ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাষ্ট্র পরিচালনা করছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এরপর গত পাঁচ মাসে নির্বাচন, সংস্কারসহ নানা ইস্যুতে বারবার উত্তাপ দেখা গেছে রাজনীতির মাঠে। নতুন করে মাঠ গরম হয়ে উঠেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ পাঠ কর্মসূচি এবং প্রধান রাজনৈতিক দলের শীর্ষনেতাদের বাগযুদ্ধ ঘিরে।
গত রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধীরা জানান, মঙ্গলবার (আজ) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ পাঠ করবেন তারা। এর মধ্য দিয়ে ১৯৭২ সালের সংবিধানকে ‘মুজিববাদী সংবিধান’ হিসেবে আখ্যায়িত করে এর ‘কবর’ রচনা করা এবং ‘নাৎসিবাদী আওয়ামী লীগকে’ বাংলাদেশে অপ্রাসঙ্গিক ঘোষণা করা হবে বলে জানান তারা। বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বৈষম্যবিরোধীদের কর্মসূচির এক দিন আগে গতকাল সোমবার রাতে জরুরি ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের একটি ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা জনগণের ঐক্য, ফ্যাসিবাদবিরোধী চেতনা ও রাষ্ট্র সংস্কারের আকাঙ্ক্ষাকে সুসংহত রাখার জন্য এ ঘোষণাপত্রটি গৃহীত হবে।
সরকারের পক্ষ থেকে এমন ঘোষণা আসার পর গতকাল রাতেই জরুরি বৈঠকে বসেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা। দফায় দফায় বৈঠক শেষে তারা ঘোষণাপত্র পাঠের কর্মসূচি থেকে সরে আসেন। সংবাদ সম্মেলন করে তারা জানান, সরকার ঘোষণাপত্রের পক্ষে যে অবস্থান নিয়েছে, তাতে সমর্থন জানিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মঙ্গলবার (আজ) শহীদ মিনারে সমবেত হওয়ার কর্মসূচি বহাল রেখেছে। তবে ঘোষণাপত্র সরকারই দেবে।
এদিকে, সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপিসহ মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো অবস্থান না জানালেও এ বিষয়ে দলগুলোর কেউ কেউ প্রশ্ন তুলে বলেছেন, জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করার আগে রাজনৈতিক দল ও অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন ছিল। তা না করে হঠাৎ কোনো ঘোষণা বিভাজন তৈরির আশঙ্কা থাকে। অবশ্য কোনো কোনো দল এরই মধ্যে ছাত্রদের ওই উদ্যোগকে নৈতিকভাবে সমর্থনও দিয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাহাত্তরের সংবিধান যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষা করেছে, সেটা বলার অবকাশ নেই। সেজন্যই নতুনভাবে সংবিধান নিয়ে কথা উঠেছে। তা ছাড়া রাজনীতিতে অনৈক্য নেই, তবে দ্বিমত আছে। সেজন্যই সমালোচনা হচ্ছে। ৫ আগস্টের পর পুনর্গঠিত ক্ষমতা কাঠামোতে সবাই সমান সুযোগ পাননি। সেজন্যই পরস্পরের বাগযুদ্ধ হচ্ছে।
জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র নিয়ে উত্তেজনা: বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ পাঠের কর্মসূচি ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গত রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়ে ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মো. শফিকুল আলম। তিনি বলেন, আমরা এটিকে প্রাইভেট ইনিশিয়েটিভ (ব্যক্তিগত উদ্যোগ) হিসেবেই দেখছি। সরকারের সঙ্গে এর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। যারা এটিকে সাপোর্ট করছেন, একটা প্রাইভেট ইনিশিয়েটিভকে সাপোর্ট করছেন। তবে বিষয়টি নিয়ে গুঞ্জন বাড়তে থাকায় আগের অবস্থান পাল্টে শেষ পর্যন্ত ঘোষণাপত্র প্রস্তুতের দায়িত্ব নিজেদের হাতে নিয়েছে সরকার।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে তাদের সহযোগিতা করছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি এবং আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জোটে থাকা দলগুলো বাদে বাকি সব দলের নেতাদের শহীদ মিনারের এই কর্মসূচিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তবে মঞ্চে রাজনৈতিক কোনো দলের নেতারা থাকবেন না; বরং জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহত ব্যক্তিরা থাকবেন। তাদের সঙ্গে থাকবেন গত ৩ আগস্ট ঘোষিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৫৮ সদস্যের সমন্বয়ক টিমের সদস্যরা। অন্তর্বর্তী সরকারের একাধিক উপদেষ্টাও অনুষ্ঠানে থাকতে পারেন।
এ বিষয়ে গত রোববার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধে ফ্রন্ট লাইনে অংশগ্রহণ করেছি। আমার সামনে বহু সহকর্মী ও বন্ধুবান্ধব মারা গেছেন। শহীদের রক্তের ওপর দিয়ে লেখা যে সংবিধান, সেই সংবিধানকে যখন কবর দেওয়ার কথা বলা হয়, তখন কিন্তু আমাদের কষ্ট লাগে। তিনি বলেন, আমি বাহাত্তর সালের সংবিধানের সমর্থক নই। আমি একাত্তর সালের সংবিধানের মুক্তিযুদ্ধের রক্তের সমর্থক। মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল বলেই এই সংবিধান। ওই সংবিধানে যদি খারাপ কিছু থাকে, নিশ্চয়ই সেটা বাতিলযোগ্য। যদি নতুন কোনো সংবিধান লিখতে হয়, তা-ও তো লিখতে হবে, ‘আগের অমুক সালের সংবিধান বাতিল করে এই সংবিধান জারি করা হলো।’ সুতরাং এই সংবিধানকে সংশোধন করা যাবে।
অবশ্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ‘ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের পর বিস্তারিত জেনে দলীয় অবস্থান পরিষ্কার করার কথা জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তবে ছাত্রদের এ উদ্যোগকে ‘স্বাগত’ জানিয়েছে জামায়াত। দলটির কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, ‘ছাত্র নেতৃত্ব তাদের বক্তব্য তুলে ধরার কথা বলেছে। যে কেউ তাদের বক্তব্য দিতে পারে। যেমন জামায়াতে ইসলামী ১০ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে, বিএনপি ৩১ দফা দিয়েছে। সেই জায়গা থেকে আমরা তাদের উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছি।’
গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক মনে করেন, যখন বৃহত্তর ঐক্যের প্রয়োজন, তখন বাহাত্তরের সংবিধান বাতিল করাসহ বিভিন্ন বক্তব্য এবং এ ধরনের উদ্যোগ অনাস্থা-বিভেদ বাড়াবে।
আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সদস্য সচিব মুজিবুর রহমান মঞ্জু বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের এই উদ্যোগকে নৈতিকভাবে সমর্থন জানিয়ে বলেন, আমরা মনে করি, জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র আরও আগেই দেওয়া উচিত ছিল এবং তা সবাই মিলে। তারা (ছাত্ররা) যেন সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করেই এটি করে। যদিও শেষ সময়ে উদ্যোগ নিয়েছে তবুও চূড়ান্ত ডকুমেন্টেশন সবাইকে নিয়ে করা উচিত।
বিএনপি-জামায়াত বাগযুদ্ধ: রোববার শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত শেষে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জামায়াতে ইসলামীর দিকে ইঙ্গিত করে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘শুধু পার্শ্ববর্তী দেশই অপপ্রচার করছে না, দেশের দু-একটি রাজনৈতিক দল ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়। শেখ হাসিনার আমলে যারা লুট করেছে, সেই এস আলমদের উত্তরসূরি হয়ে ব্যাংক দখল করেছে অনেকে। বড় বড় কথা বলে বিএনপির নামে কলঙ্ক লেপন করছে। পাড়া-মহল্লায়, জেলায় জেলায় অনেক টার্মিনাল দখল, টেন্ডারবাজিসহ নানা কিছু দখল করেছে একটি দল। সেই রাজনৈতিক দলটিকে বলতে চাই, খুব নীরবে-নিভৃতে সব অপকর্মের সঙ্গে আপনারা জড়িত। ৫ আগস্টের পর একটি রাজনৈতিক দলের আত্মসাৎ দেখেছে জনগণ। কারা ব্যাংক আত্মসাৎ করেছে, সেটা জনগণ দেখেছে। কারা পায়ের রগ কাটে, তাদের চেনে জনগণ।’ তিনি আরও বলেন, ইসলাম নিয়ে রাজনীতি করেন। ইসলাম মানে তো বারবার মোনাফেকি করা না। জনগণের প্রতি অঙ্গীকার থেকে বিএনপি কখনো পিছিয়ে আসেনি। ১৯৭১ থেকে গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত গণতন্ত্রের প্রশ্নে বিএনপি কখনো মাথানত করেনি।’
এরপর সেদিন রাতেই বিএনপি নেতা রিজভীর ওই বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান। তিনি বিবৃতিতে বলেন, জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে রুহুল কবির রিজভীর বক্তব্য বিভ্রান্তিকর, ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। শুধু তাই নয়, রিজভীর এ জাতীয় বক্তব্য কয়েক দশক ধরে প্রচার করা হচ্ছে। রগ কাটা, ঘোলা পানিতে মাছ শিকার, ৭১-এর বিরোধিতা—এসব বক্তব্য জনগণ বহু আগেই প্রত্যাখ্যান করেছে।
রফিকুল ইসলাম খান বলেন, রিজভী জামায়াতের বিরুদ্ধে এসব কথা উচ্চারণ করে কী অর্জন করতে চান, তা জনগণের কাছে স্পষ্ট নয়। জামায়াত রগ কাটা ও ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের রাজনীতি কখনো করেনি। জামায়াত এবং ইসলাম ধর্ম নিয়ে রিজভীর বক্তব্য চরম মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছু নয়। ‘ইসলাম’ নয়, ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে রাজনীতি করে জামায়াত। জামায়াতে ইসলামী কখনো মোনাফেকি করেনি। জামায়াত দেশের মানুষের অধিকার, আইনের শাসন, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আপসহীনভাবে লড়াই করেছে। জামায়াত কখনো মোনাফেকির আশ্রয় নেয়নি। রিজভী অবশ্যই অবগত আছেন, ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত জোটকে এড়িয়ে ভিন্নমতের লোকদের সঙ্গে জোট করে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যে ঐক্য করা হয়েছিল, তা কি জাতির সঙ্গে মোনাফেকি নয়? জনগণ এই রাজনৈতিক ছন্দপতনের ইতিহাস ভুলে যায়নি।
নির্বাচন ও ভোটারের বয়স ইস্যু: গত শুক্রবার সকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে (কেআইবি) ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ আয়োজিত ‘ঐক্য কোন পথে’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভার্চুয়ালি বলেছেন, ‘তরুণরা সংখ্যায়ও বেশি। দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা আগ্রহী। নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে তার মতামত নেওয়ার জন্য আমি মনে করি ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর নির্ধারিত হওয়া উচিত। নির্বাচন সংস্কার কমিশন কী সুপারিশ করবে, তা আমার জানা নেই। কিন্তু দেশের বেশিরভাগ মানুষ যদি কমিশনের সুপারিশ করা বয়স পছন্দ করে, ঐকমত্যে পৌঁছার জন্য আমি তা মেনে নেব।’
পরদিন শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এখন তাহলে আবার নতুন করে ভোটার তালিকা করতে হবে। আপনি প্রধান উপদেষ্টা, প্রথমেই বলে দিচ্ছেন, ভোটারের বয়স ১৭ হলে ভালো হয়। আপনি যখন বলছেন, তখন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ওপর চাপ সৃষ্টি হয়। এটা ইসির কাজ, তাদের ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত। ভোটারের বয়স ১৮ বছর তো আছে, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য। যদি কমাতে চান, সেটা ইসি প্রস্তাব করুক।’
এ ছাড়া গত ২৩ ডিসেম্বর বিএনপি মহাসচিব সরকারের সমালোচনা করে নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘ভোট ও ভাতের অধিকারের জন্য ৫ আগস্টের মতো রাস্তায় নামতে হবে।’ মূলত নির্বাচন নিয়ে সুনির্দিষ্ট সময় ঘোষণার প্রতি সরকারের ‘অনাগ্রহ’ এবং পাশাপাশি সরকারের মধ্য থেকে সময়সীমা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য আসায় দলের মধ্যে ‘নির্বাচন বিলম্বিত করা হতে পারে’ বলে এক ধরনের সংশয় তৈরি হয়েছে বলে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন।
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, মানুষ কখন ভোট দিয়ে তাদের নির্বাচিত সরকার ও সংসদ গঠন করতে পারবে, সেটি সরকার স্পষ্ট করেনি বলেই জনমনে এক ধরনের সংশয় তৈরি হয়েছে।
বিশ্লেষক মত: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান কালবেলাকে বলেন, বাহাত্তরের সংবিধান যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষা করেছে, তা নির্দ্বিধায় বলা যায় না এবং সর্বজনস্বীকৃত নয়। ওই সংবিধানের মৌলিক জায়গাগুলোতেও ভিন্নতা আছে। সেজন্যই ওই সংবিধান নিয়ে কথা হচ্ছে। পাকিস্তান ভাঙার পর বাহাত্তরের সংবিধান বাংলাদেশে যারা পাস করেছেন তাদের তো সেই অধিকার দেওয়া হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের স্পিরিট রক্ষা করার জন্য বাহাত্তরের সংবিধান সংস্কার বা পুনর্লিখন হতে পারে।
দীর্ঘদিনের আন্দোলনের মিত্র বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের মধ্যে বাগযুদ্ধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী ইসলাম নিয়ে রাজনীতি করে না, এটা বলা ঠিক নয়। কারণ তারা তো ইসলামী আদর্শ মেনেই রাজনীতি করে। ইসলামকে ভোটের রাজনীতিতে আনা ঠিক নয়। তিনি বলেন, উভয় দলই পরস্পরের বিরুদ্ধে বলছে। কারণ হলো ৫ আগস্টের পর পুনর্গঠিত ক্ষমতা কাঠামোতে বিএনপির লোকজন হয়তো কম স্থান পেয়েছেন। সে কারণে তাদের অসন্তোষ তৈরি হতে পারে। পুনর্গঠিত ক্ষমতা কাঠামোয় সবার সমান সুযোগ নেই। সেজন্যই পরস্পরের বাগযুদ্ধ হচ্ছে। এই সরকারের উচিত ৫ আগস্ট ঘিরে সব রাজনৈতিক দলসহ স্টেকহোল্ডারদের ক্ষমতা কাঠামোতে স্থান দেওয়া। তা না হলে ঐক্য হবে না। আমাদের অবস্থান থেকে এমন কিছু বলা ঠিক নয়, যাতে ঐক্য বিনষ্ট হয়।
ভোটারের বয়স প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে কাজী মাহবুবুর রহমান বলেন, সাধারণত এ বিষয়টি ডিমান্ড সাইড থেকে আসা উচিত। ভোটারের বয়স কত হবে সেটা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই নির্ধারিত হতে পারে। কিন্তু তাদের সঙ্গে কথা না বলার মানে রাজনৈতিক দলগুলোকে ক্ষমতার বাইরে রাখা। এটা করা সরকারের ঠিক নয়।