দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের বিপজ্জনক ও আগ্রাসী আচরণ ঠেকাতে সাগরপাড়ের দুই দেশ এবং ঘনিষ্ঠ এশীয় মিত্র জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াকে সঙ্গে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র নতুন একটি সামরিক জোট গঠন করছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের অবকাশযাপন কেন্দ্র ক্যাম্প ডেভিডে স্থানীয় সময় গত শুক্রবার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইয়োল এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা এ-সংক্রান্ত বৈঠক শেষে একটি সমঝোতা চুক্তিতে সই করেছেন। খবর বিবিসি ও আলজাজিরার।
বৈঠক শেষে এক বিবৃতিতে তিন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা বলেন, আজ থেকে যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপান এই মর্মে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হচ্ছে যে, জোটভুক্ত কোনো দেশের নিরাপত্তা ও জাতীয় স্বার্থের জন্য হুমকি হয়ে ওঠা যে কোনো চ্যালেঞ্জ, উসকানি এবং আচরণ একসঙ্গে মোকাবিলা করবে। এ ছাড়া প্রতিবছর দক্ষিণ চীন সাগরে যৌথ সামরিক মহড়া এবং বছরে অন্তত একবার ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হবে।
বৈঠক শেষে উপস্থিত অতিথি ও সাংবাদিকদের উদ্দেশে বাইডেন বলেন, আমরা এই মর্মে ঐকমত্যে পৌঁছেছি যে, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনের ওপর যদি কোনো ধরনের হুমকি আসে, সে ক্ষেত্রে আমরা যৌথভাবে তা মোকাবিলা করব। এই তিন দেশের মধ্যে তথ্য বিনিময়বিষয়ক একটি হটলাইন থাকবে এবং নিরাপত্তা-সংক্রান্ত যে কোনো সিদ্ধান্ত পারস্পরিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে হবে। রাজনীতিতে কোনো নির্দিষ্ট শক্তির জবরদস্তির সময় শেষ হতে চলেছে। আন্তর্জাতিক আইনের স্বার্থে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। আজ আমি সত্যিই খুব খুশি।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা চীনের নাম উচ্চারণ না করে বলেন, শক্তিপ্রয়োগের মাধ্যমে একতরফাভাবে পূর্ব ও দক্ষিণ চীন সাগরে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চলছে। এর সঙ্গে কোনো কোনো শক্তি লাগাতার পারমাণবিক হামলার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইয়োল বলেন, তিন দেশের পারস্পরিক বোঝাপড়া এই সমঝোতার মাধ্যমে আরও দৃঢ় হলো। চীন ও উত্তর কোরিয়ার বাড়তে থাকা হুমকির মুখে জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে সম্প্রীতি বাড়ানোর উদ্যোগ নেন ইউন। এর ফলেই ত্রিপক্ষীয় এ বৈঠক সম্ভব হয়েছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণও এ ক্ষেত্রে প্রভাবকের ভূমিকা পালন করেছে।
চীন অবশ্য নবগঠিত এই জোটের ব্যাপারে মন্তব্য করার ক্ষেত্রে সতর্কতামূলক অবস্থান নিয়েছে। ওয়াশিংটনে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লিউ পেংগিউ বলেন, কারা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রথমে অশান্তি সৃষ্টি করে তা সামরিক পদ্ধতিতে সমাধানের চেষ্টা করে, তা সবাই জানে। এশিয়া প্যাসিফিক ও দক্ষিণ চীন সাগরে এই প্রচেষ্টা চালালে ওই অঞ্চলের দেশগুলো তার উপযুক্ত জবাব দেবে।
এদিকে তাইওয়ানের ভাইস প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম লাইয়ের সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সফরের প্রতিবাদে দেশটিকে ঘিরে সামরিক মহড়া চালাচ্ছে চীন। বেইজিং জানিয়েছে, তাইওয়ানের বিচ্ছিন্নতাবাদী ফোর্সকে কঠোর সতর্কবার্তা দেওয়ার অংশ এই মহড়া।
মন্তব্য করুন