

ফুটবলে কখনও কখনও এক গোলই বদলে দেয় পুরো রাতের গল্প। এলচের মাঠে রিয়াল মাদ্রিদের জন্য সেই গল্পটা লিখলেন জুড বেলিংহাম—শেষ মুহূর্তের এক ধাক্কায় সাদা শিবিরকে বাঁচিয়ে রাখলেন পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে। ৮৭ মিনিটে তার ঠেলাঠেলি গোলে ২-২ ড্র নিশ্চিত করে রিয়াল, আর হতাশায় ডুবে গেল এলচে—যারা হাতের মুঠোয় থাকা জয় খানিকটা সময়ের ব্যবধানে হারিয়ে ফেলল।
ম্যাচের ৮১ মিনিট পর্যন্ত স্পষ্টই ছিল উত্তেজনা। সাবেক রিয়াল ফরোয়ার্ড আলভারো রদ্রিগেস দুর্দান্ত এক শটে এলচেকে ২-১ এগিয়ে দিয়ে যখন উদযাপন করছিলেন, ঠিক তিন মিনিট পর আসে মোড় ঘোরানো মুহূর্ত। ফ্রি-কিক ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হয় এলচে রক্ষণ, আর গোলকিপার ইনিয়াকি পেনার সঙ্গে ধাক্কায় রক্তাক্ত অবস্থায়ও বল ঠেলে দেন বেলিংহাম—রেফারি ফাউল না দেওয়ায় বেঁচে যায় রিয়াল।
এর আগে ম্যাচে দুইবার এগিয়ে গিয়েও ধরে রাখতে পারেনি এলচে। ৫৩ মিনিটে আলেইক্স ফেবাসের গোলে এগিয়ে যায় তারা। জবাবে ৭৮ মিনিটে কর্নার থেকে তৈরি বিশৃঙ্খলায় বল দখল করে রিয়ালকে ফিরিয়ে আনেন ডিন হুইজসেন। এর পর রদ্রিগেসের শক্তিশালী শট এলচেকে আবার এগিয়ে দেয়, কিন্তু ম্যাচের শেষ বাঁকটায় সবকিছু ভেঙে যায় স্বাগতিকদের।
প্রথমার্ধে গোল না হলেও দুই দলই ছড়িয়েছে সুযোগের বন্যা। কিলিয়ান এমবাপ্পে একাধিকবার লক্ষ্যভেদে ব্যর্থ, রদ্রিগো–গুলের–আসেনসিওর শটও মরিয়া রক্ষণ ও পেনার হাতে আটকে যায়। পাল্টা আক্রমণে আন্দ্রে সিলভাও সুযোগ হাতছাড়া করেন। থিবো কুর্তোয়া রাফা মিরের শট ঠেকিয়ে রিয়ালকে রক্ষা করেন।
বিরতির পরও পেনা আগের মতোই ধারালো। রদ্রিগোর শট ঠেকিয়েই দ্বিতীয়ার্ধের শুরু করেন তিনি। কিন্তু খেলার গতি ধরে রেখে সুযোগ কাজে লাগায় এলচে—ভালেরার ব্যাকহিলে দুর্দান্ত সমন্বয় ছিল প্রথম গোলের মূল চাবিকাঠি।
রিয়াল সেই চাপ ভাঙতে নামায় একঝাঁক বদলি। ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের একক দৌড়ে গোলের সুবর্ণ সুযোগও ছিল, কিন্তু তিনি শট না নিয়ে পাস দিতে গিয়ে নষ্ট করেন সম্ভাবনা। পরে কোচ জাবি আলোনসো বলেন, “এটা পরিকল্পনার অংশ ছিল। ওর ভূমিকা আমরা আগেও এমনভাবে ব্যবহার করেছি।”
শেষদিকে রিয়ালের তীব্র চাপেই বদলে যায় ম্যাচ। হুইজসেনের সমতা ফেরানো গোল, রদ্রিগেসের জাদু, তারপর বেলিংহামের ত্রাণকর্তার ছাপ—সবার ওপরে ছিল রিয়ালের মরিয়া প্রতিরোধ।
স্টপেজ টাইমে দ্বিতীয় হলুদ দেখে মাঠ ছাড়েন এলচের ভিক্টর চুস্ত, যা স্বাগতিকদের হতাশা আরও বাড়িয়েছে।
ম্যাচশেষে আলোনসো বললেন, “পরপর কিছু ম্যাচে ফল আমাদের মতো হয়নি। আমরা সমালোচনার মধ্যে আছি, কিন্তু দল লড়াই করছে—এটাই গুরুত্বপূর্ণ। সামনে আরও ম্যাচ আছে, এই প্রতিকূলতা থেকে ফিরতে হবে।”
এই ড্র-ই কিন্তু রিয়ালকে বড় উপকার দিয়েছে। বার্সেলোনার উপর অল্প ব্যবধানে হলেও লিগের শীর্ষে থাকল তারা—আর আবারও প্রমাণিত হলো, সংকট মুহূর্তে বেলিংহামই রিয়ালের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য নাম।
মন্তব্য করুন