পতিত ফ্যাসিবাদ রাজপথ থেকে পরাজিত হয়ে এখন অনলাইনে শক্তি প্রদর্শন করছে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ফেসবুকে ব্যাপক গুজব রটানো হচ্ছে, ফেক আইডি খুলে বিভিন্ন মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। আমরা যেন মিথ্যা তথ্য ও গুজবে বিশ্বাস না করি। গতকাল শনিবার দুপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার নতজানু পররাষ্ট্রনীতিতে বিশ্বাস করে না। ন্যায্যতা ও সমতার ভিত্তিতে অন্য দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করা হবে। তিনি আরও বলেন, এ সরকারের বয়স মাত্র দুই মাস। আমাদের একটু সময় দিতে হবে। দেশে আইনশৃঙ্খলা সংস্কারসহ বেশকিছু ইস্যু আছে। আহতদের চিকিৎসায় কাজ করছি, ধীরে ধীরে সব বিষয়ে কাজ শুরু করা হবে। ভারতের মিডিয়ায় বাংলাদেশ ইস্যুতে অপপ্রচার নিয়ে তিনি বলেন, ভারত চায় বাংলাদেশে উগ্রবাদ চলছে, সেটা দেখাতে। তাদের দেশে যে উগ্রবাদ আছে, তা পুষ্ট হয় ফলত সে ধরনের অপপ্রচার সবসময় ছিল।
উপদেষ্টা নাহিদ বলেন, রংপুর বরাবরই অবহেলিত ছিল। এখানে কম বাজেট দেওয়া হয় এবং তার দ্বিগুণ-তিনগুণ বাজেট দেওয়া হয় গোপালগঞ্জে। এ বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই ছিল। প্রধান উপদেষ্টা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, আমরা সে অনুযায়ী কাজ করছি। রংপুরের প্রতি যে অবহেলা-বৈষম্য, সেটি আমরা অবশ্যই দূর করব এবং রংপুরকে বাংলাদেশের উন্নত জেলা ও বিভাগ হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
নাহিদ বলেন, আবু সাঈদ যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং যে বিশ্ববিদ্যালয় গণঅভ্যুত্থানের লড়াই শুরু করেছে, সেই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক অবহেলিত থাকবে না। তাদের সর্বাত্মক অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
প্রধান অতিথির সম্মাননা প্রত্যাখ্যান নাহিদের:
ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেওয়ার আগে তার পাশাপাশি দুই শিক্ষককে সম্মাননা দেওয়া হয়। তারা হলেন বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি কমলেশ রায় এবং কলা অনুষদের ডিন শফিক আশরাফ। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ওই দুই শিক্ষক গত জুলাইয়ে ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা এবং আবু সাঈদকে হত্যার উসকানিদাতা। উপদেষ্টা নাহিদ বক্তব্য শেষ করার পর দুই শিক্ষার্থী বিষয়টি জানালে তিনি মঞ্চে উঠে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দেওয়া প্রধান অতিথির ওই সম্মাননা প্রত্যাখ্যান করেন।
এ সময় ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘যারা স্বৈরাচারের দোসরীপনা করেছে, তাদের সম্মাননা স্মারক দেওয়াটা আমরা মানতে পারি না। যাদের আজ সম্মাননা দেওয়া হলো, তাদের একজন আন্দোলনে হামলাকারীদের উসকানিদাতা, স্বৈরাচারের দোসর বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি কমলেশ রায়। অন্যজন কলা অনুষদের ডিন শফিক আশরাফ আবু সাঈদের মৃত্যুর পর বিতর্কিত কলাম লিখেছেন। তাদের সম্মাননা দেওয়া মানে আবু সাঈদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা।’
এ সময় আরেক শিক্ষার্থী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাঠামোতে এখনো স্বৈরাচারের দোসররা বসে আছে। তাদের সরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কার না করলে শিক্ষার্থীদের নিয়ে মাঠে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে নাহিদ বলেন, আপনারা যে অভিযোগটি তুলেছেন আমি তা জানতাম না। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভিসি যেন আপনাদের অভিযোগটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখেন। হয়তো কোনো একদিন ফ্যাসিবাদ মুক্ত এই বেরোবিতে আসব এবং আপনাদের সব দাবিদাওয়া পূরণের সক্ষমতা নিয়ে আপনাদের সামনে দাঁড়াব। সেদিনই হয়তো প্রকৃত সম্মাননাটি গ্রহণ করব। সবাইকে ধন্যবাদ।
বেরোবির প্রধান ফটক উদ্বোধন:
বিশ্ববিদ্যালয়টির ১৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে গতকাল সকাল সোয়া ১০টায় এর প্রধান ফটকের উদ্বোধন করেন তথ্য উপদেষ্টা। এ সময় উপাচার্য অধ্যাপক শওকত আলী, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খানসহ বিশ্ববিদ্যালয় ও স্থানীয় প্রশাসনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক নির্মাণে ২ কোটি ৯ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
এর আগে সকাল ১০টার দিকে তিনি সড়কপথে ক্যাম্পাসে আসেন। জাতীয় সংগীত গাওয়া শেষে জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন করা হয়। পরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র্যালিতে অংশ নেন।
ঢাকা থেকে বিমানে আসেন সৈয়দপুরে:
এর আগে সকাল সাড়ে ৯টায় উপদেষ্টা নাহিদ ঢাকা থেকে বিমানযোগে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে আসেন। এ সফরে তার সঙ্গে ছিলেন নাগরিক ঐক্য কমিটির সদস্য সচিব আকতার হোসেন। সেখানে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নাহিদ। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার জুলাই-আগস্ট গণহত্যার পক্ষে যেসব গণমাধ্যম ফ্যাসিস্ট সরকারের সঙ্গে কাজ করেছে, তাদের বিচার করা হবে। এরই মধ্যে কয়েকটি মামলা হয়েছে এবং কয়েকজন গ্রেপ্তারও হয়েছে। আরও যাদের সম্পৃক্ততা আছে, তদন্ত সাপেক্ষে তাদেরও বিচারের আওতায় আনা হবে।
বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে উপদেষ্টাকে শুভেচ্ছা জানান নীলফামারীর ডিসি নায়িরুজ্জামান, সৈয়দপুরের ইউএনও নুর-ই আলম সিদ্দিকী, সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমিনুল ইসলাম এবং উপজেলা জামায়াতের আমির হাফেজ মাওলানা আব্দুল মুনতাকিম। এ ছাড়া সৈয়দপুর জেলা বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও পৃথকভাবে উপদেষ্টাকে শুভেচ্ছা জানান।