

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ১১তম ব্যাচের নবীন শিক্ষার্থীকে রাতভর র্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সোমবার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার খান সানজিয়া সুলতানা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, তদন্ত কমিটিকে আগামী ৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন উপাচার্যের দপ্তরে জমা দিতে বলা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রাহাত হোসাইন ফয়সালকে আহ্বায়ক করে তদন্ত কমিটিতে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. লোকমান হোসেনকে সদস্য সচিব এবং লোকপ্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. সিরাজিস সাদিক ও সমাজকর্ম বিভাগের প্রভাষক মোস্তাকিম মিয়াকে সদস্য করা হয়েছে।
এর আগে গত বুধবার (২৬ নভেম্বর) ক্যাম্পাসের বাইরে দপদপিয়া সেতুর টোলপ্লাজা সংলগ্ন একটি বাসায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ১১তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের আল শাহারিয়ার মোহাম্মদ মুশতাকিম মজুমদার নামে শিক্ষার্থীকে রাতভর র্যাগ দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় রোববার (৩০ নভেম্বর) একই বিভাগের ১০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নাফিজ ফারদিন আকন্দ স্বপ্নীল, মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন, ইমন মাহমুদ, নেহাল আহমেদ ও মিরাজের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রক্টর ও বিভাগের চেয়ারম্যান বরাবর তিনটি অভিযোগ দেন র্যাগিংয়ের শিকার শিক্ষার্থী।
অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, ২৬ নভেম্বর রাত আনুমানিক ৮টার দিকে ইমিডিয়েট সিনিয়রদের নির্দেশে তারা মোট ২৮ জন শিক্ষার্থী রূপাতলী হাউজিং মাঠে উপস্থিত হন। সেখান থেকে রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাসে করে তাদের টোল প্লাজার কাছে সিনিয়র নেহাল আহমেদের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়।
বাসায় প্রবেশের পর নবীন শিক্ষার্থীদের তিনতলার একটি কক্ষে ঢুকিয়ে গেট আটকে দেওয়া হয় এবং প্রমাণ রাখার সুযোগ বন্ধ করতে সবার মোবাইল ফোনসহ ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলো কেড়ে নেওয়া হয়। এরপর শুরু হয় ভয়াবহ মানসিক নির্যাতন। একপর্যায়ে রাত ১১টায় বাসায় ফেরার কথা বলতেই অভিযুক্ত সিনিয়ররা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।
লিখিত অভিযোগ অনুযায়ী, অভিযুক্ত সিনিয়র নাফিজ ফারদিন আকন্দ স্বপ্নীল তাকে কবিতা আবৃত্তি করতে বাধ্য করেন এবং ভুক্তভোগীর বাবা-মাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। ভুক্তভোগী কান্না করলে অভিযুক্ত মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন তাকে ‘সহানুভূতি পাওয়ার জন্য কান্না করছে’ বলে অভিযোগ করে ফ্লোরে বসে ১০ মিনিট কাঁদতে নির্দেশ দেন।
অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, স্বপ্নীল তাকে এক পায়ে দাঁড়াতে বলেন। মিরাজ ও ইমন মাহমুদ তাকে ওয়ান কোয়ার্টার প্যান্ট পরিয়ে নাচতে বলেন। প্রস্রাব করার জন্য ওয়াশরুমে যেতে চাইলে তাকে বোতলে সবার সামনে প্রস্রাব করার নির্দেশ দেওয়া হয়। ওয়াশরুমের দরজা খোলা রেখে প্রস্রাব করার নির্দেশ দেন স্বপ্নীল। সবশেষে স্বপ্নীল তাকে একটি বিস্কুট দিয়ে ‘কুকুরের মতো চেটে চেটে খেতে’ বলেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে নাফিস ফারদিন আকন্দ স্বপ্নীল বলেন, পিকনিকের বিষয়ে আলোচনার জন্য জুনিয়ররাই আমাদের সঙ্গে বসতে চেয়েছিল। শীতকাল হওয়াতে বাইরে ঠান্ডার কারণে আমার বাসায় নিয়ে বসেছিলাম। ওখানে জুনিয়ররা নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করছিল এজন্য তাদের বকাঝকা করেছি।
তিনি আরও বলেন, তবে পরবর্তীতে ওদের সঙ্গে একাধিকবার দেখা করে ভুল শিকার করে মাফ চেয়েছি। তারা সবকিছু মিটিয়েও নিয়েছিল। তবুও তিন দিন পরে কেন অভিযোগ দিল সেটা বুঝতে পারছি না। শুনেছি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন