কারাগারে বন্দি পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পিটিআই নেতা ইমরান খান বলেছেন, দেশের প্রয়োজনে তিনি কারাগারে যেতে প্রস্তুত ছিলেন। এ ছাড়া স্বাধীনতার জন্য প্রয়োজনে হাজার বছর কারাবাস সহ্য করতেও প্রস্তুত তিনি। গত শুক্রবার আইনজীবী দলের সদস্য উমিয়ার নিয়াজি অ্যাটক কারাগারে ইমরান খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের এসব বলেন। এদিকে ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, কারাগারে তার স্বামীকে বিষ প্রয়োগ করা হতে পারে। খবর দ্য ডন ও জিও নিউজের।
উমিয়ার বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ভালো আছেন। যদিও তার দাঁড়ি বড় হয়ে গেছে। তাকে (ইমরান খান) একটি আয়না এবং শেভিং কিট দেওয়া হয়েছে। তিনি কারাবাস নিয়ে মোটেও চিন্তিত নন। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কারাগারের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে তিনি ভাবছেন না। এক হাজার বছর জেলে রাখলেও তার কিছু যায় আসে না। তিনি সবকিছুর জন্য প্রস্তুত। কারণ স্বাধীনতার জন্য ত্যাগ স্বীকার করতেই হবে।
তাদের আইনজীবী দলের ছয়জনের মধ্যে শুধু তাকেই দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এই আইনজীবী জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কাছে আইনি দলের প্রবেশাধিকারের অনুমতি দিয়েছিলেন আদালত। কিন্তু তা অস্বীকার করায় জেলারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন করতে চান তিনি।
এদিকে বুশরা বিবি দাবি করেছেন, তার আশঙ্কা ইমরানের খাবারে বিষ মেশানো হতে পারে। আশঙ্কার কথা জানিয়ে গত ১৭ আগস্ট পাঞ্জাবের স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছে তিনি চিঠি লিখেন। এতে তিনি ইমরানকে অ্যাটক থেকে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে স্থানান্তরের আবেদন করেন। গত শুক্রবার সেই চিঠির বিষয় প্রকাশ করে দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলো।
চিঠিতে বুশরা আশঙ্কা প্রকাশ করে লিখেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও রাজনৈতিক দল পিটিআইর বর্তমান চেয়ারম্যান ইমরান খানের জীবন হুমকির মুখে আছে। তিনি এরই মধ্যে দুবার হামলার শিকার হয়েছেন। যার মধ্যে অস্ত্র হামলাও রয়েছে। এ কারণে আশঙ্কা করা হচ্ছে খাবারের মাধ্যমে জেলে তাকে বিষ প্রয়োগ করা হতে পারে। কারণ আগের হামলাকারী ও এর পরিকল্পনাকারীরা এখনো সংখ্যায় অনেক বেশি। তাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেপ্তার করেনি।
বুশরা বিবি চিঠিতে অভিযোগ করেছেন, ইমরানের সেলে ঘরের রান্না করা খাবার নিতে দেওয়া হচ্ছে না—যা আইন ও তার মৌলিক অধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তিনি বি ক্যাটাগরির সেলে থাকার অধিকার রাখেন। কিন্তু তাকে এমন সেলে রাখা হয়েছে যেখানে সাধারণ সুযোগ-সুবিধাও নেই। এটি জেল কোডের পরিপন্থি। তিনি অনুরোধ করেছেন ইমরানকে যেন বি ক্যাটাগরির সেলে নেওয়া হয়। এ ছাড়া, ঘরের খাবার খাওয়ার সুযোগ এবং তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেওয়া হয়। গত সপ্তাহে পিটিআইর কোর কমিটিও আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল, ইমরানকে ধীরে ধীরে বিষ প্রয়োগ করে মেরে ফেলা হতে পারে।
উল্লেখ্য, একটি দুর্নীতি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে বর্তমানে অ্যাটক কারাগারে কারাগারে বন্দি রয়েছেন ইমরান। গত ৫ আগস্ট তোশাখানা মামলায় পিটিআই নেতাকে দোষী সাব্যস্ত করে তিন বছরের কারাদণ্ড ও ১ লাখ রুপি জরিমানা করেন স্থানীয় একটি আদালত। এর পর পরই তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পিটিআইর পক্ষ থেকে ইমরানকে আদিয়ালা কারাগারে নেওয়ার আবেদন জানানো হলেও তাকে পাঞ্জাব প্রদেশের কুখ্যাত অ্যাটক কারাগারে পাঠানো হয়।
আইএইচসি প্রধান বিচারপতি আমের ফারুক এবং বিচারপতি তারিক মেহমুদ জাহাঙ্গিরির সমন্বয়ে গঠিত একটি ডিভিশন বেঞ্চে আগামী মঙ্গলবার ইমরানের মামলার পরবর্তী শুনানি হবে। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ১৪০টির বেশি মামলা রয়েছে। ২০২২ সালের এপ্রিলে অনাস্থা ভোটে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। এর পরই সন্ত্রাস, সহিংসতা, ব্লাসফেমি, দুর্নীতি এবং হত্যার মতো অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে।
মন্তব্য করুন