ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭৫ একরের সুবিশাল ক্যাম্পাস গাছগাছালি আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাকানন। ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করে এদিক-ওদিক তাকালে চোখে পড়বে সবুজের অপূর্ব সম্মিলন। লিখেছেন মারুফ হোসেন, ছবি তুলেছেন মামুন মিসবাহ।
বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তন
ভবনটির নাম বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তন। এই ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র (টিএসসি) আড্ডাপ্রেমীদের পছন্দের জায়গা। ক্যাম্পাসের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের অন্যতম স্থানও এটি। টিএসসির ক্যাফেটেরিয়ায় জমে গান-আড্ডা। টেবিলকে তবলা বানিয়ে গিটারের টুংটাংয়ে সুর তোলেন গানপ্রেমীরা। কোনো মিটিং শেষে কিংবা ডিপার্টমেন্টের সবাই মিলে গ্রুপ ছবি তোলার নিখুঁত জায়গাও টিএসসি। পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী সুকান্ত দাসের মতে, ‘প্রতিটি শিক্ষার্থীর কাছে ছাত্র শিক্ষক মিলনায়তন অন্যরকম একটা আবেগের জায়গা। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনাসহ বিভিন্ন কাজ হয়ে থাকে। প্রগতিশীলতার চর্চা কেন্দ্র টিএসসি। যদিও অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে তারপরও আমাদের কাছে এটি অনেক আবেগের জায়গা।’
ডায়না চত্বর
বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক দিয়ে সামনে এগোলেই চোখে পড়ে ডায়না চত্বর। ক্যাম্পাসের সারিবদ্ধ বাসগুলো আসা-যাওয়ার সময় ডায়নার দুপাশে যখন কিছুক্ষণের জন্য থামে, তখন যেন ক্যাম্পাসের চিরচেনা রূপটিই চোখে ধরা দেয়। চত্বরের সবুজ গাছের ছায়ায় বসে খুনসুটি, গল্প, আড্ডা কিংবা বিশ্রামে শিক্ষার্থীদের পছন্দের অন্যতম জায়গাও ডায়না চত্বর। এ চত্বরকে উদাসী হৃদয়ের খোরাক মনে করেন দাওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মামুন মেসবাহ। তিনি বলেন, ‘ক্লাসের ফাঁকে, গাড়ির অপেক্ষায়, গ্রুপ স্টাডি, বন্ধু মহলের আড্ডায় শত গল্পের সাক্ষী হয়ে রয়েছে এই চত্বর। সেখানে গেলেই অন্যরকম একটা ভালো লাগা কাজ করে।’
মফিজ লেক
ক্যাম্পাসের পশ্চিম পাশে একেবারে সীমান্ত ঘেঁষে মফিজ লেক। মফিজ লেককে ইবির হাতিরঝিলও বলা হয়। এখানে নানা প্রজাতির পাখির দেখা মেলে বছরের বিভিন্ন সময়। এখানে দাঁড়িয়ে ক্যাম্পাসের মনোহর দৃশ্য উপভোগ করা যায় ওয়াচ টাওয়ারে দাঁড়িয়ে। বিকেলে বন্ধুদের গল্প-আড্ডা কিংবা ফটো তোলার হিড়িক পড়ে যায় লেকের পাশে। ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী হোসনেয়ারা খাতুন বলেন, ‘মফিজ লেক শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী নয়, বাইরে থেকে আসা দর্শনার্থীদেরও পছন্দের জায়গা। লেকের চারপাশের দৃশ্য অবলোকন করতে এসে অনেকে আনমনা লিখে ফেলেন কবিতা কিংবা মজার কোনো গল্প। এখানকার ওয়াচ টাওয়ারটিতে দাঁড়িয়ে লেকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভোলেন না দর্শনার্থীরা। বর্তমানে এটির নির্মাণকাজ চলমান এবং কাজ সম্পন্ন হলে লেক আরও সৌন্দর্যে ভরে উঠবে, এমনটাই আশা করছি।’
আমতলা
আমগাছের ছায়ায় শিক্ষার্থীদের ছোটাছুটি, খেলাধুলা কিংবা খুনসুটি সবই সমানতালে চলে আমতলায়। দুদণ্ড বিশ্রামের জন্য এখানে ছুটে আসেন অনেকে। ইবির টিএসসি প্রাঙ্গণ থেকে সামনে তাকালেই চোখে পড়ে আমতলা। এখানে আছে বাংলা মঞ্চ। বইমেলার সময় আমতলাও বইয়ের স্টলে সেজে ওঠে। জন্মদিনে বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে কেক নিয়ে আমতলায় হাজির হতে দেখা যায় অনেককে। ব্যবস্থাপনার শিক্ষার্থী মাহমুদা টুম্পা বলেন, ‘টিএসসির কাছাকাছি ও ছায়া-সুনিবিড় হওয়ায় আমতলায় ব্যাট বল নিয়ে হাজির হয় অনেকে। ক্লান্ত শরীরে অনেক সময় আমতলায় ছুটে যাই ছায়ায় বসে মুক্ত হাওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে।’
ঝালচত্বর
ঝালমুড়ির ঝাঁজে এখানে আড্ডায় জমে ভিন্নমাত্রা। ঝালের ছড়াছড়ি এখানে। খাওয়া-দাওয়া আর আলাপ-আলোচনা, আড্ডা, খোশগল্প সব কিছুতেই ঝাল চাই। এটি প্রশাসনিক ভবনের পশ্চিমে। মার্কেটিংয়ের তাজুল ইসলামের মতে, ‘ঝালচত্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে উৎসবমুখর জায়গা। সব ডিপার্টমেন্টের মিলনমেলা। তীব্র তাপদাহ থেকে মুক্তি পেতে মামার একগ্লাস ঝাল শরবতে নিজেকে আবার রিফ্রেশ করা যায়। নাশতা খেয়ে বন্ধুর হাতে বিল ধরিয়ে দেওয়া, চা কফির আড্ডায় মাতিয়ে রাখেন এ চত্বরটিকে।’
পেয়ারাতলা
বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেশিয়ামের দক্ষিণ পাশে পেয়ারাতলা। পাশে আবার খেলার মাঠ। চড়ুইভাতির জন্য পেয়ারাতলা বিখ্যাত স্পট। অর্থনীতির অনিল মো. মোমিন বলেন, ‘ক্যাম্পাসে আড্ডা, গ্রুপ স্টাডি কিংবা কোয়ালিটি টাইম কাটানোর জন্য সেরা জায়গা পেয়ারাতলা। সবুজ সমারোহ, বাতাস আর কোলাহলমুক্ত জায়গাটির আবেদন আলাদা। পিকনিক করা, জন্মদিন উদযাপনসহ বিভিন্ন সেলিব্রেশনে এখানে আসেন শিক্ষার্থীরা।’
বটতলা
ডায়না চত্বরের পশ্চিমে এবং বিজ্ঞান ভবনের মাঝে সংক্ষিপ্ত বটতলা। বিশ্রাম, বইপড়া আর ছবি তোলা—সবই গাছের নিচে। দাওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজের সাইফুর রহমান ফাহিমের মতে, ‘প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নির্দিষ্ট কিছু জায়গা রয়েছে, যেখানে শিক্ষার্থীরা সংস্কৃতি চর্চা, গান বা সৃষ্টিশীল চর্চার জন্য বেছে নেন। ইবির সেই জায়গাটি হলো বটতলা।’
মন্তব্য করুন