গাজায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে বেজায় ক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ওয়াশিংটন। এজন্য আইসিসির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ারও চিন্তা করছে দেশটি। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, নিষেধাজ্ঞা জারির বিষয়ে আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে তার কাজ চলছে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি যেভাবে বলা হচ্ছে, আদতে তা তত সহজ নয়।
৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলা ও তারপর গাজায় ইসরায়েলি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সম্প্রতি আইসিসির প্রধান প্রসিকিউটর করিম খান ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও হামাস নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি আবেদন করেন। বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের পাশাপাশি হামাসের তিন কর্মকর্তা গাজার নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার, হামাসের কাশেম ব্রিগেড মিলিটারি উইংয়ের কমান্ডার মোহাম্মদ দাইফ এবং হামাসের পলিটিক্যাল ব্যুরোর প্রধান ইসমাইল হানিয়ার বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চেয়েছেন করিম খান। নেতানিয়াহুর গ্রেপ্তার চাওয়ার ঘটনাটিকে চরম অপমান হিসেবে দেখছে ইসরায়েল। তার মিত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও এতে ক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি বলেন, নেতানিয়াহু ও হামাস নেতাদের এক পাল্লায় মাপাটা ঠিক হচ্ছে না। এর পরদিনই গত বুধবার মার্কিন কংগ্রেসের এক শুনানিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন আইসিসির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আভাস দেন। তিনি বলেন, আমরা এ বিষয়ে কাজ করছি। মার্কিন আইনপ্রণেতাদের মধ্যে এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। আইসিসির এ সিদ্ধান্তকে তিনি সম্পূর্ণ ভুল বলে অভিহিত করে এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়ার কথা জানান।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, কাজটি সহজ হবে না। কারণ, অনেক ডেমোক্রেটিক আইনপ্রণেতা এ প্রচেষ্টার পেছনে থাকবেন কি না, তা স্পষ্ট নয়। উদারপন্থি আইনপ্রণেতারা এ উদ্যোগের পেছনে থাকবেন বলে মনে হয় না। বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচনের আগে এ সিদ্ধান্ত দলের জন্য কতটা অনুকূল হবে, তা নিয়ে তাদের সন্দেহ রয়েছে। তাদের মতে এটা নির্বাচনের আগে হিতে বিপরীত হতে পারে। তরুণ ভোটাররা এ উদ্যোগের কারণে ডেমোক্র্যাটদের ওপর বিরক্ত হতে পারে। এমনিতেই গাজা ইস্যুতে বাইডেন সরকার অনেক চাপে রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্তিমিত হয়ে গেলেও এর একটা প্রভাব নির্বাচনে পড়বে বলে মনে করছেন তারা। এরই মধ্যে আইসিসির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিলে সেটা বরং অনেক নেতিবাচক ফল আনতে পারে। সিনেটর ক্রিস কুনস, ডেলাওয়্যারের একজন ডেমোক্র্যাট এবং সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটির সদস্য বিবিসিকে বলেন, আইসিসির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে কি না, সে বিষয়ে সাবধানে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। উভয় দলের বিভিন্ন কমিটির সদস্যদের সঙ্গে এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করেছেন বলে জানিয়েছেন কুনস। কিন্তু কিছু বামপন্থি ডেমোক্র্যাট আইসিসির কার্যক্রমের প্রতি তাদের সমর্থন প্রকাশ করেছেন। মিনেসোটার কংগ্রেসওমেন ইলহান ওমর বলেছেন, আইসিসির অভিযোগগুলো ‘গুরুত্বপূর্ণ’ এবং যুক্তরাষ্ট্রকে এর কাজকে সমর্থন করা উচিত—যেমনটা অতীতে লিবিয়ার মামলার সময় করা হয়েছে। সোমবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তারি পরোয়ানার এ আবেদন নিছকই একটা বিচারিক প্রক্রিয়ার সূচনা। আইসিসি একটা কার্যকরী আদালত, যেখানে দোষী সাব্যস্ত, খালাস ও বরখাস্ত করা হয়। যেমনটা আমরা একটা নিরপেক্ষ ও অরাজনৈতিক বিচার বিভাগ থেকে আশা করি।’
এদিকে আরেকটি দিক থেকেও নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি সহজ হবে না বলে মনে করা হচ্ছে। ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানার সিদ্ধান্তের সময় আইসিসির কৌঁসুলিদের সমর্থন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সে সময় আইসিসির প্রশংসাও করেছে ওয়াশিংটন। এখন সেই আইসিসির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে কতটা সম্ভব, সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আর রাশিয়াও বেশ আগ্রহের সঙ্গে সেদিকে তাকিয়ে আছে।