শফিকুল ইসলাম
প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:২৬ এএম
আপডেট : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:০১ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

সংস্কারের রূপরেখা ইতিবাচক, আস্থা রাখতে চায় দলগুলো

রাজনৈতিক নেতাদের অভিমত
সংস্কারের রূপরেখা ইতিবাচক, আস্থা রাখতে চায় দলগুলো

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্র সংস্কারের দাবি উঠেছে সর্বস্তরে। সেই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দেশের মৌলিক ছয়টি খাতে কাঠামোগত সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। গত বুধবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ পদক্ষেপের কথা জানান ইউনূস। সংবিধান, নির্বাচন, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কারে কমিশন গঠনের ঘোষণা দেন তিনি। এ সময় ড. ইউনূস জানান, চলতি মাসে পূর্ণাঙ্গ কমিশন গঠিত হওয়ার পর কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে তার কাজ ১ অক্টোবর থেকে শুরু করতে পারবে এবং পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে সম্পন্ন হবে।

সংস্কারের এ উদ্যোগকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা। তারা বলছেন, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর তাৎক্ষণিকভাবে তাদের নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ছিল।

তবে দায়িত্বগ্রহণের মাসখানেক সময় অতিবাহিত হওয়ার পর সরকারের কর্মকাণ্ড দিন দিন বেশ পরিণত হয়ে উঠছে। ছাত্র-জনতার মৌলিক দাবি পূরণ এবং দেশের সার্বিক পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার লক্ষ্যে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো নিঃসন্দেহে ইতিবাচক এবং প্রশংসনীয়। ফলে ড. ইউনূসের নেতৃত্বের প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা বাড়ছে উল্লেখ করে দ্রুত রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ সম্পন্ন করার বিষয়ে জোর দেন নেতারা।

প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ঘোষিত সংস্কারের রূপরেখা ঘোষণা ও কমিশন গঠনের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সংস্কারের কথা আমরা সবাই বলেছি, সংস্কার প্রয়োজন। অতিদ্রুত যেন এই সংস্কারের কাজগুলো শেষ করা হয়। মূল যে বিষয়- গণতন্ত্রের জন্য, জনগণের প্রতিনিধিদের শাসন, জনগণের পরিচালনায় তাদের নির্বাচিত পার্লামেন্ট দিয়ে দেশ চলবে সেই বিষয়টি যেন অবশ্যই খুব দ্রুততার সঙ্গে সমাপ্ত হয়, সেটাই আমাদের প্রত্যাশা থাকবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাফল্য কামনা করে বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, আমরা মনে করি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কাজ করছে। এই কাজ করার জন্য তাদের সময় সুযোগ সবই দেওয়ার জন্য আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আশা করব, তারা যথা শিগগিরই সম্ভব স্বল্প সময়ের মধ্যে এই কাজগুলো (সংস্কার) শেষ করে নির্বাচনের দিকে যাবেন। তারা জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাবেন।

প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ কালবেলাকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইউনূস সংস্কার নিয়ে যে রূপরেখা দিয়েছেন, আমরা তাকে স্বাগত জানাই। কারণ সংস্কার তো হতেই হবে। সংস্কারের মাধ্যমেই নতুন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হবে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ অনেক জঞ্জাল রেখে গেছে। সেগুলো সরানো দরকার। এ ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে টেকসই সংস্কারের মাধ্যমে জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে। সেটা হওয়া উচিত যৌক্তিক সময়ের মধ্যে। খুব বেশি বা কম সময় দিয়ে তাড়াহুড়াও করা উচিত না।

সরাসরি রাজনৈতিক দল না হয়েও দেশের রাজনীতিতে গত কয়েক বছরে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হয়ে ওঠা হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমির মাওলানা মুহিউদ্দীন রাব্বানী কালবেলাকে বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রয়োজনীয় রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। বিশ্বাস করি, সরকার প্রধান যে রূপরেখা দিয়েছে, তা সময়োপযোগী। এখন সংস্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করাটা বাঞ্ছনীয়।

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ ও সংস্কারের লক্ষ্যে ছয়টি কমিশন গঠনের সিদ্ধান্তকে গুরুত্বপূর্ণ বলে আখ্যায়িত করলেও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক মনে করেন, জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই কেবল সংস্কারকে টেকসই রূপ দিতে পারেন। কালবেলাকে তিনি বলেন, আশা করি, রাজনৈতিক দল ও গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনদের মতামত ও সম্মতির ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী সরকার জরুরি কাজগুলো এগিয়ে নেবে।

সরকারের বিভিন্ন ইতিবাচক ভূমিকার জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু। তবে সরকারের কর্মপ্রক্রিয়া নিয়ে গঠনমূলক কিছু পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে কালবেলাকে তিনি বলেন, আমরা অনেক ত্যাগ ও জীবনের বিনিময়ে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাফল্য চাই; কিন্তু যে সিদ্ধান্ত নিতে এক দিন লাগার কথা; তা পাঁচ দিনেও হচ্ছে না, উপরন্তু প্রশাসনে চলছে অস্থিরতা। এখনো পুলিশকে সক্রিয় করার কোনো পদক্ষেপ দেখছি না। জনপ্রশাসনেও অস্থিরতার বিষয়ে আলী ইমাম মজুমদারের ভূমিকা নিয়ে বিরাট প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, সেখানে অস্থিরতার কোনো সুযোগ নেই।

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের ব্যাপারে মঞ্জু বলেন, তিনি (ড. ইউনূস) বার বার ছাত্র-জনতার বিপ্লবের কথা বলছেন, আমরা সরকারের ভূমিকায় সত্যিকার অর্থেই বিপ্লবের চেতনা দেখতে চাই, কথার কথা নয়। তিনি ছয়টি কমিশন গঠনের কথা উল্লেখ করে বলেন, নির্বাচন কমিশন ও দুর্নীতি দমন কমিশন নিজেই একটা কমিশন, এই জায়গাগুলোতে যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, সেখানে তাদের সরাসরি কমিশনের চেয়ারম্যান আকারে নিয়োগ দিলেই তারা যথেষ্ট সংস্কার করতে পারতেন। নতুন করে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ফেলার কোনো প্রয়োজন ছিল না।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘যারা বলে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে না, তারা বোকার স্বর্গে বাস করে’

চোখ পিটপিট বেশি করে ছেলেরা নাকি মেয়েরা? 

এশিয়া কাপের আগে ভারত শিবিরে আরও দুঃসংবাদ

সৈকতে ভেসে এলো বিরল প্রজাতির পাইন্না সাপ

অজ্ঞাত একাধিক দেশে অস্ত্র কারখানা গড়ে তুলেছে ইরান

আকিজ বশির গ্রুপে চাকরি, বেতন ছাড়া পাবেন আরও বিভিন্ন সুবিধা

দুই কোরিয়ার সীমান্তে উত্তেজনা তুঙ্গে

৪ মাস পর বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে চাল আমদানি শুরু

২০২৬ সালের এইচএসসি পরীক্ষার সময় জানাল এনসিটিবি

রিমান্ডের পর হাসপাতালে ভর্তি সাবেক প্রেসিডেন্ট

১০

জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে : ইলিয়াসপত্নী লুনা

১১

ছাত্রদের রাজনীতিতে ব্যবহার করা জুলুম : বায়তুল মোকাররমের খতিব

১২

ডেঙ্গুতে আরও ৪ জনের মৃত্যু

১৩

অ্যাডিলেডে শেষ ম্যাচেও সোহানদের ভরাডুবি

১৪

লটারির টিকিট কেটেই নারী দেখলেন ২ কোটি টাকা তার হাতে

১৫

কোটালীপাড়া পৌর ছাত্রলীগ নেতা জামিল গ্রেপ্তার

১৬

দেশে বিশ্বমানের লিফট তৈরি করছে প্রাণ-আরএফএল

১৭

পরিবর্তন হয়নি যেসব ফোনের ডায়াল প্যাড, কারণ কী?

১৮

‘ব্যাটিংয়ের দিক থেকে বাংলাদেশ ও নেপাল একই মানের দল’

১৯

হত্যা মামলায় জাবির সাবেক শিক্ষক গ্রেপ্তার

২০
X