গ্রিসের উপকূলে ভূমধ্যসাগরে অতিরিক্ত যাত্রীবাহী নৌকাডুবির ঘটনায় মারা যাওয়াদের মধ্যে তিনশরও বেশি ছিল পাকিস্তানের নাগরিক। পাকিস্তানের সিনেটের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ সাদিক সানজরানি গত রোববার এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন। এ ছাড়া প্রাণ হারানো নাগরিকদের পরিবারের প্রতি তিনি সমবেদনা জানান। গত বুধবার মধ্যরাতে গ্রিসের দক্ষিণাঞ্চলীয় পাইলোস শহর থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ভূমধ্যসাগরে নৌকা ডুবির ঘটনায় এসব প্রাণহানি হয়। মাছ ধরার নৌকাটিতে নারী, শিশুসহ প্রায় ৭৫০ অভিবাসন প্রত্যাশী ছিল। খবর দ্য ডন ও আলজাজিরার।
বিবৃতিতে সানজরানি বলেন, ওই বিদেহী আত্মারা চিরশান্তি পাক। এই বিধ্বংসী ঘটনাটি মানব পাচারের মতো; এই ঘৃণিত কাজের নিন্দা ও এর সুরাহা করা জরুরি। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকা মানব পাচারকারীদের চিহ্নিত করতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ রোববার একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। এক টুইটে তিনি এ ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দেন। এ ছাড়া মারা যাওয়াদের স্মরণে গতকাল সোমবার পাকিস্তানে এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালিত হয়। যদিও ওই ভয়াবহ নৌকাডুবির ঘটনায় কতজন পাকিস্তানির মৃত্যু হয়েছে গ্রিসের কর্তৃপক্ষ এখনো তা নিশ্চিত করেনি।
এদিকে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ ১০ অভিযুক্ত মানব পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। কর্মকর্তারা বলেন, ৯ জনকে পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীর থেকে আটক করা হয়েছে। একজনকে আটক করা হয়েছে পাঞ্জাবের গুজরাট শহর থেকে। পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরের স্থানীয় কর্মকর্তা চৌধুরী শওকত বলেন, এ কাজে তারা জড়িত কি না, তা নিশ্চিত হতে তদন্ত চলছে।
প্রসঙ্গত, প্রতিবছর হাজার হাজার তরুণ পাকিস্তানি সচ্ছল জীবনের সন্ধানে উত্তাল ভূমধ্যসাগরে রাবারের দুর্বল নৌকায় চেপে গাদাগাদি করে অবৈধভাবে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করেন। বর্তমানে দেশটি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে রয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও দেশটি আইএমএফের কাছ থেকে অর্থনৈতিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চাইছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশ পাকিস্তানে প্রবৃদ্ধি প্রায় থমকে গেছে এবং এক বছর ধরে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য আমদানিতে দেশটিকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ কারণে ভালো ভবিষ্যতের জন্য বিপজ্জনক পথ পাড়ি দিয়ে ইউরোপে যেতে চাওয়া পাকিস্তানির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে তরুণরা প্রচণ্ড ঝুঁকি নিয়ে পূর্ব পাঞ্জাব এবং উত্তর-পশ্চিম খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশ থেকে প্রায়ই ইউরোপে প্রবেশের জন্য ইরান, লিবিয়া, তুরস্ক এবং গ্রিসের মতো দেশগুলোকে ব্যবহার করে।
জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানিয়েছে, প্রায় ৭৫০ নারী, পুরুষ ও শিশু নিয়ে গত বুধবার নৌকাটি ডুবে যায়। বেঁচে যাওয়া আরোহীদের দেওয়া প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, মাছ ধরার নৌকাটিতে নারী ও শিশুসহ অন্তত ৪০০ পাকিস্তানি, ২০০ মিশরীয় ও ১৫০ সিরীয় ছিলেন।
প্রতিবছর যুদ্ধ, নিপীড়ন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে হওয়া উদ্বাস্তু ও দারিদ্র্যের ঝুঁকিতে থাকা হাজার হাজার মানুষ উন্নত জীবনের আশায় ঝুঁকি নিয়ে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এসব লোকজনকে ভূমধ্যসাগরের বিপৎসংকুল পথে নৌকায় তুলে দেওয়া পাচারকারীদের নিন্দা জানান ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) হোম অ্যাফেয়ার্স কমিশনার ইলভা জোহানসন। তিনি বলেন, ‘তারা (পাচারকারীরা) লোকজনকে ইউরোপে পাঠাচ্ছে না, মৃত্যুর কাছে পাঠাচ্ছে। তাদের প্রতিরোধ করা অত্যন্ত জরুরি।’
মন্তব্য করুন