেল শেষ মুহূর্তে।
তবু ম্যাচ শেষে হতাশার মাঝেও মাথা উঁচু রেখেই কথা বলেন অধিনায়ক আকবর আলী।
পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে আকবর বলেন, “ম্যাচ জেতার বিশ্বাসটা আমাদের মধ্যে ছিল। কিন্তু আমাদের শট সিলেকশন ভালো ছিল না। এজন্য দায় আমাদেরই। তবে দল হিসেবে আমরা যা অর্জন করেছি, তাতে ছেলেদের নিয়ে আমি গর্বিত।”
স্পিনে ভুগতে হওয়া নিয়েও অকপট স্বীকারোক্তি তার—“এই ধরনের উইকেটে স্পিন খেলা সহজ না, আমরা জানতামই। একটা সময় নিয়মিত আউট হতে থাকি। কিন্তু লোয়ার অর্ডার দারুণ লড়েছে। আমরা তরুণ দল, অনেক কিছুই শিখতে হবে এখনো।”
খেলা দেখতে মাঠে উপস্থিত প্রবাসী বাংলাদেশিদের কথাও ভুলে যাননি আকবর। “প্রত্যেক ম্যাচেই ভাই-বোনেরা এসে সমর্থন দিয়েছে। দলের পক্ষ থেকে সবাইকে ধন্যবাদ।”
নাটকীয়তায় ভরা ফাইনালটা শেষ পর্যন্ত হাসল পাকিস্তানের দিকে। কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য যে আগুনটা দেখা গেল বাংলাদেশের তরুণদের লড়ে যাওয়ায়—তা আগামী দিনের আশার আলোই জ্বালিয়ে দিল।
মন্তব্য করুন