বুড়াইল নদীর ওপর একটি সেতুর অভাবে চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন রংপুরের পীরগাছার ১০ গ্রামের হাজার হাজার মানুষ। ঝুঁকিপূর্ণ নড়বড়ে একটি বাঁশের সাঁকোই তাদের একমাত্র ভরসা। এতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। বর্ষা মৌসুমে সেই সাঁকোটি ভেঙে গেলে দুর্ভোগের শেষ থাকে না স্থানীয়দের। বিশেষ করে অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে না পারায় অন্তঃসত্ত্বা ও গুরুতর রোগীদের হাসপাতালে আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে বিপাকে পড়ছেন তারা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বারবার আশ্বাসেও সেখানে সেতু নির্মিত না হওয়ায় ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা।
জানা যায়, উপজেলার অন্নদানগর ইউনিয়নের জগজীবন গ্রামের দুলু হাজির বাড়ির পাশে বুড়াইল নদীর ওপর জনগণের চলাচলের দুর্ভোগ দেখে ৩০ বছর আগে তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন একটি বাঁশের সাঁকো করে দেন। তখন থেকে স্কুল-কলেজ, হাট-বাজার, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন কারণে জগজীবন, গোবড়াপাড়া, হরিরাম, জিগাবাড়ী, চিলাখাল, নয়াগ্রাম, রতনপুর, বাগভাসা, জ্ঞানগঞ্জ, জামতলাসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ সেই সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করে আসছেন।
জগজীবন গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ৫০ থেকে ৬০ মিটার বাঁশের সাঁকোটি দিয়ে কিছু শিক্ষার্থী হেঁটে এপার থেকে ওপারে যাচ্ছেন। ভ্যান, রিকশা, সাইকেল, মোটরসাইকেল ধরে ধরে সাবধানে পারাপার করা হচ্ছে।
স্থানীয় শহিদুল ইসলাম বলেন, বর্ষা মৌসুমে সাঁকোটি অনেক সময় ভেঙে যায়। তখন মানুষের দুর্ভোগের শেষ থাকে না। মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনাও ঘটে। এখানে অ্যাম্বুলেন্স ঢুকে না। মুমূর্ষু রোগী সময় মতো হাসপাতালে নিতে পারি না।
স্থানীয় স্কুলশিক্ষার্থী খুশি আক্তার বলে, আমরা যখন এই সাঁকো দিয়ে চলাচল করি, তখন সাঁকোটি নড়বড় করে। তখন আমাদের ভীষণ ভয় লাগে। বর্ষাকালে সাঁকো ভেঙে গেলে আমাদের কলাগাছের ভেলায় করে যাতায়াত করতে হয়। অনেক সময় বই পুস্তক ও কাপড় ভিজে যায়। আমরা সময় মতো যেতে পারি না স্কুলে। এখানে একটি ব্রিজ করা হলে আমাদের খুব উপকার হবে।
দেওয়ান সালেহ আহমেদ দ্বিমুখী দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক মোকছেদ আলী বলেন, আমি এই সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করি। সাঁকোটি খুব ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে একটা ব্রিজ জরুরি দরকার।
স্থানীয় ফরমান আলী বলেন, সাঁকোটি দিয়ে হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করে। এখানে সেতু নির্মাণ ও রাস্তার জন্য আমরা এলাকাবাসী সরকারকে জমিও দিয়েছি। জনপ্রতিনিধিদের আশ্বাস ও সরকারি কর্তৃপক্ষের অনেকবার মাপামাপির পরও অদৃশ্য কারণে এখানে সেতু হচ্ছে না।
ইউপি সদস্য রেজাউল করিম রেজা বলেন, এই এলাকার মানুষের দুঃখ-দুর্দশা এই বাঁশের সাঁকো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন অগ্রযাত্রা যেন এখানে এসে থমকে গেছে। আমরা চাচ্ছি এই বাঁশের সাঁকোটি দ্রুত পাকা ব্রিজে পরিণত হোক। এখানকার মানুষের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব হোক।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাজমুল হক সুমন বলেন, ‘জগজীবন মৌজায় বুড়াইল নদীর ওপর সেতু নির্মাণের বিষয়ে আমরা অবগত। এমপি মহোদয়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে সেতু নির্মাণের ব্যাপারে শিগগির উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।’