ছাত্র-জনতার আন্দোলন ভিন্ন দিকে নিতেই জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন দলটির আমির শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, দেশ থেকে হিংসা-বিভক্তির রাজনীতির অবসান চাই। আমরা সবাইকে ক্ষমা করে দিলাম। কারও প্রতি জুলুম করা যাবে না। গতকাল বুধবার রাজধানীর গুলশানে হোটেল লেকশোরে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
সবাইকে ক্ষমা করে দেওয়া প্রসঙ্গে শফিকুর রহমান বলেন, আপনাদের সাক্ষী রেখে বলছি, রাজনৈতিক দল হিসেবে কারও প্রতি আমাদের কোনো ক্ষোভ নেই। আমরা সবাইকে ক্ষমা করে দিলাম। কিন্তু যিনি সুনির্দিষ্ট ক্রাইম করেছেন, তাদের সেই অপরাধের শাস্তি পেতে হবে। এই শাস্তিটা নিশ্চিত না হলে সমাজে কোনো সংশোধন হবে না। তিনি বলেন, আমরা হিংসার রাজনীতির কবর চাই, এটা আর মাথাচাড়া দিয়ে না উঠুক। আমরা বিভক্তির রাজনীতির কবর চাই, এটাও মাথাচাড়া দিয়ে না উঠুক। কোনো বিষয়ে আমরা জাতির বিভক্তি চাই না। সব ক্ষেত্রে আমরা চাই জাতি ঐক্যবদ্ধ থাকুক।
সভায় নয়া দিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, বাংলাভিশনের প্রধান সম্পাদক আবদুল হাই সিদ্দিকী, মানবজমিনের নির্বাহী সম্পাদক শামীমুল হক, এটিএন বাংলার পরিচালক (বার্তা) হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ এবং ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, সাংবাদিক নেতা আবদুল হাই শিকদার, এমএ আজিজ, এলাহী নেওয়াজ খান সাজু প্রমুখ বক্তব্য দেন। এ সময় যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম, কালবেলার সম্পাদক ও প্রকাশক সন্তোষ শর্মা, খবরের কাগজের এনাম আবেদীন, বৈশাখী টিভির সাইফুল ইসলাম, প্রতিদিনের বাংলাদেশের বাছির জামাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া জামায়াতের নায়েবে আমির মজিবুর রহমান, সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, হামিদুর রহমান আজাদ, মোয়ায্যম হোসাইন হেলাল, এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, নির্বাহী পরিষদের সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, মোবারক হোসাইন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, উত্তরের আমির সেলিম উদ্দিন, প্রচার ও মিডিয়া সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ উপস্থিত ছিলেন।
শফিকুর রহমান বলেন, সাংবাদিকরা যাতে স্বাধীন বিবেকের জায়গা থেকে কাজ করতে পারেন, সেই পরিবেশ নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি আমাদের কাছে আপনারা চেয়েছেন। আমি দলের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, ইনশাআল্লাহ আপনারা এটা রেকর্ডে রাখবেন। কখনো যদি আমাদের হাতে এই সুযোগ আসে, যে প্রতিশ্রুতি আপনারা আশা করেছেন, সেটা আপনারা পাবেন ইনশাআল্লাহ।
জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার বিষয়টিকে কলঙ্ক আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ১ আগস্ট হঠাৎ আমাদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো, আমাদের প্রিয় ছাত্র সংগঠনকেও নিষিদ্ধ করা হলো। ছাত্র আন্দোলনকে ভিন্ন দিকে নিতেই এটি করা হয়েছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, কেউ কেউ চেয়েছিলেন এ রকম কিছু একটা হলে জামায়াতে ইসলামী তার সব শক্তি নিয়ে প্রতিবাদ করবে, তখন অন্য কিছু হবে এটাকে কেন্দ্র করে।
গণহারে মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভিক্টিমরা যদি সংগত উদ্যোগ নেয়, সেই উদ্যোগে সবার সাপোর্ট করা দরকার। কিন্তু অসংগত কিছু হলে আমরা তার সঙ্গে নেই। গণহারে একটা হত্যা মামলায় ৫০০ জনকে আসামি করা হয়, এটা কতটুকু যৌক্তিক, চিন্তা করা উচিত। আমরা বলেছি, সিম্বলিক কিছু মামলাই মানুষের শিক্ষার জন্য যথেষ্ট।
জামায়াত আমির বলেন, আমরা কেউ বিপদে পড়তে চাই না। আমরা চাই সবাই সবার সম্মানিত প্রতিবেশী হিসেবে বাস করুক। এটা শুধু ভারত দিয়ে কথা নয়। সবার ক্ষেত্রে আমাদের একই কথা। আরেকটা জিনিস চাইব, বন্ধু হিসেবে আমাদের সাহায্য করে, কিন্তু মেহেরবানি করে কেউ আমাদের বাধ্য করার চেষ্টা করবেন না। ডিসিশনটা আমাদের জনগণকে নিতে দিন।
শফিকুর রহমান বলেন, আমরা সব ধরনের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে আমাদের যা সামর্থ্য আছে তা নিয়ে দাঁড়িয়ে গেছি। এখানে ধর্মীয় ভিত্তিতে কাউকে কিছু করতে দেওয়া হবে না। আমার যদি এদেশে শান্তিতে বসবাস করার অধিকার থাকে, তাহলে অন্য সব ধর্মের মানুষেরও একই অধিকার আছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বলে একটা শব্দ চালু আছে, এটার মাধ্যমে সমাজটাকে ডিভাইড করা হয়েছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় এবার আপনারা দেখেছেন মাদ্রাসার ছাত্ররাও পাহারা দিয়েছে। আমাদের দল ছিল, বিএনপি ছিল, ছাত্রদল ছিল, এর পাশাপাশি মাদ্রাসাছাত্ররাও ছিল।