শেখ হারুন
প্রকাশ : ২৮ মে ২০২৪, ০২:৪০ এএম
আপডেট : ২৮ মে ২০২৪, ১১:৫৩ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আইএমইডির প্রতিবেদন

১০ মাসে এডিপি বাস্তবায়ন অর্ধেকেরও কম

১০ মাসে এডিপি বাস্তবায়ন অর্ধেকেরও কম

নানা উদ্যোগের কথা বলা হলেও গতি নেই বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে। এর প্রমাণ মেলে এডিপি বাস্তবায়ন হারে। চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) বাস্তবায়ন হয়েছে ৪৯ দশমিক ২৬ শতাংশ। অর্থবছর শেষ হতে বাকি আর দুমাস। এই সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে হবে ৫০ দশমিক ৭৪ শতাংশ। ফলে শতভাগ বাস্তবায়ন নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলতি অর্থবছর এডিপির শতভাগ বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। কয়েক বছর ধরে একই চিত্র দেখা গেলেও বাস্তবায়নের দিকে কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১০ মাসের এডিপি বাস্তবায়নের অগ্রগতি প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে। গতকাল সোমবার এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আইএমইডি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বরাদ্দের হিসাবে কয়েকটি মন্ত্রণালয় ছাড়া বেশিরভাগই তাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারছে না।

বিশ্লেষকরা বলছেন, অর্থবছরের ১০ মাসে এডিপি কর্মসূচির অর্ধেকও বাস্তবায়ন হয়নি। সেখানে মাত্র দুই মাসে কী করে পুরো বাস্তবায়ন করা সম্ভব। প্রতিবছরই শেষ সময়ে তাড়াহুড়া করে বাস্তবায়ন হার বাড়ানো হয়। এতে কাজের মান ঠিক থাকে না। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে জবাবদিহির আওতায় না আনলে শতভাগ এডিপি বাস্তবায়ন কোনো অর্থবছরেই সম্ভব নয়।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন কালবেলাকে বলেন, বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলেও বড় আকারের এডিপি নেওয়া হচ্ছে। অর্থবছরের প্রথম ৮ বা ৯ মাসে বাস্তবায়ন হার অনেক কম থাকে। কিন্তু শেষের মাসগুলোয় এডিপি বাস্তবায়ন ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। শেষ সময়ে তড়িঘড়ি করে বাস্তবায়ন হার বাড়ানো হয়। এতে গুণগত মান ঠিক থাকে না। এর পরও বাস্তবায়নের কোনো পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে না। গতানুগতিকভাবেই চলছে এডিপি। এজন্য বড় আকারের এডিপি নেওয়ার চেয়ে বাস্তবায়নের দিকে নজর দেওয়া উচিত।

ধীরগতির বিষয়ে আইএমইডি সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন বলেন, গত অর্থবছরের তুলনায় এবার এডিপি বাস্তবায়ন কম হয়েছে, এটা ঠিক। তবে বাস্তবায়ন হার বাড়ানোর বিষয়ে জোর দেওয়া হচ্ছে। দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়নেও জোর দিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এনইসি বৈঠকে সচিবদের এডিপি বাস্তবায়ন বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

আইএমইডির প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের এডিপিতে ১ হাজার ৬৭৪ প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ রয়েছে ২ লাখ ৫৪ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। প্রথম ১০ মাসে ৫৮ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের তত্ত্বাবধানে থাকা এসব প্রকল্পের বিপরীতে খরচ হয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ৩১৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা, যা বরাদ্দের ৪৯ দশমিক ২৬ শতাংশ।

গত ১০ অর্থবছরের এডিপি বাস্তবায়নের চিত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, করোনার সময় ছাড়া চলতি অর্থবছরের মতো এত কম এডিপি বাস্তবায়ন আর কখনো হয়নি। ১০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল ২০২০-২১ অর্থবছর। ওই অর্থবছর একই সময়ে বাস্তবায়ন হার ছিল ৪৯ দশমিক ০৯ শতাংশ। আর ২০১৯-২০ অর্থবছরে ছিল ৪৯ দশমিক ১৩ শতাংশ।

সবচেয়ে বেশি বাস্তবায়ন হয়েছিল ২০১৪-১৫ অর্থবছরে। ওই সময় বাস্তবায়ন হার ছিল ৫৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এ ছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ছিল ৫৪ দশমিক ৯৪, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৫৪ দশমিক ৫৬, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৫২ দশমিক ৪২, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৫০ দশমিক ১৭ এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ৫৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে এডিপির ৫০ দশমিক ৩৩ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছিল।

এদিকে, সামগ্রিকভাবে এডিপি বাস্তবায়ন হারের সঙ্গে মাসের হিসাবে চলতি অর্থবছরের এপ্রিলে গতবারের তুলনায় কম বাস্তবায়ন হয়েছে। আইএমইডির তথ্য অনুযায়ী, শুধু এপ্রিলে এডিপি বাস্তবায়নে খরচ হয়েছে ১৭ হাজার ৭০৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ এ সময় বাস্তবায়নের হার ৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরের এপ্রিলে খরচ হয় ২০ হাজার ৫৪৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা, যা বরাদ্দের ৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ। অর্থাৎ মাসের হিসাবে বাস্তবায়ন প্রায় দুই শতাংশ কম হয়েছে।

আইএমইডির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, শতাংশের হিসাবে বাস্তবায়নে পিছিয়ে থাকলেও টাকা খরচে এগিয়ে রয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। বিভাগটির ২৬৩ প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ ছিল ৪২ হাজার ৯৫৬ কোটি ৭১ লাখ টাকা। ১০ মাসে ব্যয় হয়েছে ২৩ হাজার ৭৬২ কোটি ২৬ লাখ টাকা, যা ৫৫ দশমিক ০৩ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থান বিদ্যুৎ বিভাগের, খরচ করেছে ২০ হাজার ৭৬২ কোটি ২৬ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৬৮ দশমিক ২৯ শতাংশ।

১০ মাসে ৩০ শতাংশও এডিপি বাস্তবায়ন করতে পারেনি ৮ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। সবচেয়ে পিছিয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ। চলতি অর্থবছর ২৪২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা বরাদ্দের বিপরীতে তারা ব্যয় করেছে ৪১ কোটি ৪২ লাখ টাকা বা ১৭ দশমিক ০৭ শতাংশ। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশন সচিবালয় খরচ করেছে ২২ দশমিক ৮৮ শতাংশ, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ ২৪ দশমিক ৩১, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২৪ দশমিক ৪২, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ২৬ দশমিক ৯৭ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ২৮ দশমিক ২৫ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে। চলতি অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি এডিপি বাস্তবায়ন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থাটির চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা। ১০ মাসে তারা ব্যয় করেছে ৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৯৬ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এ ছাড়া জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ ৮৩ দশমিক ১৪, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ ৭৪ দশমিক ৪৪, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়র বিভাগ ৭২ দশমিক ৩২ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ৬৭ দশমিক ০১ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন করেছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমাদের আদর্শগত শত্রু বিজেপি, বললেন থালাপতি বিজয়

৩৮ বছরের শিক্ষকতা শেষে অশ্রুসিক্ত ভালোবাসায় প্রধান শিক্ষককে বিদায়

পাঠ্যবইয়ে শেখ হাসিনার নাম হবে গণহত্যাকারী : আসিফ মাহমুদ

নির্বাচনে বিএনপির বিজয় ঠেকাতে নানা চেষ্টা চলছে : তারেক রহমান

নারী চ্যাম্পিয়ন্স লিগে পাঁচ বাংলাদেশি ফুটবলার

অধ্যাপক আলী রীয়াজের সঙ্গে ইইউ রাষ্ট্রদূতের বৈঠক

রিজার্ভ বেড়ে ৩০.৮৫ বিলিয়ন ডলারে

জাকসু নির্বাচন, ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ নিয়ে আসছে ছাত্রশিবির

ঢাকঢোল পিটিয়ে বেদখলে থাকা জমি উদ্ধার 

‘আর একটা পাথর সরানো হলে জীবন ঝালাপালা করে দেব’

১০

আমাদের দাবি না মানলে নির্বাচন হবে না : জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি

১১

মানুষ ভাত পাচ্ছে না আর উপদেষ্টারা হাঁসের মাংস খুঁজতে বের হচ্ছেন : আলাল

১২

বিচারককে ‘ঘুষ’, বারে আইনজীবীর সদস্যপদ স্থগিত

১৩

ট্রাক প্রতীক নিয়ে নিজ এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন আবু হানিফ 

১৪

শিক্ষককে ছুরি মারা সেই ছাত্রী এখন শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে

১৫

নথি সরিয়ে ১৪৬ কোটি টাকার কর ফাঁকি, কর্মকর্তা বরখাস্ত

১৬

নির্বাচনে সেনাবাহিনীর প্রাসঙ্গিকতা

১৭

আগামী সরকারে থাকবেন কিনা জানালেন ড. ইউনূস

১৮

বাঁশের পাতার নিচে মিলল ৩৭ হাজার ঘনফুট সাদাপাথর

১৯

একাত্তরকে ভুলিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে : মির্জা ফখরুল

২০
X